ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত তারল্য বিনিয়োগের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

সরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত তারল্য বিনিয়োগের তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিভিন্ন কোম্পানির কাছে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থ এই বাজারে বিনিয়োগের তাগিদ দিয়েছেন স্টেকহোল্ডাররা। একইসঙ্গে আইপিও শেয়ারের দর ওঠানামায় সার্কিট আরোপের দাবিও জানানো হয়েছে। পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে স্টেকহোল্ডাররা এই তাগিদ দেয়। পুঁজিবাজারের সম্প্রতি অস্থিরতা তথা টানা পতনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সাইফুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশেন (বিএমবিএ), ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশন ও শীর্ষ ৩০ ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে একাধিক স্টেকহোল্ডার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্য নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি, বিশেষ করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পাওয়ার গ্রিড, পদ্মা ওয়েল, যমুনা ওয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কাছে বিপুল নগদ অর্থ রয়েছে। এই অর্থ তারা বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদী আমানত হিসেবে রেখেছে। কিন্তু তারা ব্যাংকে টাকা না রেখে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে সেখান থেকে ব্যাংক-সুদের চেয়ে বেশি অর্থ আয় করতে পারত। তাতে কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি বাজারও লাভবান হতো। বাজারের তারল্য সঙ্গট কিছুটা কমে আসত। তারা বলেন, শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে কোম্পানিগুলো মিউচ্যুয়াল ফান্ডে, বিশেষ করে আইসিবির ইউনিট ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। এসব ফান্ডের লভ্যাংশের হার ব্যাংকের সুদের হারের চেয়ে অনেক বেশি। ইউনিট ফান্ডে বিনিয়োগ করলে লোকসানের ঝুঁকি তো নেই-ই, বরং ব্যাংকের চেয়ে বেশি আয় করা সম্ভব। স্টেকহোল্ডারদের কেউ কেউ পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েলের কথা জোর দিয়ে উল্লেখ করেন। এই তিন কোম্পানির কাছে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ আছে, যা বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদী আমানত হিসেবে জমা রাখা। এই কোম্পানিগুলোও ইউনিট ফান্ডের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। এরা ইউনিট ফান্ড কিনলে আইসিবি ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছে যাবে ওই টাকা। তারা পরিকল্পিতভাবে ওই টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। অন্যদিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রথম কয়েকদিনের শেয়ার দরকে অস্বাভাবিক বলে অভিহিত করেছেন স্টেকহোল্ডাররা। তাদের মতে, তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত যে দামে শেয়ার কেনাবেচা হয়, তা মোটেও ওই শেয়ারের মৌলভিত্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর পেছনে কোন ধরনের কারসাজি থাকতে পারে। বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে বলেন, অযৌক্তিক উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে সেকেন্ডারি মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ মৌলভিত্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে ওই মূল্য টেকসই হয় না। কিছুদিনের মধ্যে ওই শেয়ারের দাম কমতে শুরু করে। কয়েক মাসের মধ্যে তা সর্বোচ্চ দামের চেয়ে ৫০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। তাতে বিনিয়োগকারীদের বিপুল মূলধনী লোকসান হয়। যার ফলে তাদের মনে পুঁজিবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে অনাগ্রহ। তাই আইপিও শেয়ার দরে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করার পরামর্শ দেন তারা। বাজারের মন্দাবস্থা না কাটলে নতুন করে আইপিও অনুমোদনের বিপক্ষে মত দেন তারা।
×