ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেটের অবাধ আমদানি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২১ নভেম্বর ২০১৮

  বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেটের অবাধ আমদানি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ খাদ্য লবণ হিসেবে বাজারজাত হওয়ায় বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেটের অবাধ আমদানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শীঘ্রই এ সংক্রান্ত করুণীয় নির্ধারণে একটি কৌশল গ্রহণ করা হবে। মানবদেহের জন্য ফরমালিনের চেয়েও ক্ষতিকর বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেট খাদ্য লবণ হিসেবে বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে। দেশে ৫ লাখ খাদ্য লবণের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে সোডিয়াম সালফেট দিয়ে। অথচ আমদানি নীতিতে সোডিয়াম সালফেট অবাধে আমদানি ও বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেটের অবাধ আমদানি বন্ধে শীঘ্রই করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সোডিয়াম সালফেট শিল্পে ব্যবহার হয়ে থাকে। এটা বিষাক্ত, খাবার লবণ হিসেবে ব্যবহার করা হলে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হবে। এ কারণে সোডিয়াম সালফেটের অবাধ আমদানি বন্ধে করণীয় সব কিছু করা হবে। তিনি বলেন, বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেট খাবার লবণ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে-এ ধরনের একটি অভিযোগ রয়েছে। বাজার থেকে লবণ সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্প্রতি, অবাধে বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেটের আমদানির সুযোগে দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংসের দ্বাপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতি। ওই সময় সংগঠটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক সোডিয়াম সালফেট খাবার লবণ হিসেবে ব্যবহার, সোডিয়াম সালফেটের নামে ফিনিশড লবণ আমদানি, বৈষম্যমূলক শুল্কনীতি এবং বিসিকের তথ্য বিভ্রাটের কারণে দেশীয় লবণ শিল্প ও চাষীরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ শতাধিক মিল বন্ধ হয়ে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হওয়ার পথে রয়েছেন। অপরদিকে, সোডিয়াম সালফেট খেয়ে ভোক্তাদের লিভার, কিডনি ও পাকস্থলীর মতো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ জটিল রোগব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। অচিরেই সোডিয়াম সালফেট খাবার লবণ হিসেবে ব্যবহার বন্ধ না হলে পুরোজাতি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। একই সঙ্গে চাষীরা আগামী লবণ উৎপাদন মৌসুমের উৎপাদিত প্রাকৃতিক লবণ বিক্রি করতে পারবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, মানবদেহের জন্য বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেট দিয়ে তৈরি হচ্ছে খাবার লবণ। প্রায় বিনাশুল্কে আমদানি করা যায় সোডিয়াম সালফেট, অন্যদিকে অপরিশোধিত বোল্ডার লবণ আমদানিতে প্রায় ৯০ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি প্রদান করতে হয়। এতে করে শিল্পে ব্যবহারের জন্য সোডিয়াম সালফেট আমদানি করে পরবর্তীতে তাই খাবার লবণ হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে। এছাড়া অনুমতি না থাকার পরও একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র সরাসরি ফিনিশড লবণ আমদানি করছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিক বিষয়টি জানার পরও সোডিয়াম সালফেট আমদানি নিয়ন্ত্রণে কর্ণপাত করছে না বরং লবণ ঘাটতির যে তথ্য দিয়েছে বিসিক তাও সঠিক নয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লবণের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে সোডিয়াম সালফেট দিয়ে।
×