ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরির সাক্ষাতকারের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

চাকরির সাক্ষাতকারের প্রস্তুতি

পড়াশোনা শেষ করার পর বেশিরভাগ তরুণেরই লক্ষ্য থাকে একটি ভাল চাকরি। ভাল চাকরি পেতে হলে আপনাকে মোকাবেলা করতে হবে সাক্ষাতকার পর্ব। এখানে যারা ভাল করবেন তাদের ভাগ্যেই কেবল জুটবে কাক্সিক্ষত চাকরি। আর যারা ব্যর্থ হয়, তারা পরেরবার নিজেদের ভুল শুধরে আবার চেষ্টা করে, অথবা তারা হয়ত নিজেদের যোগ্যতাকে অন্যখাতে ব্যয় করে সফলতা অর্জনের চেষ্টা করে। কিছু কাজ আছে, যেগুলো করলে আমাদের এই সাক্ষাতকারে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সাক্ষাতকারের কয়েকদিন আগে থেকেই এর প্রস্তুতি নেয়া শুরু করা উচিত। সাক্ষাতকারের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি- প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালমতো জানা আপনি যে প্রতিষ্ঠানেই সাক্ষাতকার দিতে যান না কেন, আপনাকে অবশ্যই তাদের ব্যাপারে মোটামুটি ভাল জ্ঞান রাখতে হবে। তারা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা বাজারে তাদের বর্তমান অবস্থা কী, তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান কে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোন প্রতিষ্ঠান আছে কি না অথবা তারা কী রকম প্রার্থী খোঁজ করছে চাকরি দেয়ার জন্য- এসব। আপনার এই জ্ঞান যদি সাক্ষাতকারের সময় কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে সেটা আপনার জন্যই ভাল হবে। আবেদন করা পদের ব্যাপারে ভালমতো জানুন এই কাজটি আপনার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে পোস্টের জন্য আবেদন করেছেন, সেই পোস্টে থেকে আসলে কী কাজ করতে হয় বা চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান কী রকম কাজ আশা করে আপনার কাছ থেকে, তা ভালমতো জেনে নিন। প্রয়োজনে অন্য প্রতিষ্ঠানে একই পোস্টে চাকরি করছেন, এমন কারও সঙ্গে কথা বলুন। এটা আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবে। সাক্ষাতকার গ্রহণকারীদের ব্যাপারে খোঁজ করুন আপনি যাদের সামনে বসে সাক্ষাতকার দেবেন, তাদের ব্যাপারে কতটুকু জানেন? প্রতিষ্ঠানে তাদের পোস্ট বা ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে কী জানেন? কাজটি একটু কঠিন হলেও যদি তাদের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়, তাহলে তাদের ব্যাপারে ফেসবুক/ টুইটার/ লিঙ্কড ইন এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় খোঁজ করতে পারেন। তারা কেমন মানসিকতার মানুষ, এটা আগে থেকে জানা থাকলে হয়ত তাদের সামনে কথা বলার সময় আপনার কোন বিব্রতকর পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে না। প্রশ্ন তৈরি করে তা অনুশীলন করুন সাক্ষাতকারের আগে এটিই আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাক্ষাতকারের সময় সাধারণ যেসব প্রশ্ন করা হয়- আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন, আপনার দক্ষতার ব্যাপারে বলুন, আপনি এখানে কেন চাকরির আবেদন করেছেন ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন। প্রয়োজনে ইউটিউবে অনেক টিউটোরিয়াল পাবেন। সেগুলোও অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়াও সাক্ষাতকার গ্রহণকারীদের কাছে আপনার যদি কোন প্রশ্ন করার থাকে, যেমন- আপনার চাকরিতে কবে থেকে যোগদান করতে হবে বা এই পোস্টে কাজ করে আপনি প্রতিষ্ঠান থেকে কী কী সুবিধা পাবেন, এ রকম কোন প্রশ্ন থাকলে তা আগে থেকেই তৈরি করে রাখুন। অনেক প্রতিষ্ঠানেই সাক্ষাতকারের শেষে চাকরিপ্রার্থীকে একটি প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়। তাই এটিও মাথায় রাখুন। যাতায়াত ব্যবস্থার দিকে খেয়াল রাখুন ঢাকা শহরের যানজটের ব্যাপারে তো আমরা সবাই জানি। যানজটের শিকার হয়ে কোথাও সময়মতো পৌঁছতে দেরি হয়নি এমন কেউ সম্ভবত এই শহরে নেই। কিন্তু আপনি তো আর সাক্ষাতকারের সময় গিয়ে বলতে পারবেন না যে, ‘স্যার, রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। তাই আসতে দেরি হয়েছে।’ এমনটা হলে আপনার চাকরি সেখানেই শেষ। তাই আগে থেকেই আপনার গন্তব্যে কীভাবে যেতে হয়, যেতে কী রকম সময় লাগে, তা চিহ্নিত করে রাখুন। প্রয়োজনে নিজে একবার গিয়ে দেখে আসুন, কী রকম সময় লাগে। এতে আপনার সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে সুবিধা হবে। পোশাক-পরিচ্ছদের দিকে খেয়াল রাখুন আপনার সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতকার আসছে। কিন্তু কী পরে যাবেন এই সাক্ষাতকারে, সেটা আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। কারণ আপনার ড্রেস-আপের ওপর সাক্ষাতকার গ্রহণকারীদের মন-মানসিকতার অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। পুরুষদের জন্য সাধারণত ফরমাল ড্রেস বেশি গ্রহণযোগ্য। এজন্য এক রঙের শার্ট ও সঙ্গে কমপ্লিট স্যুট এবং সেইসঙ্গে একই রঙের ম্যাচিং করা স্যু ও বেল্ট বাছাই করবেন। আপনার জুতার রং কালো, কিন্তু বেল্ট পরলেন খয়েরি রঙের, সেক্ষেত্রে কিন্তু সাক্ষাতকার গ্রহণকারী আপনার ফ্যাশন সেন্সের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতেই পারেন! কিন্তু তাই বলে বন্ধুর বা বাবার ফরমাল ড্রেস ধার করে পরতে যাবেন না আবার! আপনার শরীরের মাপে আরেকজনের শরীরের মাপের ড্রেস ফিট না হওয়ারই কথা। তাই নিজের জন্য আলাদা ফরমাল ড্রেস তৈরি করে রাখুন। আর মহিলাদের জন্য যথাসম্ভব কম জুয়েলারি এবং হালকা মেকআপ নেয়ার ব্যাপারেই বলা হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন আপনার সাক্ষাতকারে যেসব কাগজপত্র দেখাতে হবে, তা আগের রাতের মধ্যেই ঠিক করে গুছিয়ে রাখুন। কোন সার্টিফিকেট সত্যায়িত করা লাগলে, তা আগে থেকেই করে রাখুন। সময়মতো এগুলো হাতের কাছে না পেলে, আপনি নিজেই সমস্যায় পড়তে পারেন। দরকার একটি সুন্দর ঘুম অনেকেরই উত্তেজনার কারণে সাক্ষাতকারের আগের রাতে তেমন ঘুম আসতে চায় না। কিন্তু ঘুম ঠিকমতো না হলে সকালবেলায় এর প্রভাব পড়তে পারে। আপনি হয়ত ঘুম থেকে উঠতে দেরি করে ফেললেন। এ কারণে হয়ত সময়মতো গাড়ি পেলেন না কিংবা রাস্তায় জ্যামের কারণে ঠিকমতো পৌঁছতে পারলেন না। এ রকম অনেক সমস্যায় আপনি পড়তে পারেন। তাই আগের রাতে অবশ্যই ঠিকমতো ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। সাক্ষাতকারের আগে একটি সুন্দর ঘুম বেশ জরুরী। সকালের বা দুপুরের খাবার ঠিক রাখুন অনেকেই সাক্ষাতকারের আগে কোন কিছু না খেয়েই চলে যান। এই কাজ ভুলেও করবেন না। কারণ আপনি যদি খালি পেটে থাকেন, তাহলে আপনি সাক্ষাতকারে ঠিকমতো মনোসংযোগ করতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত আপনার পরীক্ষাই খারাপ হতে পারে। তাই, সাক্ষাতকার সকাল বা দুপুরে যখনই হোক অবশ্যই ভরা পেট নিয়েই সাক্ষাতকার দিতে যাবেন। যথাসম্ভব ক্ষতিকর পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকুন আপনি কখনই চাইবেন না যে, আপনার নামে একটি খারাপ তথ্য যোগ হয়ে যাক। আর সেটা যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতকারের আগে হয়, তাহলে তো অবশ্যই না! তাই নিজেকে সব ধরনের পরিস্থিতিতে সামলে রাখুন। নিজের কারণে যাতে অন্যেরও কোন সমস্যা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সর্বশেষ, নিজের উপর আর নিজের প্রস্তুতির উপর ভরসা রাখুন। নির্ধারিত সময়ের ১৫-২০ মিনিট আগে গন্তব্যে পৌঁছে যান। সাক্ষাতকারে সবার সামনে নিজের একটি ভাল ব্যক্তিত্ব তুলে ধরুন। যথাসম্ভব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিন। এটি আপনার সফলতার হার অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে। সূত্র : অনলাইন
×