ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভুল চিকিৎসার দায়

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

 ভুল চিকিৎসার দায়

চিকিৎসার ত্রুটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন রোগগ্রস্ত ব্যক্তি। কিন্তু এই ক্ষতি যদি চূড়ান্ত রূপ পায়, অর্থাৎ রোগীর মৃত্যু ঘটে সেক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের মনের অবস্থা কেমন হয়, সেটি বলে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সম্প্রতি চিকিৎসা সেবার জন্য অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যেটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। ভুল চিকিৎসার দায় এড়ানো বাঞ্ছিত নয়। নৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করলে আমরা বলতে পারি ভুল যিনি করেন দায়ভার তার ওপরই বর্তাবে। তবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেরও করণীয় রয়েছে। রওশন আরার কিডনি অপারেশনের পর তার মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত অভিযোগের জবাবে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইউরোলজিক্যাল সার্জনস (বিএইউএস) বিষয়টিকে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখেছে। এজন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে চলতি মাসের শুরুর দিকে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এর সপ্তাহধিককাল পরে হাইকোর্ট ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছে। একই সঙ্গে কিডনি অপারেশনের সম্পৃক্ত দুই চিকিৎসকের পেশাগত লাইসেন্স বাতিলের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। মানুষ মাত্রেরই ভুল হতে পারে। ডাক্তারদের ভুল হলে রোগীর বিপদ ঘটতে পারে। ভুল ভুলই, সেটি ইচ্ছাকৃত নয়। তবে কোন কাজে ভুল হয়েছে কিনা সেটি আগে নিশ্চিত হওয়া চাই। ভুলের কারণে কোন ক্ষতি হয়ে গেলে সে ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ আছে। সে উপায়টিকে কাজে না লাগিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া গ্রহণযোগ্য নয়। ভুলের অভিযোগ তুলে কেউ সত্যি সত্যি বিরাট ভুল করে বসবেন, সেটাও প্রত্যাশিত নয়। এর আগে ডাক্তারের কথিত ভুলের অভিযোগ তুলে রাজধানীর একাধিক বেসরকারী হাসপাতালে তুলকালাম কাণ্ড ঘটতে দেখেছেন মানুষ। বলাবাহুল্য, এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড কোন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই সমর্থন করতে পারেন না। হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসায় ভুল বা অবহেলার অভিযোগের ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি অভিযোগ জানাতে পারেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) বরাবর। বিএমডিসি স্বাধীন অবস্থান থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। আইনের পথই উত্তম পথ। মৃত রওশন আরার পরিবার আইনসম্মতভাবেই ভুলের প্রতিকার চেয়েছে। সেটি সাধুবাদযোগ্য। কোন কোন রোগে ছুরিচিকিৎসা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। রোগীর সুস্থতার জন্যই এ চিকিৎসা। অনেক সময় অপারেশন অসফল হয়। এমনটি হতে পারে জেনেও রোগী ও চিকিৎসক উভয়পক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় সম্মতি দেন। তা না হলে সুস্থতার সম্ভাবনাটুকুকেই অস্বীকৃতি জানানো হয়। রোগগ্রস্ত কিডনি অপসারণ করতে গিয়ে যদি রোগীর অপরিহার্য অপর ভাল কিডনিটি কেটে ফেলে দেয়া হয় সেক্ষেত্রে পরিতাপের পরিসীমা থাকে না। বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। রোগী রওশন আরার ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে। এবং শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়েছে। একথা রোগীপক্ষ সব সময়ই বিশ্বাস করে থাকে যে, একজন চিকিৎসক ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীর কোন ক্ষতি করেন না। ভুলক্রমে কিছু ঘটলে চিকিৎসকেরও দুঃখ পাওয়ার কথা। তবে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা খুব জরুরী। রওশন আরার ঘটনায় কিছু অস্পষ্টতা সামনে চলে এসেছিল, যা প্রত্যাশিত ছিল না। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আগামীতে চিকিৎসাসেবায় আরও সচেতনতা, সতর্কতা ও স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত প্রতিফলিত হবে। ভুল করলে ভুলের দায় গ্রহণের মতো পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতা বজায় থাকা আবশ্যক।
×