ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুদামে মজুদ ৬ হাজার মেট্টিকটন চিনি ॥ লোকসানের বোঝা শতকোটি

রাজশাহী চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

 রাজশাহী চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বিগত দুই বছরের উৎপাদিত ছয় হাজার মেট্রিক টন চিনি গুদামে ফেলে রেখেই চলতি মৌসুমের আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়েছে রাজশাহী চিনিকলে। অব্যাহত লোকসানে শতকোটি টাকার দেনায় দায় নিয়েই শুক্রবার ফের শুরু হয়েছে আখ মাড়াই। এবার ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এদিকে এখনও মিলের প্রায় ১ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীরা ৬ মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকদের অব্যাহত দাবির মুখে বকেয়া বেতনের আংশিক পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু হলেও সেখানেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, বকেয়া বেতন-ভাতার ১৬ শতাংশ কেটে বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রাজশাহী চিনিকলের গুদামে দুই মৌসুমের উৎপাদিত প্রায় ৫০ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রাজশাহী চিনিকলের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চলতি বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশন ১ লাখ মেট্রিক টন চিনি বিদেশ থেকে আমদানি করে। আমদানির পরপরই চিনির বাজারদর কমে যায়। কর্পোরেশন প্রতিকেজি চিনির মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজার মূল্য ৪০-৪২ টাকা। তাই কর্পোরেশন বাজার মূল্যে আমদানিকৃত চিনি বিক্রি করে তার লোকসান মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের নির্দিষ্ট অংশ কেটে পূরণ করা হচ্ছে। এদিকে বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় কর্পোরেশনের নিবন্ধিত ডিলাররা মিলের চিনি কিনছেন না। এজন্য চিনিকলের গুদামে কোটি কোটি টাকার চিনি পড়ে আছে। ফলে মিল কর্তৃপক্ষ আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। একদিকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া, অন্যদিকে ঋণের বোঝা। দিনে দিনে দুটোই আরও ভারি হয়ে উঠছে। সরেজমিনে রাজশাহী চিনিকলে গিয়ে জানা যায়, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করে ভিন্ন দু’টি খাতায় লিখে তাদের স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। একটি খাতায় তাদের আসল বেতন-ভাতা ও অন্য খাতায় ১৬ শতাংশ বাদে পরিশোধিত বেতন লেখা হচ্ছে। আর কোটি কোটি টাকার চিনি অলস পড়ে আছে। ফলে চিনিকল মিল কর্তৃপক্ষ আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে। একদিকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া, অন্যদিকে ঋণের বোঝা নিয়ে এক সময়ের লাভজনক শিল্পটি রুগ্ন হয়ে পড়েছে। মিলের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন বন্ধ থাকায় শ্রমিক-কর্মচারীদের শোচনীয় অবস্থার মধ্যে আছেন। কারও পরিবারে খাদ্য, ওষুধ কেনার টাকা নেই। কয়েকজন কর্মচারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে ১৬ শতাংশ ছাড় দিয়ে তারা বেতন নিচ্ছেন। কর্পোরেশনের লাভ হলে শ্রমিকরা তার কোন অংশ পাননা। অথচ লোকসান হলে তার বোঝা শ্রমিক-কর্মচারীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়। রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, বেতনের দাবিতে আমরা মন্ত্রণালয়ে তিন মাস আগে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু এখনও আমরা কোন প্রতিকার পাইনি। আমাদানিকৃত চিনি কম দামে বিক্রি করে আমদের কাছ থেকে কেন লোকসান উশুল করা হবে ? রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি শ্রমিকদের বেতন থেকে কেটে নেয়া অযৌক্তিক। রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশফাকুর রহমান এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমদানিকৃত চিনির লোকসান পূরণে শ্রমিক-কর্মাচারীদের বেতন কাটা হচ্ছে না। বরং সংশ্লিষ্ট চিনিকল তাদের চিনি বিক্রির লোকসান পূরণে বেতনের নির্দিষ্ট অংশ রেখে দিচ্ছে। মিলগুলোকে উৎপাদিত চিনি বিক্রি করেই শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হবে। চিনির দাম কমে যাওয়ায় আমরা অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়েছি। মিলগুলো চিনি বিক্রি করতে পারছে না, আবার মিলের চিনির দাম কমালে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার লোকসানে পড়তে হবে বলেও মন্তব্য করেন চিনি শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান। এদিকে এত লোকসান ও শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে চলতি মৌসুমের চিনি উৎপাদন শুরু হয়েছে রাজশাহী চিনিকলে। শুক্রবার ঘরোয়াভাবে আখ মাড়াইয়ের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রউফ খান।
×