ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হেরাথের বিদায়ী টেস্টে শ্রীলঙ্কার লজ্জার হার

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১০ নভেম্বর ২০১৮

হেরাথের বিদায়ী টেস্টে শ্রীলঙ্কার লজ্জার হার

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ গ্রেট মুত্তিয়া মুরলিধরনের বিদায়ের পর বলতে গেলে বল হাতে একাই শ্রীলঙ্কাকে টানছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। বিদায় বেলায় লঙ্কান ক্রিকেটের ঘোর অমানিষার অন্ধকারটা নিজ চোখেই দেখে গেলেন। গলে হেরাথের ক্যারিয়ারের শেষ আর সিরিজের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের কাছে স্বাগতিকদের হার ২১১ রানে। ৩৪২-এর পর ৬ উইকেটে ৩২২ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারী ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে মাত্র ২০৩ রানে অলআউট শ্রীলঙ্কা জয়ের জন্য ৪৬২ রানের অসম্ভব লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুক্রবার চতুর্থদিনে ২৫০ রানে গুটিয়ে যায়। ইংলিশ ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ম্যাচসেরা বেন ফোকস (১০৭)। ক্যান্ডিতে বুধবার শুরু তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক জো রুটকে আউট করে টেস্ট ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় বোলার হিসেবে একই ভেন্যুতে (গল) ১০০ উইকেটের ল্যান্ডমার্ক ছুঁয়েছিলেন হেরাথ। দ্বিতীয় ইনিংসে নেন আরও ২ উইকেট। অর্থাৎ ৯৩ টেস্টে ৪৩৩ উইকেট নিয়ে ১৯ বছরের ক্যারিয়ার শেষ করলেন ৪০ বছর বয়সী বাঁহাতি অফস্পিনার। যা টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ শিকারের তালিকায় আট নম্বরে। ‘শ্রীলঙ্কার হয়ে দীর্ঘ সময় খেলতে পেরে আমি গর্বিত। ক্যারিয়ারে দারুণ কিছু মুহূর্ত রয়েছে যা আজীবন মনে থাকবে। এ সময়ে দেশের মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। সবাইকে ধন্যবাদ। আশা করছি আগামীতে আমাদের ক্রিকেটে ভাল দিন আসবে। আরও কিছুদিন হয়তো ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলব’ বিদায় বেলায় বলেন হেরাথ। অধিনায়ক দীনেশ চান্দিমাল, সতীর্থ ক্রিকেটাদের এবং প্রতিপক্ষ ইংলিশদের কাছ থেকেও শুভেচ্ছা পেয়েছেন হেরাথ। ৪৬২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বৃহস্পতিবার কোন উইকেট না হারিয়ে ১৫ রান তুলে তৃতীয়দিন শেষ করেছিল শ্রীলঙ্কা। ক্রিজে ছিলেন দিমুথ করুনারতেœ ও কুশল সিলভা। শুক্রবার চতুর্থদিনে ৫১ রানের জুটি গড়ে সিলভা আউট হয়ে যান। ৩০টি রান করেন তিনি। ৫৯ রানের মাথায় ফিরে যান করুনারতেœও। ২৬টি রান আসে তার ব্যাট থেকে। ৯৮ রানের মাথায় ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ২১ রান করে ফিরে যান। চতুর্থ উইকেটে দলের হাল ধরেন কুশাল মেন্ডিস ও এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। তারা দু’জন ৪৬ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু দলীয় ১৪৪ রানের মাথায় এই জুটি ভাঙ্গেন জ্যাক লিচ। অধিনায়ক দীনেশ চান্দিমাল এসেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৫৪ রানের মাথায় চান্দিমালকে সরাসরি বোল্ড করে ফেরত পাঠান লিচ। ১ রান আসে লঙ্কান কাপ্টেনের ব্যাট থেকে। নিরোশান দিকওয়েলাকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাথুস দলীয় সংগ্রহকে ১৯০ পর্যন্ত টেনে নেন। ব্যক্তিগত ১৬ রানে ফেরেন দিকওয়েলা। তার বিদায়ের ৭ রানের মাথায় (১৯৭ রানে) লড়তে থাকা ম্যাথুসকে ফেরত পাঠান মঈন আলি। সাবেক অধিনায়ক ম্যাথুস দ্বিতীয় ইনিংসে দলের সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন। এরপর ২২৯ রানে আকিলা ধনঞ্জয়া (৮), ২৩৯ রানে দিলরুয়ান পেরেরা (৩০) ও ২৫০ রানে রঙ্গনা হেরাথ (৫) দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটে কাটা পড়েন। বিদায়ী টেস্টে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। মঈন ৪টি ও জ্যাক লিচ ৩টি উইকেট নিয়েছেন। ২০১৬ সালের পর ইংল্যান্ডের প্রথম এ্যাওয়ে টেস্ট জয়। দেশের বাইরে ১৩ ম্যাচ পর জয়। গলে প্রথম। আর অধিনায়ক হিসেবে রুটের এটি প্রথম বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয়। স্কোর ॥ ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ॥ ৩৪২/১০ (৯৭ ওভার; বার্নস ৯, জেনিংস ৪৬, মঈন ০, রুট ৩৫, স্টোকস ৭, বাটলার ৩৮, ফোকস ১০৭, কুরান ৪৮, রশিদ ৩৫, লিচ ১৫; লাকমল ৩/৭৩, দিলরুয়ান ৫/৭৫) ও দ্বিতীয় ইনিংস ॥ ৩২২/৬ ডিক্লেঃ (৯৩ ওভার; বার্নস ২৩, জেনিংস ১৪৬* মঈন ৩, রুট ৩, স্টোকস ৬২, বাটলার ৩৫, ফোকস ৩৭, কুরান ০*; দিলরুয়ান ২/৯৪, লাকমল ০/৩০, হেরাথ ২/৫৯, দনঞ্জয়া ১/৮৭, ধনঞ্জয়া ০/৪১)। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস ॥ ২০৩/১০ (৬৮ ওভার; মেন্ডিস ১৯, ম্যাথুস ৫২, চান্দিমাল ৩৩, দিকওয়েলা ২৮, পেরেরা ২১; মঈন ৪/৬৬, আদিল ২/৩০, লিচ ২/৪১) ও দ্বিতীয় ইনিংস ॥ ২৫০/১০ (৮৫.১ ওভার; করুনারতেœ ২৬, সিলভা ২১, চান্দিমাল ১, মেন্ডিস ৪৫, ম্যাথুস ৫৩, পেরেরা ৩০, লাকমল ১৪*; মঈন ৪/৭১, লিচ ৩/৬০)। ফল ॥ ইংল্যান্ড ২১১ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ বেন ফোকস (ইংল্যান্ড)। সিরিজ ॥ তিন টেস্টের সিরিজে ইংল্যান্ড ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
×