ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ দলিল উদ্দিন দুলাল

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে দুটি কথা

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে দুটি কথা

কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, কদম- এই গাছগুলো প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায়। এসব গাছ একত্রিত করলে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে না। এদের কোনটি বর্ষার কাজে লাগে, কোনটি দিয়াশলাই তৈরিতে কাজে লাগে, কোনটি গ্রামের মহিলাদের নানা কাজে লাগে। এরা নামে খুবই পরিচিত। কিন্ত সমাজের গুরুত্বপূর্ণ এবং অতীব প্রয়োজনীয় কোন কাজে লাগে না। এ গাছের তলায় অন্য গাছ থাকলে তাদের দাবিয়ে রাখে। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও বসন্তের ঋতুতে এদের ফুল হয়। শিমুল গাছ পরিবেশ নষ্ট করে, লাকরী হয়, বর্ষাকালে কাঠ মিস্ত্রিদের ডিঙ্গি নৌকা বানাতে হয়। কাঠুরিয়ারা নাম মূল্যে ক্রয় করে নিয়ে যায়। গাছের ডাল-পালা সবই একই রকম কাজে লাগে। এ গাছগুলো আশপাশের ছোট গাছগুলোকে সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত করে। এ গাছগুলোর ঐক্যের সাথে আমাদের দেশের কোন কোন রাজনীতিবিদদের জোট বা ঐক্যের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এই রাজনীতিবিদরা ভোটের জন্য জোট করে মৌসুমীদের নিয়ে। তেমনি আমাদের দেশের জোটের রাজনীতিতে তেমনি নেতার আবাদ দেখা যায়। যাদের রাজনীতির উঠানে দেখা যায়নি, তারা বড় বড় রাজনীতি নেতার ছবি দিয়ে দেয়ালে ওয়ালে বাজারে পোস্টার লাগিয়ে অনুষ্ঠান সাজানোর উপক্রম করে। তাদের চেনা যায় না, তাদের পোষ্টারের বড় বড় ছবির পাশে বড় বড় নেতানেত্রীর ছবি দেখানো হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তারা মৌসমী রাজনীতিবিদ। এরা নির্বাচন এলেই রাজনীতিতে সোচ্চার বস্তু। অনেকের আত্মীয়স্বজন ভিন্ন দল করত। তারা এখন নানা জোটের রাজনীতিতে পোষ্টার টাগিয়েছে। গত কয়েকটি নির্বাচনেও কিছু কিছু ভূঁইফোড় রাজনীতিবিদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এবারও তারা সোচ্চার। জনশ্রুতি আছে এরা অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারে দাঁড়ালে নির্বাচিত হতে পারবেন না। আসলে যারা জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন তাদেরই সক্রিয় রাজনীতি করা উচিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একদমই সন্নিকটে। ইতোমধ্যে দল গোছানো শেষ প্রায় সব দলের? প্রার্থীরা দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল বলতে আমরা দুটো দলকেই বুঝি। এক. মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী আওয়ামী লীগ আর দ্বিতীয়টি স্বাধীনতা বিরোধী পরিবেষ্টিত বিএনপি। এর পর জাতীয় পার্টি ও কয়েকটি বাম দল ছাড়া অন্য দলগুলো আমরা গভীরভাবে চিনি না। তবে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায় নিয়মিতই পত্র - পত্রিকার মাধ্যমে? এ দলগুলোর তোড়জোড় সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে? আওয়ামী লীগ বা বিএনপি দুই দলই তাদেরকে নিজেদের দলে ভেড়াতে চায়? কারণ তাতে যদি ভোট বাড়ে? আবার ছোট ছোট এসব দলগুলোর কর্তাব্যক্তিরা মিডিয়ায় বেশ পরিচিত? এদিক থেকে অনেকটা সুবিধা পাওয়া যায়? তবে মাঠের রাজনীতিতে এ দলগুলোর প্রভাব খুবই কম। বিগত কিছুদিন যাবত সবচেয়ে বেশী আলোচিত বিষয় হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের ডাক। ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরীসহ আরো কয়েকটি দল মিলে বিএনপির সাথে জাতীয় ঐক্য গঠন করে। বিএনপির মাঠের অবস্থা এখনও নড়বড়ে? তারা চাচ্ছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে? আওয়ামী লীগ বলছে তারা সংবিধান অনুযায়ী অর্থাৎ বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করবে। নির্বাচনের সময় খুবই কম এমতাবস্থায় তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড খুব আশাব্যঞ্জক নয়? তাই জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাবটা বিএনপি লুফে নেয়। জাতীয় ঐক্য পরবর্তীতে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে রূপ নিয়েছে ঐক্যফ্রন্টে? সম্প্রতি তারা কূটনীতিকদের সাথে আলোচনায় বসেছে। যদিও ঐক্যে ফাটল ধরেছে বিকল্পধারা চলে যাওয়ায়। ঐক্য হতে না হতেই ভাঙ্গন। ঐক্যে জামায়াতের প্রশ্নে বিকল্পধারার না। বি চৌধুরী জাতীয় ঐক্যে থাকবেন না যদি জামায়াত থাকে। জামায়াত এমনিতেও বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে। দলটির সাথে যুদ্ধাপরাধের কলংক রয়েছে। এ যাবতকালের বিএনপির যত আন্দোলন সবকিছুই চলেছে অনেকটাই জামাতের শক্তিতে। এদিক থেকে জামাতকে ছেড়ে দিলে খুঁড়িয়ে চলা বিএনপির জন্য হাঁটা চলাই কষ্টকর হবে? তাই জামাতকে ধরে রেখেছে বিএনপি? তার মানে বিএনপির জামায়াতের সঙ্গ ছাড়বে না কোন মতেই। অবশ্য ড. কামালের জামায়াতে আপত্তি নেই। তাই ড. কামালের জাতীয় ঐক্য এখন জামায়াতযুক্ত। জাতীয় ঐক্য সেই ধারাবাহিকতার ষোলকলা পূর্ণ করলো বলা যায়। ইতোমধ্যে তারা সিলেটে জনসভাও করেছে। আওয়ামী লীগ জাতীয় ঐক্যকে সাধুবাদ জানিয়েছে। তবে দলটি খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না এই জাতীয় ঐক্যকে। ফ্রন্টের দলগুলোর অনেকের নির্বাচনী প্রতীক সকল জনগণ চিনের না। এমন দলগুলো নিয়ে গঠিত ঐক্যফ্রন্ট কতটা কার্যকর হতে পারে আগামী নির্বাচনে। এই প্রশ্ন করাই যায়Ñ ভোটের রাজনীতিতে ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান কী? আসলে ড. কামাল হোসেন সাহেবরা জাতীয় ঐক্য করেছেন। আমড়া গাছের এবং মাদার গাছের মতো মানুষদের নিয়ে ঐক্য করলে তাদের এই ঐক্য অনৈক্যের সমান। কথায় আছে ‘সারা ঘর লেপে দরজায় কালি’। ড. কামাল হোসেন যেন এই অপবাদমুক্ত হন। লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ব্যাংকার
×