ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উইকেট শিকারে ভারতীয় কিংবদন্তি কপিলকে পেছনে ফেলেছেন, প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০০ ওয়ানডে খেলতে নেমে এশিয়ার ডানহাতি পেসারদের তালিকায় ৬ নম্বরে উঠে এলেন

মাশরাফির রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

মাশরাফির রেকর্ড

মোঃ মামুন রশীদ ॥ নিশ্চিতই ছিল রবিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ২০০তম ওয়ানডে খেলার মাইলফলক স্পর্শ করবেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে অপেক্ষা ছিল টস হওয়ার। তা হওয়া মাত্রই প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৩৫ বছর বয়সী মাশরাফি অনন্য এক অর্জনের মালিক হয়ে গেছেন। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়ানডে ইতিহাসের ৪০৭১তম ম্যাচ যখন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল ততদিনে ২৪৭২ জন ক্রিকেটার খেলেছেন। তবে মাত্র ৭৮তম ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ বা তার বেশি ওয়ানডে খেলার কীর্তি গড়লেন মাশরাফি। যদিও বাংলাদেশের জার্সিতে ১৯৮তম ম্যাচ। ২০০৭ সালের জুনে ওয়ানডে স্বীকৃতি পাওয়া দু’টি ম্যাচ খেলেছিলেন এশিয়া একাদশের হয়ে আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে। আর সেই ম্যাচেই ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ তকমা পাওয়া মাশরাফি জ্বলে উঠলেন দারুণভাবে। মাত্র ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেয়ার পথে ভারতীয় কিংবদন্তি অলরাউন্ডার কপিল দেবকে পেছনে ফেলেছেন। মাশরাফির মোট উইকেট ২৫৫, আর কপিলের ২৫৩। সার্বিকভাবে অবস্থানটা ২৪ নম্বরে হলেও এশিয়ার ডানহাতি পেসারদের তালিকায় এখন ৬ নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। ক্রিকেট ক্যারিয়ার গত মাসেই ১৭ পেরিয়ে গেছে। তবে এর মধ্যে দুই পায়ে মোট ৭ বার অস্ত্রোপচারসহ বিভিন্ন ইনজুরির ধকলে মাশরাফির ক্যারিয়ার থেকে প্রায় পাঁচটি বছরই হারিয়ে গেছে। তবে যখনই খেলার মতো সুস্থ ও ফিট থেকেছেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে দলে জায়গা করে নিয়েছেন অপরিহার্য এ ক্রিকেটার। এ কারণেই সবার আগে ২০০ ওয়ানডে খেলার দারুণ মাইলফলকটি ছুঁয়ে ফেললেন রবিবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে। বাংলাদেশের পক্ষে ১৯৮তম ম্যাচ হলেও এ সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ খেললে দেশের হয়েও ২০০ ওয়ানডে খেলার প্রথম নজির সৃষ্টি করবেন। তার কাছাকাছি আছেন মুশফিকুর রহীম ১৯৬ ও সাকিব আল হাসান ১৯২ ওয়ানডে খেলে। ক্যারিয়ারের এই মাইলফলক ম্যাচে মাশরাফি বোলিংয়ে আসেন ৪ নম্বরে। প্রথম বলেই চারের মার হজম করলেও নিজের নবম ওভার পর্যন্ত আর কোন বাউন্ডারি তাকে হাঁকাতে পারেনি কোন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ঠিক আগের সিরিজেই বেশ এলোমেলো ছিলেন মাশরাফি, তিন ম্যাচে প্রচুর রান দিয়েছেন নিয়ন্ত্রণহীন বোলিংয়ে। তবে এ সিরিজে নামার আগেই জানিয়েছিলেন ইনজুরি সমস্যার কারণে পূর্ণ ছন্দে সিরিজ খেলতে না পারার কারণে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ভাল বোলিং করতে পারেননি। এবার তিনি প্রস্তুত হয়েছেন দারুণভাবে। সেটা বোঝা গেছে প্রথম ৬ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ড্যারেন ব্রাভো ও শাই হোপের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট দুটি তুলে নেয়াতে। দারুণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আঁটসাঁট বোলিংয়ের আরেকটি পুরস্কার পেয়েছেন নিজের অষ্টম ওভারে ক্যারিবীয় অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে। তবে নিজের শেষ ওভারটা আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি মাশরাফি। একেবারে শেষ বলে ছক্কা হজম করে ১১ রান দিয়ে নিজের বোলিং স্পেল শেষ করেন ১০-০-৩০-৩ বিশ্লেষণ নিয়ে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এদিন নিজের প্রথম বলে চার এবং শেষ বলে ছক্কা হজম করলেও আর কোন বাউন্ডারি দেননি মাশরাফি। মাঝে ১৫ ওয়ানডে বিরতি দিয়ে গত ২২ জুলাই প্রভিডেন্সে ৪ উইকেট শিকার করেছিলেন। ৩ উইকেটও নিতে পারেননি। এরপর ১১ ওয়ানডেতে ৩ বার তার বেশি উইকেট নিতে না পারা মাশরাফি সেই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষেই আবার ৩ উইকেটের দেখা পেলেন। সবমিলিয়ে ২০০ ওয়ানডেতে বোলিং করে মাশরাফির মোট উইকেট এখন ৩১.৪০ গড় ও ৪.৮০ ইকোনমিতে ২৫৫। ইনিংসে ৫ বার তার বেশি উইকেট পেয়েছিলেন একবারই। নাইরোবিতে ২০০৬ সালের ১৫ আগস্ট কেনিয়ার বিপক্ষে নিয়েছিলেন ২৬ রানে ৬ উইকেট। ৪ উইকেট পেয়েছেন ৭ বার। আর ৩ উইকেট নিলেন ২২তম বার। এর মাধ্যমে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ভারতীয় কিংবদন্তি কপিলকে। ২২৫ ম্যাচে কপিলের উইকেট ২৫৩। শুধু বাংলাদেশের জার্সিতেও ১৯৮ ম্যাচে ২৫৪ উইকেট নিয়ে মাশরাফি কপিলকে পেছনে ফেলেছেন এদিন। বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফির পরেই আছেন সাকিব ২৪৫ উইকেট নিয়ে। দেশের মাটিতে মাশরাফি ৯৮ ম্যাচে নিয়েছেন ১৪০ উইকেট, সে তালিকায় অবশ্য সাকিব এগিয়ে ৯৭ ম্যাচে ১৪৭ উইকেট নিয়ে। নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সর্বাধিক উইকেট নেয়ার তালিকায় বিশ্বে এখনও মাশরাফি চার নম্বরে। মিরপুরে তিনি ৬৩ ম্যাচে ৯৩ উইকেট নিয়েছেন। তার ওপরে সাকিব একই ভেন্যুতে ৭৯ ম্যাচে ১১৩ উইকেট নিয়ে ৩ নম্বরে। শীর্ষ দুইয়ে আছেন পাকিস্তানের বাঁহাতি কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৭৭ ম্যাচে ১২২ উইকেট ও তারই স্বদেশী ওয়াকার একই ভেন্যুতে ৬১ ম্যাচে ১১৪ উইকেট নিয়ে। অনেক আগেই মাশরাফি বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ওয়ানডে উইকেটের মালিক হয়েছেন। এখন তার ওয়ানডে ইতিহাসে বোলারদের মধ্যে অবস্থান ২৪ নম্বরে। শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরলিধরন সর্বাধিক ৫৩৪ এবং পাকিস্তানের পেসার ওয়াসিম আকরাম ৫০২ এবং ওয়াকার ইউনুস ৪১৬ ও শ্রীলঙ্কার চামিন্দা ভাস ৪০০ উইকেট নিয়ে সেরা চারে আছেন। ৯ জন পেয়েছেন ৩ শতাধিক উইকেট। আড়াই শ’ পেরোনো বোলারের সংখ্যা ১২। তবে হিসেবটা পেসারদের হলে মাশরাফির অবস্থান বিশ্বে এখন ১৬ নম্বরে। ডানহাতি পেসারের তালিকায় ১৩তম। এমন অবস্থানে আসার ক্ষেত্রে মাশরাফির পেছনে পড়ে গেছেন গতিতারকা শোয়েব আখতার (২৪৭), কাইল মিলস (২৪০), মিচেল জনসন ও হিথ স্ট্রিক (২৩৯ করে), ড্যারেন গফ (২৩৫), কোর্টনি ওয়ালশ (২২৭), কার্টলি এ্যামব্রোস (২২৫) ক্রেইগ ম্যাকডারমট (২০৩) ও ক্রিস কেয়ার্নসের (২০১) মতো পেসাররা। ইমরান খান, আকিব জাভেদ, ভেঙ্কটেশ প্রসাদ, ডেল স্টেইন, স্টুয়ার্ট ব্রডরাতো ২০০-ই ছুঁতে পারেননি। এশিয়ার মধ্যে হিসেবটা আসলে মাশরাফির অবস্থান আরও ভাল। এশিয়ান বোলারদের তালিকায় সার্বিকভাবে তিনি ১৩তম, পেসারদের মধ্যে নবম। তবে এশিয়ার ডানহাতি পেসারদের তালিকায় তিনি ৬ নম্বরে। ওয়াকার (৪১৬), জাভাগাল শ্রীনাথ (৩১৫), লাসিথ মালিঙ্গা (৩১১), অজিত আগারকার (২৮৮) ও পাকিস্তানী আব্দুল রাজ্জাকের (২৬৯) পরেই মাশরাফি। এ তালিকায় আরও ওপরে যাওয়ার ক্ষেত্রে খুব কাছাকাছি রাজ্জাক আর ওয়ানডে ইতিহাসে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার মাখায়া এনটিনিকে (২৬৬) ও ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিংকে (২৬৯) পেরোতে পারলে দারুণ এক অবস্থানে থেকেই শেষ করতে পারবেন মাশরাফি। বর্তমান ফর্ম অনুসারে তা ‘নড়াইল এক্সপ্রেসের’ জন্য খুব বেশি কঠিন হবে না।
×