ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী আচরণ বিধি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

 নির্বাচনী আচরণ বিধি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

বাংলাদেশের বহু সিস্টেম ডিজিটাল হলেও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এখনও পুরোপুরি ডিজিটাল হতে পারেনি। সেই পুরনো পদ্ধতি এখনও বিদ্যমান। তৃতীয় বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার রাজনৈতিক দল-ব্যক্তিগুলো খুব বেশি রপ্ত করতে পারেনি বা এখনও অভ্যেস্ত হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে সরকারও এটির ব্যবহার যথাযথভাবে করতে পারেনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির নামে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন এ্যাক্টিভিটিজগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। এমনকি, সরকারি-বেসরকারী উদ্যোগে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলোও ওইসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করছে। আবার রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির ভেরিফায়েড করা ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সরকারী ও দলীয় কর্মকা- এবং নিজেস্ব চিন্তা-ভাবনাগুলো ভাইরাল করা হচ্ছে। ঠিক তেমনি, ভারতের রাষ্ট্রপতি, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একেবারে উল্টো। এখানে একটি কথা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার হলেও তিনি সরাসরি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সরাসরি ব্যবহার করছেন না। তেমনিভাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, টুইটারসহ অন্য সামাজিক সাইটগুলোতে তাঁর বিচরণ নেই। আর সেই সঙ্গে সরকারীভাবে প্রধানমন্ত্রী যেমন, ‘প্রাইম মিনিস্টার অব বাংলাদেশ’ আর ‘প্রেসিডেন্ট অব বাংলাদেশ’ নামক কোন ভেরিফায়েড এ্যাকাউন্টও নেই। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর অনুষ্ঠিতব্য বক্তব্যগুলো এতটাই আকর্ষণীয় হয়, সকল বয়সের মানুষ উৎসাহের সঙ্গে শ্রবণ করে, অবলোকন করেন। কিন্তু এটি তো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। বিটিভি সরাসরি সম্প্রচার করলে, ওই অনুষ্ঠান দেখার জন্য তখন টেলিভিশনের সামনে বসে থাকতে হয়। এই জায়গায় ‘প্রাইম মিনিস্টার অব বাংলাদেশ’ আর ‘প্রেসিডেন্ট অব বাংলাদেশ’ নামক দুটো এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটারসহ অন্য সাইটগুলোতে সরকারীভাবে সরকারী উদ্যোগের অনুষ্ঠানগুলোর ছবি, ভিডিও সরাসরি সম্প্রচার করার ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সরকার-রাষ্ট্রপ্রধানসহ সাধারণ এ্যাক্টিভিষ্টগুলো সরকার-রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যাপারে অবহিত হওয়ার সুযোগ থাকত; যা এখন পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে- ইলেকট্রনিক্স, অনলাইন ও পরের দিন প্রিন্ট মিডিয়ার ওপর। তবে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ একটু এগিয়ে আছে। দলীয় ও সরকারী অনুষ্ঠানগুলো বিটিভির সরাসরি সম্প্রচার থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও ‘লাইভ’ প্রচারের ব্যবস্থা করে থাকে। এটি ইউটিউব, টুইটারসহ অন্য সাইটগুলো থেকেও করা উচিত। অন্যদিকে বিএনপি এই দিকে একেবারেই উল্টোপথে হাঁটছে বলে প্রতীয়মান। তবে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ভেরিফায়েড ফেজবুক পেজ আছে। এটির এ্যাডমিন সরাসরি খালেদা জিয়া-এটির যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ, মাঝে মাঝে এমন কিছু পোস্ট ভাইরাল হয় যা খালেদা জিয়া এই ধরনের বিতর্কিত পোস্ট নিজে ভাইরাল করে থাকতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। আর সরকারী আমলা থেকে শুরু করে এমপি-মন্ত্রীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহজ হওয়ার পরেও অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে অনেক সময় অনীহা প্রকাশ করে এটির ব্যবহার থেকে নিজেকে এক প্রকার দূরে রেখেছে। আবার অনেকে ব্যক্তিগত হয়রানি বা অপপ্রচারের ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। তবে, বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সরকারী আমলা, এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এই সামাজিক যোগাযোগের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে, ব্যবহার করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এমপি প্রার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী তাদের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট উল্লেখযোগ্যহারে খোলা হয়েছে। আর ওইসব এ্যাকাউন্টে বিশেষ করে বাংলাদেশে ফেসবুক সহজ ও জনপ্রিয় হওয়ায় সবাই এক প্রকার ফেসবুকের দিকেই ঝুঁকে পড়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলেও দলের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। এমনকি সরকারীভাবেও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। বহুল জনসংখ্যার রাজধানীতে এক মিনিট সিগন্যালের জন্য যে যানজট সৃষ্টি হয় কিংবা দলীয় সভা-সমাবেশের সময় নগরবাসীর যে দুভোর্গ সহ্য করতে হয়- এটি সরকারীবিরোধী দলসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ কম-বেশি অবগত। দেশ উন্নত হয়েছে। সবার হাতে হাতে টাকা হয়েছে। রাজধানীতে দিন দিন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু রাস্তাঘাট সেই আগের মতোই আছে। বরং আগের চেয়ে ফুটপাথ আর ফুটপাথের দোকানের জন্য বরং সঙ্কোচিত হয়েছে। মানুষ যে একটু হাত-পা ছেড়ে হাঁটবে- এই জায়গাটুকু নেই। এরই ভেতর মাঝে-মধ্যে রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির সভা-সমাবেশের কারণে খেটে খাওয়া রাজধানীরবাসীর জীবন অতিশয় কষ্টকর হয়ে ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে আচরণ বিধিবিধান কেমন হবে- এটি সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন নির্দেশনা এখনও দেয়া হয়নি। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রার্থী ও প্রার্থীর পক্ষে কেমন প্রচারণা হবে- এটির ব্যাপারেও সুস্পষ্ট কোন নীতিমালা তৈরি হয়েছে কিংবা সরকার বা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক কোন নির্দেশনা দিয়েছে- এমন খবর গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি। আর এটির সুযোগ নিয়েছে আইনের চোখে দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এখন প্রশ্ন আসে, দন্ডিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ ও তার বক্তব্য প্রচারের বিধিবিধান কী আছে? যেমন, কারাগারে আটক দন্ডিত ব্যক্তির সঙ্গে আইন মেনে দেখা করা যায়। তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শও করতে পারেন। দন্ডিত ব্যক্তি জামিনে থাকলেও আইন তার সঙ্গে যোগাযোগ বা তার কথা বলার অধিকার দিয়েছে। কিন্তু দন্ডিত এবং একই সঙ্গে পলাতক ব্যক্তির ব্যাপারে কী হবে? কারণ. পলাতক ব্যক্তি যে আইনকে উপেক্ষা করছেন, তা স্পষ্ট এবং আমাদের বুঝতে হবে। তারেক জিয়া পলাতক অবস্থায় রাজনীতিতে কীভাবে অংশ নিতে পারেন- এটিও একটি প্রশ্ন! আর এই বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানানো হয়েছে। আওয়ামী সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দ-াদেশপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান কীভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রার্থীদের সাক্ষাতকার নিচ্ছেন, তার আইনগত দিক খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।’ আদালতের দন্ড নিয়ে পলাতক অবস্থায় দলীয় প্রার্থীর সাক্ষাতকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ নিয়ে ‘কিছু করতে পারছে না’ নির্বাচন কমিশন। কারণ, এ ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই, নেই সুস্পষ্ট আইনের কোন ব্যাখ্যা! আধুনিক প্রযুক্তির তৃতীয় বিশ্বে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম’ কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে- এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে বিশ্ববাসী অনুধাবন করতে পেরেছে। আর বাংলাদেশেও সর্বশেষ কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নামে গুজব ছড়িয়ে জনমনে কী ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশের জান-মালের ক্ষতি সাধন করতে পারে- এটিও বিবেচনায় আনা উচিত। আর সংসদ নির্বাচন, যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা; এই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যে উদাস- এটি তাদের কর্মকান্ডে প্রতীয়মান। এই ধরুন, টানা দশ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর মাঝে এক ধরনের এমপি হওয়ার স্বপ্ন তৈরি হয়েছে যা চার হাজারেরও বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রির মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে এবং এটি আমি ব্যক্তিগতভাবে ইতিবাচক ও প্রতিযোগিতামূলকই মনে করছি। আর এটি দলের নীতি নির্ধারক জানতেন বলেই আমার বিশ্বাস। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা কীভাবে ঢেলে সাজাবেন কিংবা প্রতিযোগীদের জন্য সুব্যবস্থাপনা কী হবে- এটির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। অর্থাৎ দলীয়ভাবে বা দলগতভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিশাল প্রতিযোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে সেই গতানুগতিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীর শোডাউনের মাধ্যমে একদিকে রাজধানীবাসীর জনজীবনকে কষ্ট দেয়া অন্য দিকে দলীয় নেতাকর্মীর দ্বারায় সৃষ্ট বিশৃঙ্খলায়, দল ও নেতাকর্মীর ইমেজ বা গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। শুধু তাই নয়, ঢাকার মোহাম্মদপুর ও আদাবরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গাড়িচাপায় দুই কিশোরের মৃত্যু ঘটেছে- এই সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপিও একই পথের পথিক হয়েছে। দলীয় মনোনয়েন গ্রহণ ও জমার দেয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে রীতিমতো রণক্ষেত্র তৈরি করেছে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা গেছে, এক ধরনের পরিকল্পনা নিয়েই বিএনপির নেতাকর্মী পুলিশের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে এটি সম্পষ্ট দেখা গেছে। পরিস্থিতি এতটাই যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ একটা সময় কাঁদুনে গ্যাসের শেল ও রবার বুলেট ছুড়তে বাধ্য হন। বাংলাদেশ ডিজিটাল হলেও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এখনও ডিজিটাল হতে পারেনি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার রপ্ত করেনি। সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আবেদন আপনার হাতের মোবাইল দিয়েই করা সম্ভব। শুধু পরীক্ষার সময় আপনাকে, আমাকে নির্দিষ্ট কলেজ আসতে হয়। আবেদন ফরম, নির্দিষ্ট ফিসহ যাবতীয় কাজগুলো যেখানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সমাধান করা সম্ভব সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো পড়ে আছে সেকালের পদ্ধতি নিয়ে। রাজনৈতিক দলগুলোও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নমিনেশন ফরম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে করা উচিত ছিল। অনলাইনের মাধ্যমে নমিনেশন ফরম পূরণ করা, ব্যাংকের মাধ্যমে নমিনেশ ফি জমা করা এবং অনলাইনেই দলীয় মনোনয়ন বা নমিনেশ ফর্ম জমা দেয়ার ডিজিটাল পদ্ধতিতে করতে সিস্টেম চালু করা সময়ের একান্ত প্রয়োজন ছিল। আওয়ামী লীগ যেহেতু ডিজিটাল পদ্ধতির মূল রূপকার- তাই আওয়ামী লীগের ওপরই জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কিন্তু এই জায়গায় আওয়ামী লীগও দলগতভাবে গতানুগতিক পদ্ধতি নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সাজানোর পরিকল্পনা- এটি আমার কাছে দুঃখজনক। অন্যদিকে সরকার বা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ডিজিটাল পদ্ধতি গ্রহণের কোন নির্দেশনা না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের গতানুগতিক পদ্ধতি গ্রহণ করেন। আর বিশৃঙ্খলা রোধ বা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ৮ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হতে পারে- এমন সম্ভাবনা থেকে দলীয় কার্যালয় বা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা নিয়ে যে কোন মিছিল-শোডাউন বন্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন একটি উৎসব, একটি প্রতিযোগিতা। আর বাংলাদেশের নির্বাচন; খুব সুখকর নয়- এটি আমাদের সবার কম-বেশি জানা। সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করেই সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য ডিজিটাল পদ্ধতি গ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়া উচিত ছিল। অন্যদিকে ডিজিটাল পদ্ধতির রূপকার আওয়ামী লীগেরও এ নিয়ে নতুনত্ব সৃষ্টির সুযোগ ছিল। প্রত্যেক প্রার্থী অনলাইনের মাধ্যমে তার মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারলে; বর্তমান সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেত এবং দলীয় ফান্ডে আরও অর্থ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বিশ্ব যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যেভাবে জনকল্যাণকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা সম্ভব- এটি বাংলাদেশ সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো গ্রহণ করা উচিত। ডিজিটাল পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো অনাকাক্সিক্ষত, অপ্রত্যাশিত, ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি এবং সর্বোপরি বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে যে রণক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছিল- এটি এড়ানো সম্ভব ছিল। আশা করি, আজকের শিক্ষা নিয়ে কালকের দিনগুলো সাজাতে রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিগুলো সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং এটাই জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে। লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)
×