মোঃ মামুন রশীদ ॥ জাতীয় দলে ডাক পাওয়াতেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। সেই স্বপ্ন আরও বাস্তব হয়েছে একাদশ দলে ঠাঁই পেয়ে। দেশের ৯৪তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অভিষেক ঘটলো সাদমান ইসলাম অনিকের। তবে ২০তম ওপেনার (বাঁহাতি হিসেবে মাত্র ষষ্ঠ) হিসেবে তিনি ক্যাপ পেয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কাছ থেকে। প্রথম টেস্টের দলে থাকলেও একাদশে ঠাঁই হয়নি এ ২৩ বছর বয়সী বাঁহাতির। তবে ইমরুল কায়েসের কাঁধে ইনজুরি এবং সাম্প্রতিক সময়ে তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে ওপেনারদের ব্যর্থতা তার অপেক্ষার প্রহর লম্বা হতে দেয়নি। মিরপুর টেস্টে সুযোগটা পেয়েই কাজে লাগিয়েছেন। শুক্রবার প্রথমদিন বাংলাদেশের ১৩তম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে হাঁকিয়েছেন অর্ধশতক (অবশ্য ৩টি সেঞ্চুরিও আছে)। ৭৬ রানের দারুণ ইনিংস খেলে একক্ষেত্রে বাংলাদেশেরই সেরা। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটিই উপহার দিয়েছেন এবং অভিষিক্ত ওপেনার হিসেবে খেলেছেন সর্বাধিক ১৯৯ বল।
সিরিজ শুরুর আগে ২ দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ৭৩ রান এবং এবার জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) ১০ ম্যাচে ৬৪৮ রান করে শীর্ষে থাকায় নির্বাচকদের নজরে আসেন সাবেক এ অনুর্ধ-১৯ দলের অপরিহার্য ওপেনার। ৪২টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৩০২৩ রান করা সাদমান বেশ ধীরস্থির এবং উইকেটে টিকে থাকার ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল সেটা তার ৪৫.৯০ স্ট্রাইক রেট থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। আর ওপেনাররা সাম্প্রতিক সময়ে চরম ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকায় এমন একজনকেই যেন খুঁজছিলেন নির্বাচকরা। চট্টগ্রামে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে অবশ্য প্রথম টেস্টে দর্শক হয়েই দেখতে হয়েছে। কিন্তু মিরপুর টেস্টে দল নামার আগেই নিশ্চিত ছিল অভিষেক ঘটবে সাদমানের। অবশেষে এ বছর দেশের অষ্টম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন প্রধান নির্বাচক নান্নুর কাছ থেকে। গত ৫ টেস্টে ১০ ইনিংসে ২৯১ (২৯.১ গড়) রান করতে পেরেছিলেন ওপেনাররা এবং সর্বোচ্চ রান ছিল তামিমের গত জুলাইয়ে কিংস্টনে করা ৪৭। এবার তরুণ সাদমান তারচেয়ে অভিজ্ঞ সৌম্য সরকারকে নিয়ে ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে প্রথম ঘণ্টা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিয়েছেন। গত ৫ টেস্টে এটি ওপেনারদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। সিলেটে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চলতি নবেম্বরের শুরুতে ৫৬ রানের জুটি গড়েছিলেন ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস। দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল হকের সঙ্গে আরও ৪৫ রান যোগ করেন সাদমান। সবচেয়ে বড় ও কার্যকর জুটিটি গড়েছেন মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে, তৃতীয় উইকেটে ৬৪ রান যোগ করেন তারা।
এর মধ্যেই অর্ধশতক পেয়ে যান সাদমান যা অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে ১৩তম ক্রিকেটার হিসেবে অর্ধশতক। অবশ্য আরও ৩ জন অভিষেকেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ২২০ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৯৯ বল খেলে ৬ চারে ৭৬ রান করার পর সাজঘরে ফেরেন তিনি। অভিষেকে কোন ওপেনারের দেশের পক্ষে এটিই সর্বাধিক বল খেলার রেকর্ড। এর আগে ১৮৬ বল খেলেছিলেন মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে। তবে অল্পের জন্য অভিষেকে ওপেনারদের মধ্যে সেরা হতে পারেননি সাদমান। জাভেদ ওমর বেলিম ২০০১ সালের এপ্রিলে বুলাওয়ে টেস্টে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৮৫ রানে। সেদিক থেকে বলা যেতে পারে সাদমানের দ্বিতীয় আরেকটি সুযোগ আছে। ইতোমধ্যে অবশ্য দেশের পক্ষে অভিষেকের প্রথম ইনিংসে ওপেনার হিসেবে সেরা হয়ে গেছেন। এর আগে প্রথম ইনিংসে কোন বাংলাদেশী অভিষিক্ত ওপেনারের সেরা ইনিংস ছিল জাভেদের বুলাওয়ে টেস্টে ৬২ রান। সাদমানের এই ইনিংসটি টেস্ট ইতিহাসে ৬৪তম বড় ইনিংস (৩৩টি সেঞ্চুরি ও ১টি ডাবল সেঞ্চুরিও আছে), প্রথম ইনিংসের বিবেচনায় ৪৩তম, বাঁহাতি ওপেনার হিসেবে ২০তম। তবে প্রথম ইনিংসের বিবেচনায় বাঁহাতি ওপেনার হিসেবে অভিষেকে ১৪তম স্থান পেয়েছে তার ইনিংসটি। শ্রীলঙ্কার ব্রেন্ডন কুরুপ্পু অপরাজিত ২০১ রান করেছিলেন ১৯৮৭ সালের এপ্রিলে কলম্বোয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
বাংলাদেশের হয়ে যত বাঁহাতি ব্যাটসম্যান খেলেছেন তাদের মধ্যে অভিষেকে সাদমানের ইনিংস তৃতীয় অবস্থানে। আবুল হাসান রাজু ১১৩ রান করেছিলেন ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুলনায়। এরপরই আছে তামিমের ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ৮৪ রান। এশিয়া মহাদেশের টেস্ট ইতিহাসেও কিছু জায়গা দখল করেছেন সাদমান। অভিষেকে এশিয়ান ওপেনারদের মধ্যে তিনি ২০তম সেরা ইনিংস খেলেছেন যা প্রথম ইনিংসের হিসেবে ১৪তম। তবে বাঁহাতি ওপেনার হিসেবে জায়গাটা আরও ওপরের দিকে। সাদমান পঞ্চম স্থানে। দিনশেষে সাদমান তার ইনিংস নিয়ে বলেন, ‘হয়তো দলকে আমার আরও কিছু দেয়ার আছে। যতটা প্রত্যাশা ছিল ততটা পুরোপুরি করতে পারিনি। কিন্তু আমি সন্তুষ্ট। সেঞ্চুরি হাতছাড়া হওয়ায় আফসোস নেই। ভবিষ্যতে হয়তো দলকে আরও ভাল কিছু দিতে পারব। সৌম্য ও সাকিব ভাইসহ যারা আমার সঙ্গে এদিন জুটিতে ছিলেন সবাই অনেক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।’ ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে থাকা এবং ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৭৩ রান করাটাও বেশ সহায়ক হয়েছে সাদমানের জন্য। তিনি বলেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে যেমন খেলি সেভাবেই স্বাভাবিক খেলার চেষ্টা করেছি। সাকিব ভাইয়েরাও বলছিলেন আমার বৈশিষ্ট্য অনুসারে খেলতে। প্রস্তুতি ম্যাচে খেলাটা অবশ্যই আজ কিছুটা কাজে দিয়েছে। কারণ ওদের বোলারদের ব্যাপারে কিছুটা ধারণা পেয়েছি।’