ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ আটে শেখ রাসেল, শেখ জামালের বিদায়

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

শেষ আটে শেখ রাসেল, শেখ জামালের বিদায়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র হচ্ছে সেই দল, যারা কোন ম্যাচে না জিতে এবং একটি গোল না করেও নাম লিখিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে। শনিবার ‘ডি’ গ্রুপের খেলায় শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের মুখোমুখি হয় তারা। খেলাটি গোলশূন্য ড্র হয়। যদিও উভয় দলই আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণ করে খেলে। কিন্তু কোন দলই তাদের ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় গোল করতে পারেনি। এই ড্রয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখায় এই আসরের ২০১২ সালের শিরোপাধারী রাসেল। আগামী ১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে তারা। প্রতিপক্ষ ‘বি’ গ্রুপের সেরা দল। ২ খেলায় রাসেলের সংগ্রহ ২ পয়েন্ট। নিজেদের প্রথম ম্যাচেও তারা গোলশূন্য ড্র করেছিল বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে। পক্ষান্তরে সমান খেলায় মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে জামাল বিদায় নিল এই আসর থেকে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা ০-২ গোলে হেরেছিল ৪ পয়েন্ট নিয়ে আগেই কোয়ার্টার নিশ্চিত করা ফেবারিট দল বসুন্ধরার কাছে। শনিবার এই খেলার আগে ‘বেঙ্গল ব্লুজ’ খ্যাত রাসেলই ছিল সুবিধাজনক অবস্থানে। এই ম্যাচে ড্র করলেই তারা কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখাতে সক্ষম হতো। শুধু তাই নয়, জামালের কাছে ১-০ গোলে হারলেও চলে যেত শেষ আটে। সেক্ষেত্রে ‘বেঙ্গল ইয়োলোস’ খ্যাত শেখ জামালের ছিল ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। খেলার শুরুতে উভয় দলের ফর্মেশন ছিল রাসেলের ৬-১-৩ এবং জামালের ৪-২-৪। রাসেলের কোচ সাইফুল বারী টিটু যে চিরকালই একজন রক্ষণাত্মক কোচ, এই ফর্মেশনই তার প্রমাণ। অবশ্য তিনি দাবি করতেই পারেন, এ খেলায় যেহেতু তার দলই সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল, কাজেই প্রথম থেকেই দলকে তিনি ডিফেন্সিভ স্টাইলে খেলাতেই পারেন। খেলা দেখতে আসা কিছু ফুটবলপ্রেমী আশঙ্কা করে এই মন্তব্য করেন, ‘ডিফেন্সিভ খেলে না আবার ডোবে শেখ রাসেল।’ তবে তাদের সেই আশঙ্কা সত্যি হয়নি। রাসেল ডোবেনি। মানে হারেনি। তবে জেতেওনি। ডিফেন্সিভ ফর্মেশন নিয়ে খেলা শুরু করলেও বিস্ময়করভাবে খেলার প্রথম বিশ মিনিটে বরং রাসেলই বেশি আক্রমণ করে খেলে। ১৯ মিনিটে জামালের আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লুসিয়ানো পেরেজের বাড়িয়ে দেয়া বলে মিডফিল্ডার দিদারুল আলম পা ছোঁয়াতে পারেননি। ২৭ মিনিটে বক্সের ভেতরে বল পেয়ে লুসিয়ানো পেরেজ লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। ৪২ মিনিটে জামালের গাম্বিয়ার ফরোয়ার্ড-অধিনায়ক সলোমন কিংয়ের শট রাসেলের বারে লেগে ফিরে আসে। ৭৮ মিনিটে সলোমন কিং লম্বা থ্রু পাস বাড়ান। সেটা ধরে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো শট নেন লুসিয়ানো। সেটা ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন রাসেলের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। খেলার অন্তিম মুহূর্তে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে রাসেল। কাউন্টার এ্যাটাক করে তারা। জামালের ডিফেন্ডার মনজুর রহমান মানিকের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার এ্যালেক্স রাফায়েল জামালের গোলমুখের উদ্দেশে স্প্রিন্টারের মতো দৌড় দেন তিনি। জামাল গোলরক্ষক মোহাম্মদ নাঈম অনেকটা এগিয়ে ছিলেন। বিপদ বুঝে তিনি প্রাণপণে পেছনে যেতে দৌড় দেন। গোলপোস্টের কাছে পৌঁছে গিয়ে পজিশন নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। ইতোমধ্যেই এ্যালেক্সকে বাধা দিতে সামনে এগিয়ে আসেন জামালের ডিফেন্ডার শওকত রাসেল। রাসেলকে গতিতে হারিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন এ্যালেক্স। ততক্ষণে নাঈম এগিয়ে এসেছেন। এ্যালেক্স ডান পায়ের যে শটটি নেন, তা নাঈমের গায়ে লেগে চলে যায় রাসেলের ফরোয়ার্ড উজবেক ফরোয়ার্ড আযিযব আলিশেরের পায়ে। আলিশের বাঁ বায়ে শট নিলেও সেটা বেঁকে যাওয়ায় পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে চলে গেলে বেঁচে যায় জামাল, তবে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। আবাহনীকে রুখে দিয়ে শেষ আটে ব্রাদার্স শেষ আটে যেতে হলে কমপক্ষে ড্র করলেই চলবে। সেই সমীকরণ মাথায় নিয়েই খেলতে নেমে সফল হয়েছে গোপীবাগের দলটি। স্বাধীনতা কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লিখিয়েছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড। শনিবার ‘সি’ গ্রুপের এই ম্যাচে তারা গোলশূন্য ড্র করে ঢাকা আবাহনীর লিমিটেডের সঙ্গে। ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ আবাহনী আগেই কোয়ার্টারে চলে গিয়েছিল। এদিন তারা মাঠে নেমেছিল গ্রুপসেরা হওয়ার লড়াইয়ে। সে লক্ষ্যে তারাও সফল। ২ খেলায় ১ জয় ও ১ ড্রতে ৪ পয়েন্ট তাদের। সমান খেলায় ২ ড্রতে ২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হলো ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’ ব্রাদার্স। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা ১-১ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে। ‘দ্য রেডস’ মুক্তিযোদ্ধার সংগ্রহ মাত্র ১ পয়েন্ট। ফলে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিল তারা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা ২-১ গোলে হেরেছিল আবাহনীর কাছে। শনিবারের ম্যাচে ব্রাদার্স যদি দুই গোলের ব্যবধানে হারতো, তাহলে অবশ্য ব্রাদার্সকে পেছনে ফেলে শেষ আটে যাবার সৌভাগ্য হতো মুক্তিরই। কিন্তু আবাহনীর সঙ্গে ড্র করে তাদের সেই আশায় জল ঢেলে দেয় ব্রাদার্স। আগামী ১১ ডিসেম্বর প্রথম কোয়ার্টারে আরামবাগের মোকাবেলা করবে ব্রাদার্স। আর ১৩ ডিসেম্বর তৃতীয় কোয়ার্টারে সাইফের মুখোমুখি হবে আবাহনী। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন সানডে চিজোবা। পরে সুস্থ হয়ে উঠলেও কোচ তাকে স্বাধীনতা কাপের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে খেলেননি। শনিবারই প্রথম মাঠে নামেন এই নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড। ম্যাচের ১২ মিনিটে ব্রাদার্সের পানামা ফরোয়ার্ড জ্যাক দানিয়েল পাস দেন সতীর্থ মিডফিল্ডার মান্নাফ রাব্বিকে। রাব্বি বক্সের ভেতরে ঢুকে উঁচু শট মারেন। কিন্তু বল চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে বাইরে। ১৫ মিনিটে আবাহনীর এক খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে ব্রাদার্সের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার এভারটন সান্তোস বাঁপ্রান্ত দিয়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে বাঁ পায়ের উঁচু ক্রস করেন। সেটা হেড করে জালে পাঠিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন তার সতীর্থ-স্বদেশী ফরোয়ার্ড ভিয়েরা লিমা। কিন্তু রেফারি সুজিত ব্যানার্জি চন্দন গোলটি বাতিল করে দেন অফসাইডের কারণে। ৫৬ মিনিটে বাঁপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে আবাহনীর বক্সে ঢুকে পড়ে গড়ানো ক্রস নেন ব্রাদার্সের ফরোয়ার্ড সোহেল রানা। সেই বল ধরে ডান পায়ের গড়ানো শট নেন লিমা। গোলরক্ষক সুলতান আহমেদ শাকিল বল ধরতে ঝাঁপিয়েও পড়েন। কিন্তু বল চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। ৬৬ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে আবাহনীর মিডফিল্ডার প্রাণতোষ কুমার দাসের কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁপ্রান্ত দিয়ে ঢুকে হাইতিয়ান রাইট উইঙ্গার ফিলস বেলফোর্ট ডানপ্রান্তে আগুয়ান সতীর্থ ফরোয়ার্ড রুবেল মিয়ার উদ্দেশে উঁচু লম্বা পাস বাড়ান। সেই বল ধরে রুবেল বক্সে ঢুকে ডান পায়ের যে কৌণিক জোরালো শটটি নেন, সেটা পোস্টের বাইরের জালে গিয়ে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল নাহলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে উভয় দল।
×