ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক দশকের সমাপ্তি...;###;কোহিনূর আকতার

মেসি-রোনাল্ডোবিহীন এল ক্লাসিকো

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

মেসি-রোনাল্ডোবিহীন এল ক্লাসিকো

বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের দুই মহাতারকা লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। গত গ্রীষ্মেই স্পেনের জায়ান্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে যোগ দিয়েছেন রোনাল্ডো। যে কারণে এবারের এল ক্লাসিকোতে সিআর সেভেনকে ছাড়াই রিয়ালের মাঠে নামার কথাটা জানা ছিল সবার। এরপর নিশ্চিত হয় দুই দলের এই ঐতিহ্যবাহী লড়াইয়ে থাকছেন না লিওনেল মেসিও। সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়াই এলএম টেনকে ছাড়াই মাঠে নামে বার্সিলোনা। ফলে রবিবার মেসি-রোনাল্ডোকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল নতুন মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো। গত সপ্তাহে সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় ভাসকেজের সঙ্গে বল দখল করতে গিয়ে পায়ে আঘাত পান লিওনেল মেসি। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ক্লাব এক বিবৃতিতে জানায় আগামী তিন সপ্তাহ মেসির বাইরে থাকার খবর। এ কারণেই এল ক্লাসিকোতে খেলতে পারেননি পঞ্চম ব্যালন ডি’অরজয়ী বার্সিলোনার এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। এর আগে এমনটা দেখা গিয়েছিল এক দশকেরও বেশি সময় আগে। ২০০৭ সালের ২৩ ডিসেম্বরে যে এল ক্লাসিকো হয়েছিল, সর্বশেষ সেই ম্যাচে মেসি-রোনাল্ডোদের কেউ ছিলেন না। এর পরে রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সিলোনার মধ্যকার যে লড়াই হয়েছে, সেখানে সবসময়ই উপস্থিতি ছিল মেসি-রোনাল্ডোর। কিন্তু দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পর এই প্রথম ফুটবলপ্রেমীদের দেখতে হলো মেসি-রোনাল্ডোবিহীন এল ক্লাসিকো। তবে মেসি-রোনাল্ডোবিহীন ম্যাচেও দর্শকদের আগ্রহের কমতি ছিল না। রবিবার যে ন্যু ক্যাম্পের গ্যালারিতে উপস্থিত হয়েছিলেন ৯৩ হাজার ২৬৫ সমর্থক। তবে মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো জিতল বার্সিলোনাই। নিজেদের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে তারা ৫-১ গোলে রীতিমতো উড়িয়েই দেয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে। সেই সঙ্গে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানটাও দখল করে নেয় আর্নেস্তো ভালভার্দের দল। এই ম্যাচে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করেন লুইস সুয়ারেজ। বাকি গোল দুটি আসে ফিলিপে কুতিনহো ও বদলি খেলোয়াড় আর্তুরো ভিদালের পা থেকে। রিয়াল মাদ্রিদের একমাত্র গোলটি করেন মার্সেলো। ম্যাচের শুরু থেকেই দেখা যায় বার্সিলোনার দাপট। প্রথমার্ধের ১১ মিনিটেই এগিয়ে যায় কাতালানরা। জর্দি আলবার পাস থেকে দারুণ এক গোল করে স্বাগতিক সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসান ফিলিপে কুতিনহো। ম্যাচের ৩০ মিনিটে পেনাল্টিতে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন লুইস সুয়ারেজ। এবার ভিএআরের সৌজন্যে পাওয়া পেনাল্টিতে গোল করেন বার্সিলোনার এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। এর ফলে দুই গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ভালভার্দের শিষ্যরা। দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি রিয়াল মাদ্রিদ। দ্বিতীয়ার্ধের ৫০ মিনিটে গোল করে রিয়ালকে ম্যাচে ফেরানোর ইঙ্গিত দেন মার্সেলো। কিন্তু গোল হজম করে যেন আরও বেশি জ্বলে ওঠে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয়ার্ধের ৭৫ মিনিটে বুলেট গতির হেডে নিজের দ্বিতীয় আর বার্সিলোনার তৃতীয় গোল করেন লুইস সুয়ারেজ। ৮৩ মিনিটে নিজের হ্যাটট্রিকটাও পূর্ণ করে নেন এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। তবে গোল উৎসব তখনও থামেনি। ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে রিয়াল মাদ্রিদের জালে শেষ পেরেকটি ঠুঁকে দেন বদলি হিসেবে খেলতে নামা আর্তুরো ভিদাল। পরের সময়টাতে আর গোল না হলে ৫-১ গোলের বড় ব্যবধানের লজ্জাজনক পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সার সেরা তারকা লিওনেল মেসি মাঠে না থাকলেও এদিন গ্যালারিতে ছিলেন ঠিকই। তবে মেসির মাঠের উপস্থিতিটা মোটেও বুঝতে দেননি সুয়ারেজ। ২০১৪ সালের মার্চের পর সুয়ারেজই প্রথম ফুটবলার হিসেবে এল ক্লাসিকোতে হ্যাটট্রিক গড়ার রেকর্ড করেন। তার আগে রিয়াল-বার্সিলোনার ঐতিহ্যবাহী এই লড়াইয়ে হ্যাটট্রিকটি ছিল লিওনেল মেসির। এল ক্লাসিকো মানেই বাড়তি রোমাঞ্চ। এই ম্যাচকে ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে তৈরি হয় বাড়তি উত্তেজনা। সুয়ারেজ অবশ্য গোল করার জন্য এই মঞ্চটাকেই যেন বেছে নিলেন। শুধু তাই নয়, এল ক্লাসিকোতে গোল করতে ভালও বাসেন এই উরুগুইয়ান। অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলে। ২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সিলোনায় যোগ দেন লুইস সুয়ারেজ। এরপর এল ক্লাসিকোতে সবচেয়ে বেশি গোল এসেছে তার পা থেকেই। এই সময়ে প্রতিপক্ষের জালে ৯ বার বল জড়িয়েছেন লুইস সুয়ারেজ। যেখানে মেসি-রোনাল্ডো করেছেন সমান পাঁচটি করে। অর্থাৎ বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের দুই মহাতারকার প্রায় সমান গোল একাই করেছেন সুয়ারেজ। তবে মেসিকে ছাড়া রবিবারের এল ক্লাসিকোর অনুভূতি কেমন? এমন প্রশ্নের জবাবে সুয়ারেজ বলেন, ‘দলের সেরা তারকা ম্যাচে থাকাটা সবসময়ই অতিরিক্ত সুবিধা। কিন্তু তাকে ছাড়াই আমরা কী পারি তা দেখিয়েছি। আমাদের দলটা দুর্দান্ত। অসাধারণ এক জন কোচ আছে আমাদের।’ বার্সিলোনার হয়ে মেসির অভাবটা ঠিকই পূরণ করেছেন সুয়ারেজ-কুতিনহো-ডেম্বেলারা। কিন্তু রোনাল্ডোর অভাবটা পূরণ করতে পারেনি বেল- বেনজেমা-রামোসদের কেউ। তবে ইতালিয়ান সিরি’এ লীগে ঠিকই জ্বলে উঠেছেন রোনাল্ডো। ২০০৯ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে সফল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন রোনাল্ডো। দীর্ঘ ৯ বছরের দারুণ জার্নি শেষে নতুন মৌসুম শুরুর আগেই লা লীগাকে বিদায় বলে দেন সিআর সেভেন। লা লিগা ছাড়ার পর কিছুটা সময় খারাপ কেটেছে তার। তবে সেই বাজে সময়টা খুব দ্রুতই কাটিয়ে ওঠেন রোনাল্ডো। একটু সময় নিয়েই স্বরূপে ফিরেছেন সিআর সেভেন। গত সপ্তাহে জেনোয়ার বিপক্ষে গোল করে নতুন এক মাইফলকও স্পর্শ করেন তিনি। ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লীগে ৪০০ গোল করার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন তিনি। এই তালিকার দুইয়ে রয়েছেন তারই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি। শুধু বার্সার জার্সিতে লা লীগায় এলএম টেনের গোলসংখ্যা ৩৮৯। মেসি এক ক্লাবের হয়ে করলেও রোনাল্ডোর গল্পটা একেবারেই ভিন্ন। ইউরোপের শীর্ষ তিন লীগে এই গোল করেন তিনি। ৪৮৭ ম্যাচ খেলে ৪০০তম গোল করেছেন সিআর সেভেন। প্রতি ম্যাচে তার গোল গড় ০.৮। এখানে মেসি এগিয়ে। বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের গোল গড় ০.৯২। সময় বদলায়, বয়স বাড়ে। পরিবর্তন হয় জার্সির রং। কিন্তু রোনাল্ডো অপরিবর্তনশীল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, স্প্যানিশ লা লিগার মতো ইতালিয়ান সিরিএ লীগেও দুর্দান্ত সিআর সেভেন। গত শনিবার এম্পোলির বিপক্ষেও দুই গোল করেন তিনি। পিছিয়ে পড়া জুভেন্টাসকে এদিন পেনাল্টিতে গোল করে সমতায় ফেরান রোনাল্ডো। পরবর্তীতে দলের জয়সূচক গোলটিও এসেছে সিআর সেভেনের পা থেকে। চোখ ধাঁধানো রকেট গতির শটে গোল করে জুভেন্টাসকে ২-১ ব্যবধানের জয় উপহার দেন এই পর্তুগীজ সুপারস্টার। সিরিএ লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের হয়ে দশ ম্যাচ খেলে প্রতিপক্ষের জালে সাতবার বল জড়িয়েছেন তিনি। এই সময়ে চার গোল অ্যাসিস্টও করেছেন। ম্যাচসেরা হয়েছেন আটবার! সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই তারকা ফুটবলার জুভেন্টাসেও প্রমাণ করে চলেছেন। তাও আবার ৩৩ বছর বয়সে। জাত চ্যাম্পিয়নরা তো এমনই হয়।
×