ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পপি দেবী থাপা

সময়ের গল্প ‘পূর্ণগ্রাসের কাল’

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

সময়ের গল্প ‘পূর্ণগ্রাসের কাল’

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় সিনেমোশনের উদ্যোগে আগামী ২৭ অক্টোবর, শনিবার বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তরুণ নির্মাতা জায়েদ সিদ্দিকির পূর্ণগ্রাসের কালের। প্রদর্শনীর আমন্ত্রণপত্রে উল্লিখিত ‘গণঅর্থায়নে নির্মিত’ এবং ‘গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ’ শব্দগুলো বাংলা চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনে আলাদা ভাবনার জোগান দেয়। গণঅর্থায়ন এবং গণমানুষের অধিকতর সম্পৃক্ততা ফিরিয়ে আনতে পারে চলচ্চিত্রের সুদিন। পূর্ণগ্রাসের কালের গল্পটা একটু ভিন্ন। গল্পে উঠে এসেছে বর্তমান সময়ের বাস্তব চিত্র। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা জায়েদ সিদ্দিকি বলেন, পূর্ণগ্রাসের কাল এক মুক্তিযোদ্ধা, চিত্রশিল্পী, লেখকের গল্প। ভাস্কর চৌধুরী, বয়স ষাটের কাছাকাছি। কাঁচাপাকা এলোমেলো চুল। লম্বা-চওড়া গড়ন। একজন প্রবীণ চিত্রশিল্পী ও লেখক। তিনি দুটি খেরোখাতায় সমাজের সুন্দর ও অসুন্দর ঘটনাচিত্র সংরক্ষণ করেন। ‘পূর্ণগ্রাসের কাল’ শিরোনামের সামাজিক অসঙ্গতির খেরোখাতাটি একবার রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যায়। আবার দশদিন পর রহস্যজনকভাবে ফেরতও পান। যেদিন ফেরত পান সেদিন জঙ্গীরা আসে তাকে হত্যা করতে। তারাই খেরোখাতাটি চুরি করেছিল। জঙ্গীরা তার অস্ত্রহীন যুদ্ধকৌশলের কাছে পরাজিত হয়। নিজের জীবন রক্ষায় তাদের হত্যা করার প্রয়োজন এবং সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি তাদের বাঁচিয়ে রাখেন। জঙ্গীদের আগ্রহ জন্মায় ‘আলোকদিনের গান’ খেরোখাতাটির প্রতি। তিনি তাদের নিঃশর্তভাবে মূল খেরোখাতাটি উপহার দিয়ে দেন। ছবিটিতে ভাস্কর চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন খ্যাতনামা অভিনেতা, বাচিকশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। পূর্ণগ্রাসের কালের গল্পের ভাবনা প্রসঙ্গে জায়েদ বলেন, পত্রিকা, টেলিভিশন খুললেই চারপাশের অস্থিরতা, গোলা-বারুদের ধোঁয়া, জঙ্গীদের হাতে নিরীহ মানুষের হত্যার বীভৎস চিত্র দেখতে পাই। কিছুদিন পূর্বেও লেখক তথা মুক্তচিন্তা এবং প্রগতিশীল ভাবনার মানুষের ওপর যে নির্যাতন এবং মর্মান্তিক হত্যার ঘটনাগুলো ঘটেছিল তা মনটাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সারাক্ষণই একটা ভয়, আতঙ্ক কাজ করত। রাস্তায় হাঁটলে কিংবা ঘুমের মধ্যেও দুঃস্বপ্নে আঁতকে উঠতাম। নিজের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ কাজ করত। তখনই ভেবেছিলাম এ বিষয়ের ওপর কাজ করব। নতুন প্রজন্মকে সঠিক ধারায়, সত্য ও সুন্দরের পথে পরিচালনা করার জন্য ‘পূর্ণগ্রাসের কালের’ ভাবনার যাত্রা শুরু। গল্পটি মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজন লেখক ও চিত্রশিল্পীর সৃজনবাদী যুদ্ধের জয়গাথা। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও অস্থিরতা একজন লেখক ও চিত্রশিল্পীকে বিধ্বস্ত করে তোলে। সন্ত্রাসবাদের শিকার হন তিনি নিজেও। কিন্তু মৌলবাদ ও সন্ত্রাস তাকে পরাস্ত করতে পারে না। উল্টো তিনিই মৌলবাদ ও সন্ত্রাসকে পরাস্ত করেন। চলচ্চিত্রটিতে শব্দ সম্পাদনায় রয়েছেন প্রয়াত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের অনুজ নাহিদ মাসুদ। ‘পূর্ণগ্রাসের কাল’ নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে জায়েদ বলেন, শিলিগুড়ি আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত হয়েছে ‘পূর্ণগ্রাসের কাল’। সেখানে ছবিটি প্রদর্শিত হবে ১৬ নবেম্বর। ছবিটিতে কলা-কুশলী যারা রয়েছেন... মূল ভাবনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা- জায়েদ সিদ্দিকী, গল্প ও সংলাপ- হেলাল মহিউদ্দিন, মূল চরিত্রে- জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, অন্যান্য চরিত্রে- কৌশিক সাহা, মনিরুজ্জামান মনি, কামাল আহমেদ, হীরা চাকমা, ফাতেমাতুজ জোহরা, খন্দকার বদরুল আলম, আবিদ এ আজাদ। সম্পাদনা- সামীর আহমেদ, শব্দ সম্পাদনা- নাহিদ মাসুদ, চিত্রগ্রহণ- পান্থ রহমান, শিল্প নির্দেশনা- শান্তনু হালদার, আবহসঙ্গীত- বিনোদ রায় দাস, সঙ্গীত পরিকল্পনা- জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গীত- দীপময় দাস। প্রযোজনা- সিনেমোশন, সহ-প্রযোজনা- বারাকা পাওয়ার।
×