ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:১১, ১০ নভেম্বর ২০১৮

ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুইয়েকে উড়িয়ে দেয়ার পর অনুপ্রাণিত বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজে নেমেছিল। কিন্তু অধিক আত্মবিশ্বাসটাই হয়তো কাল হয়েছে। প্রথম টেস্টে ভয়ানক বাজে নৈপুণ্য দেখিয়ে হেরে গেছে বাংলাদেশ দল। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে স্বাগতিকদের লজ্জার পরাজয়ে সাক্ষী হয়ে। গত কয়েক বছর ধরেই দেশের মাটিতে পরাশক্তিদের নাকানি-চুবানি খাওয়ানো বাংলাদেশ দলের এমন পরাজয়ে বিস্ময়েরও খুব বেশি কিছু নেই। কারণ এ বছর মার্চে সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও খুব বাজে পরাজয় হয়েছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। স্পিন আক্রমণে প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে নেমে নিজেরাই সেই ফাঁদে আটকে নাজেহাল হয়েছে। গ্লানিময় সেই পরাজয়ের দু’দিন পর শুক্রবার আবার অনুশীলনে নেমেছে বাংলাদেশ দল। এবার লড়াই সিরিজ হার ঠেকানোর। গত ৮ ইনিংসে দলের রান ২০০ ছুঁতে পারেনি। লড়াই তাই নিজেদের সঙ্গেও। সেই চ্যালেঞ্জে জেতার পাশাপাশি সিরিজ হার ঠেকাতে জয়ের কোন বিকল্প নেই। বিকেল পর্যন্ত নিবিড় অনুশীলন করেছে। রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে নামার আগে মাত্র দু’দিনই অনুশীলনে আগের ম্যাচে হারের পেছনে থাকা ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ। টেস্টটি ড্র হলেও সিরিজ জিতে যাবে জিম্বাবুইয়ে। দেশের অষ্টম ভেন্যু হিসেবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচ হয়েছে। সে জন্য ছিল নানাবিধ আয়োজন। আগের ৭টি টেস্ট ভেন্যুতেই শুরুটা হয়েছিল হার দিয়ে। কিন্তু এবার সেই বাজে ইতিহাস বদলানোর মোক্ষম সুযোগ ছিল। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই জিম্বাবুইয়ে দলটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরমেটে বেশ সংগ্রাম করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিমত্তার তারতম্যও হয়ে গেছে বিরাট বড়। সেটা আরও পরিষ্কার হয়ে যায় ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। দেশসেরা দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়াই খেলতে নেমে প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করেছে। এসব পরিসংখ্যান মাথায় নিয়ে খেলতে নেমেই চরম ভুল করেছে স্বাগতিকরা। এবার সাকিব-তামিমের অভাব বারবারই অনুভূত হয়েছে। চরম বিপর্যস্ত বাংলাদেশ টানা অষ্টম ইনিংসে দু’শ স্কোরটাও ছুঁতে পারেনি। এমনকি একই ভাগ্য জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেও বরণ করতে হয়েছে। অথচ ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইমরুল কায়েস ও লিটন কুমার দাস টেস্টটি খেলেছেন। তাছাড়া দুই সেরা মিডলঅর্ডার স্তম্ভ মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছিলেন যারা নিয়মিত পারফর্মার। বিশেষ করে বিপদের মুহূর্তে দলের অন্যতম কা-ারি এ দু’জন। তবে সিলেটে ব্যর্থ হয়েছে তারা দু’জনই। বিষয়টি যে পুরোপুরি মানসিক সমস্যার কারণেই হয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এক, ওয়ানডে ফরমেট থেকে দীর্ঘ পরিসরের টেস্ট ফরমেট। এশিয়া কাপ শেষ করে আবার ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। দুই, জিম্বাবুইয়েকে অধিক হাল্কাভাবে নেয়া। প্রথম টেস্টের একাদশ সাজানো নিয়েও যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে। মাত্র এক পেসার নিয়ে খেলতে নেমে ম্যাচের প্রতি মুহূর্তেই অভাবটা কুরে কুরে খেয়েছে বাংলাদেশ দলকে। টেস্ট ক্রিকেটে খুব বেশি অভিজ্ঞতা না থাকা আবু জায়েদ রাহীকে খেলান হয়েছে সেই একমাত্র পেসার হিসেবে। এ বিষয়গুলোই এবার মিরপুর টেস্টে কাটিয়ে জয়ে ফেরার লড়াই বাংলাদেশ দলের। ১৭ বছর আগে বাংলাদেশের মাটিতে সর্বশেষবার টেস্ট জিতেছিল জিম্বাবুইয়ে। সেই দলটি ছিল তারকা খচিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করাদের নিয়ে ছিল দলটি। আর সে সময় বাংলাদেশ দল সবেমাত্র টেস্ট আঙ্গিনায় পা রাখার ১ বছর পার করেছে। নিজেদের দ্বিতীয় টেস্ট সিরিজ। তবু সেবার প্রথম টেস্ট ড্রয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে হেরেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু এরপর ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২ টেস্টের সিরিজ জিতে যায় বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে। সেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়। এর ৯ বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসে ২০১৪ সালে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। কিন্তু এবার ঠিক চার বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলতে নেমে ঠিকই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। এই ১৭ বছরে বিদেশের মাটিতে আর কোন টেস্টই জিততে পারেনি। ভগ্নপ্রায় একটি দলের জীর্ণশীর্ণ অবস্থা, অথচ তাদের বিপক্ষেই এখন সিরিজ হারের শঙ্কা। ২০১১ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ হেরেছিল জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। সেবার অবশ্য সিরিজে একটিই টেস্ট ছিল। হারারেতে ৬ বছর স্বেচ্ছা নির্বাসন কাটিয়ে ফেরার পর প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই সফরকারী বাংলাদেশকে ১৩০ রানে হারিয়েছিল তারা। এবার আরেকটি গৌরবময় অধ্যায় তাদের সামনে হাতছানি দিচ্ছে। দ্বিতীয় টেস্ট ড্রয়ের আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে জিম্বাবুইয়ে নিশ্চিতভাবেই। কারণ সিরিজ জয়ের হাতছানি তাদের সামনে। আর প্রথম টেস্ট জেতার পর উজ্জীবিত হয়ে সফরকারীরা ভারমুক্ত থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবে আরেকটি জয় তুলে নেয়ার। সেই শঙ্কাও যে উঁকি দিচ্ছে না বাংলাদেশ দলের জন্য এমনটাও নয়। প্রথম টেস্টের ভয়ানক বাজে পারফর্মেন্সের পর হোয়াইটওয়াশের লজ্জা বরণের আশঙ্কার ডঙ্কাও বেশ জোরেশোরেই বাজছে। আবারও সাকিব-তামিমকে ছাড়াই খেলতে হবে। তবে এ টেস্টে বাঁহাতি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান ফিরতে পারেন। তাই এক পেসারের নীতি থেকে বেরিয়ে এবার দু’জন পেসারকে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশের একাদশে। এরপরও সাম্প্রতিক সময়ে দলের টেস্ট ব্যাটিং বড় রকমের বিপদ সঙ্কেতই দিচ্ছে। গত ৪ টেস্টের ৮ ইনিংসে বাংলাদেশের ইনিংসগুলো ছিল- ১১০ ও ১২৩, ৪৩ ও ১৪৪, ১৪৯ ও ১৬৮ এবং ১৪৩ ও ১৬৯! তাই এবার নিজেদের সঙ্গেও লড়াই বাংলাদেশের। বাজে সময় কাটিয়ে নিজেদের ফিরে পাওয়ার লড়াই। আবার জিম্বাবুইয়ের কাছে ঘরের মাটিতে সিরিজ হারের লজ্জা এড়ানোর লড়াই। লজ্জাটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের বুকে খুব বাজেভাবেই আঘাত হানবে, কারণ ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড ও ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মতো দুই ক্রিকেট পরাশক্তিকে দেশের মাটিতেই হারিয়েছিল টাইগাররা। আরেকবার জ্বলে উঠে ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ এবার বাংলাদেশ দলের।
×