ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে প্রয়োজনে আদালতে যাব

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২ ডিসেম্বর ২০১৮

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে প্রয়োজনে আদালতে যাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলীয় আনুগত্য ও ভয়ভীতির উর্ধে উঠে নির্বাচন কমিশনকে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর জনগণকে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। কোন ধরনের হুমকি এলে জনগণকে সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করতে হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন নির্বাচন কমিশনে পরিবর্তন, গায়েবি মামলা, গ্রেফতার বন্ধ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে আদালতে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের শরিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনের দিন সকালে জনগণকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, দেশের মানুষ অবাধ নির্বাচন চায়। এটা সরকারের অনুকম্পার বিষয় নয়, সংবিধান এটা নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে যেসব আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে, তা তুলে ধরতে হবে গণমাধ্যমকে। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। প্রতিদিন পাইকারি হারে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেই গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, জনগণ হলো ক্ষমতার মালিক, ১৬ কোটি মানুষের কাছে এ তথ্য তুলে ধরুন। তাহলে জনগণ যে রাষ্ট্রের মালিক, তা অনুধাবন করতে পারবে। জনগণ সক্রিয়ভাবে দেশ পরিচালনা করবে। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা। যোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় দেখেছি, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে সব কিছুই সম্ভব। নির্বাচনের সময় ফটো বা ভিডিও করা যাবে না বলে নির্বাচন কমিশন আইন করেছে, সেটা বাতিল করা না হলে আদালতে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধানে যে সাম্যের রাজনীতির কথা বলা হয়েছে, ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। সংবিধানেই লেখা আছে সেই রাজনীতির কথা। এখানে নতুন ধারার কোন রাজনীতি চালুর দরকার নেই। সংবিধান মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করলেই প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করা যাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা জোরালোভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তিনি তা বাতিল করে দিলেন। আদালতের রায়েও বলা আছে, আরও দু’বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে। জনগণের আস্থা পেয়ে সরকারে গেলে সংবিধান অনুযায়ী সবকিছু পরিচালিত করা হবে বলেও জানান প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করার জন্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু প্রতিদিন প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা যেন বাস্তবায়ন করা হয়। তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচীতে যেতে বাধ্য হব। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া প্রমুখ। কামাল হোসেন বলেন, ইসির প্রতি আমার আহ্বান নিরপেক্ষভাবে, স্বাধীনভাবে এবং ভয়ভীতির উর্ধে উঠে দায়িত্ব পালন করবেন। পোলিং, প্রিজাইডিং, রিটার্নিং অফিসারসহ সকল কর্মকর্তাকে দলীয় আনুগত্যের উর্ধে উঠে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। এজেন্টরা যাতে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করুন। ড. কামাল বলেন, আমি বিশ্বাস করি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অপরিহার্য অংশ। জনগণ যদি তাদের ভোটাধিকার দিতে না পারেন। তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। আশা করি, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল, সকল প্রার্থী এবং ইসি সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালনের ফলে আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে করব। ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন করা হয়েছিল তা আমাদের সকলের মনে আছে। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেয় না। ১৯৯৬ সালে আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিএনপির নির্বাচন বাতিল করে, আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করা হলো। এই সরকার চালুর পর প্রথম এর সুফল পেল আওয়ামী লীগ। তারা ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে এলো। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সবচেয়ে জোরালো বক্তব্য এলো। সুতরাং এটা কোন বিতর্কিত বিষয় নয়। তিনি বলেন, যদি দেখি বা মনে করি জনমতের আলোকে সংবিধানের ঘাটতি পূরণ করতে প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তখন জনগণ যে মতামত দেবে সেই অনুযায়ী সংবিধানে সংশোধনী এনে ঘাটতি দূর করা হবে। ড. কামাল বলেন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সবাই বলল নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। সেই কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করা হলো। সুতরাং আমরা যারা আজকে নির্বাচনে যাচ্ছি তারা বিশ্বাস করি জনগণ সব ক্ষমতার মালিক। যা কিছু হবে জনগণের মতামত নিয়ে। আমরা আশা করি, জনগণের সমর্থন পাব। আর ক্ষমতায় গেলে সংবিধান যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা এক শ’ ভাগ পালন করতে হবে। সংবিধানে রয়েছে মৌলিক গণতন্ত্র, কাজেই এ ব্যাপারে দ্বিমত করার কি সুযোগ আছে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থা হবে গণতান্ত্রিক। এগুলোর মধ্যে তো আমাদের মূল কাঠামো। যার মধ্য থেকে আমরা রাজনীতি করতে চাই। জনগণ সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। সকল পর্যায়ে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করবে তারা নির্বাচিত হবেন। কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায়ে সবাই নির্বাচিত হবে। সেটা তো আমাদের সংবিধানেই বলা আছে। অর্থাৎ আমাদের নতুন করে কোন রাজনীতি করতে হবে না। সেটাকে আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে রাজনীতি করি। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার সংবিধানকে সামনে রেখে তৈরি করা হচ্ছে। আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন।
×