ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে চিকিৎসা নিয়ে রবিবার দুপুরে দেশে ফিরে সাকিব বললেন, খেলায় ফিরতে এক মাসও লাগতে পারে, আবার ছয় মাসও

মাঠে ফিরতে ৬ মাসও লাগতে পারে!

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

 মাঠে ফিরতে ৬ মাসও লাগতে পারে!

মিথুন আশরাফ ॥ ‘একমাস পরেও খেলতে পারি, আবার ছয় মাসও লাগতে পারে।’ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে চিকিৎসা নিয়ে রবিবার দুপুরে দেশে ফিরে কথাগুলো বলেছেন বিশ্বসেরা বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এক মাস লাগলে তো মহাখুশির খবর। কিন্তু ছয় মাস লাগলে? সেটি হবে চরম দুঃখজনক। সাকিবের খেলা শুরু করতে যে ছয় মাসও লাগতে পারে! সাকিব মুখে বলেছেন একমাসও লাগতে পারে। কিন্তু তিনি নিজেও জানেন, খেলা শুরু একমাসে কোনভাবেই করা যাবে না। সাকিব নিজেই তাই বলেছেন, ‘একমাস হয়তো হবে না। একটু সময় বেশিই লাগবে।’ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে খেলতে পারবেন না সাকিব তা নিশ্চিত। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজেও তার খেলা অনিশ্চিত। জানুয়ারিতে বিপিএল খেলার সম্ভাবনা থাকার কথা। যদি সাকিব একমাস বা দুইমাসেও পুরোপুরি ঠিক হতে পারেন। কিন্তু বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সাকিবকে কী সেই ঝুঁকিতে ফেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেখানেও ভাবার বিষয় আছে। তাতে দেখা যাচ্ছে সাকিব যদি প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরেন তাহলে হয়তো ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে ফিরতে পারেন। এরপর মে মাসে বিশ্বকাপ শুরু হবে। বাকি আছে আটমাস। যদি একমাসে ঠিক না হয়ে সাকিবের কথামতো ছয়মাস লাগে; তাহলে বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন তিনি। কিন্তু সাকিব নিজেই এ বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘এটা আসলে এমন একটা সমস্যা যেটার আসলে কোন টাইম ফ্রেম নাই। হতে পারে যে সামনের মাসেও খেলতে পারি। এখন আমার হাতে ব্যথা নেই। খুব ভাল অনুভব করছি। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমার হাতের স্ট্রেন্থ কতক্ষণে ফিরে আসে। রিহ্যাবের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে পারে। যদি আসে তাহলে সামনের মাসেও খেলতে পারি। আবার রিহ্যাবের পর যদি ব্যথা অনুভব করি তাহলে আবার ওয়েট করতে হবে যে কখন সার্জারি করতে পারব। এটা আসলে খুব আনসার্টেন। আবার একটা জিনিস ভাল যে ইনফেকশন হবার পর এখন সেটা কমে গেছে। এখন সার্জারি বাদেও খেলা যেতে পারে। যদি সেটা হয় তাহলে সেটা হবে সব থেকে বেস্ট অপশন। বাট এটা আসলে কনফার্ম বলাটা মুশকিল। আশাকরি একমাস পরই খেলতে পারব। তারপরও স্ট্রেন্থ আসার ব্যাপার আছে।’ সাকিবের কথাতেই স্পষ্ট। যে অবস্থা তাতে কোন কিছুরই নিশ্চয়তা নেই। নির্দিষ্ট কোন টাইম ফ্রেমই নাই আসলে। একমাস পর যে কোন মুহূর্ত থেকেই সাকিব খেলায় ফিরতে পারেন। আবার সেই ফেরার সময় আঙ্গুলের কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে অনেক দেরিতেও হয়ে যেতে পারে। তবে এ মুহূর্তে সাকিবের আঙ্গুলের অবস্থা অনেক ভাল। যেটি সুখবর হিসেবেই ধরা দিচ্ছে। সাকিব বলেছেন, ‘আপডেট ভাল। ইনফেকশন আন্ডার কন্ট্রোলে আছে। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে হবে। এটা আবার বাড়ল বা অন্য কোন সমস্যা হলো কিনা। এখন পর্যন্ত ইনফেকশন আন্ডার কন্ট্রোল।’ সার্জারি করার বিষয়টিও ৬ থেকে ১২ মাসেও সম্ভব নয়। এই সময়ের মধ্যে সার্জারি করা যাবে না। কেন? সেই ব্যাখ্যা দিলেন সাকিবই, ‘সার্জারি ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে করা যাবে না। করা যাবে না কারণ যদি ইনফেকশন বোনের ভেতরে থেকে থাকে সেটা আসলে সারার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওখানে ব্লাড যায় না। যেহেতু এ্যান্টিবায়োটিকে ব্লাডের মাধ্যমে ছড়ায়, যেখানে ব্লাড যায় না সেখানে এ্যান্টিবায়োটিক কিভাবে কাজ করবে। সো এটা সিউর হওয়ার জন্য ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে কোন সার্জারি করা যাবে না।’ তবে সার্জারি না করেও খেলা সম্ভব। সাকিব তাই জানালেন, ‘ভাল দিক হচ্ছে সার্জারি না করেও হয়তো খেলা সম্ভব হতে পারে। এখন যেহেতু সার্জারি করার সুযোগ নেই, আমি বলি আর ফিজিও’র পরামর্শে বলেন, ওই দিকটা চিন্তা করা হচ্ছে যে সার্জারি বাদে কিভাবে খেলা যায়।’ সাকিব খেলার জন্য ফিট হতে রিহ্যাব শুরু করে দিয়েছেন। সেটি অস্ট্রেলিয়া থেকেই শুরু হয়েছে। সাকিব বলেন, ‘আমি অলরেডি (রিহ্যাব) শুরু করে দিয়েছি। ওখানে (অস্ট্রেলিয়ায়) থাকতেই শুরু করেছি। ওখানে হ্যান্ড থেরাপিস্টকে দেখানো হয়েছে। উনি যেভাবে বলেছেন সেভাবে ফলো করে করে কাজ করতে হবে। যত বেশি করা যাবে তত আমার জন্য ভাল। যত বেশি করে স্ট্রেন্থটা আবার আনা সম্ভব সেটাই এখন মেইন উদ্দেশ্য।’ সাকিবের সঙ্গে তামিম ইকবালও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে খেলবেন না। খেলতে পারবেন না। তাহলে বাংলাদেশ কী ভাল কিছু করতে পারবে? সাকিবের বিশ্বাস পারবে, ‘এটা আসলে স্পোর্টসের পার্ট। একজন দুইজন খেলোয়াড় সবসময় ফিট থাকবে না। সবসময় খেলতেও পারবে না। সুবিধা হচ্ছে নতুন নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ আসে। আশাকরি তারা কাজে লাগাতে পারবে এবং ভাল করবে। সত্যি কথা বলতে কারও জন্য কোন কিছু অপেক্ষা করে না। আমি আশাকরি বাংলাদেশ আরও ভাল করবে। আমি ও তামিম ছাড়া যদি এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলতে পারে তাহলে জিম্বাবুইয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে না জেতার কোন কারণ দেখি না।’ অস্ট্রেলিয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ গ্রেগ হয়ের কাছে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন, আঙ্গুল শতভাগ ঠিক হবে না। দেশে এসেও তাই বললেন, ‘হানড্রেড পারসেন্ট আর ঠিক হবে না সেটা তো সত্যি কথা। যেটাই করুক এটা হানড্রেড পারসেন্ট ঠিক হবে না। এরকম অনেকেরই আছে। আর ঠিক না হলে যে খেলতে পারব না এমনটাও নয়। বলা মুশকিল যে কবে জেনেছি। সার্জারির যে অপশনগুলো ছিল সেগুলো করলেও যে হানড্রেড পারসেন্ট ঠিক হবে না সেটা জেনেছি। এখন খুবই ভাল। কোন প্রবলেম ফেস করছি না। শুধু টাইমের ব্যাপার কতদিনে আমার স্ট্রেন্থ ফিরে আসে। কনফার্ম হতে হবে যে আঙ্গুলে আর কোন ইনফেকশন আছে কিনা। সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’ জিম্বাবুইয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের সঙ্গে বিপিএলেও খেলা হবে না সাকিবের। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কথায় সেই ইঙ্গিতই মিলে। বিশ্বকাপে পুরো ফিট সাকিবকে চান বিসিবি সভাপতি। তাই প্রয়োজনে বিপিএলে সাকিবকে না খেলানোর সিদ্ধান্তই নেয়া হতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে কোন কিছু বলতে নারাজ। এ বিষয়ে তার ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিভাবে দেখব ভাই। কোনভাবে দেখার আছে বলে তো মনে হয় না।’
×