ভুলের অনুষঙ্গ থেকে
রাহমান ওয়াহিদ
ভুলের অনুষঙ্গ থেকে তুলে নিচ্ছি ঘর বসতি
নোঙরের নৌকো থেকে জলের বিষণœতা
ভাসা ভাসা চোখ থেকে রাহস্যিক শব্দাবলী
আর নিচ্ছি রক্তানু থেকে প্রাত্যহিক জাগতিকতা।
নিঃশেষের তলানি থেকে জেগেছে যে ভঙ্গুর নারী
তারাও ডুবোডুবি ছেড়ে মেতেছে প্রযুক্তি খেলায়।
ভুলভালের কাটাকাটি ছেড়ে প্রাচীন প্রণয়ের
প্রথম পাঠ নিচ্ছে হয়তো বা কেউ জলজ শূন্যতায়।
যেভাবেই বলি বা না বলি, আমাদের দ্বিপ্রাহরিক স্থূল ধ্বনি
সবুজ সন্ধে বেলারই নৈসর্গিক মৃদঙ্গ বাজন
দু’হাতে যা কিছু হারাই, রাত কামনার দহন বমনে
সে সবই ফিরে ফিরে আসে পাথুরে ফ্রেমের ন¤্র বাঁধনে।
** শরতের নীল জোছনায়
সোহরাব পাশা
শরতের নীল জোছনায় ভেসে গেছে সব গান
জানালা খোলেনি মেয়ে কড়া নাড়ে নির্বাসিত স্বপ্ন,
স্মৃতির কুয়াশা গাছ থেকে উড়ে আসে ফুল পাতা
নষ্ট জলে ভাসে মৃত চাঁদের কঙ্কাল
পাখিরাও ভুলে গেছে মেঘলা দিনের কোলাহল
নেই সেই দুপুর বেলার ভেজা ছায়া পাতার নিভৃতির আলো
বরাব বাজারের অদূরে এখনও কী কুঞ্জতলার ধূসর
ঘাসে লেগে আছে-
তোমার হাসির ঘ্রাণ; অকারণে শব্দহীন বসে
থাকা রেললাইনে গহীন শব্দের ভূগোল খোঁজা দীর্ঘ পাঠ
ফিরবে না তুমি যেখানে তোমার ছায়া পড়ে আছে
মুখরিত বাসনার প্রসন্ন আলোয়
আমি তো এখনও খুঁজে মরি হাসির টুকরোগুলো
যা তুমি নির্জন অন্ধকারে ফেলে গেছো
অন্য কোথাও জায়গা ছিল না বলে এই
ভাঙা হৃদয়ে, তাই তো এতো খোঁজাখুঁজি
ভুলে গেছো সময়ের জলের ম্যাকাপ।
** জীবন অনেক বড়
দুলাল সরকার
জীবন অনেক বড়
দুলাল সরকার
ঝর্ণাকে বলেছি, এইটুকু ঝরো
এইটুকু শব্দ করে পাহাড়কে বলো
এর চেয়ে বেশি যেন না হয় আকাশ
পরিধিটা সুনিশ্চিত করো,
এইভাবে নদীকেও বলো... থাকে যেন
নির্দিষ্ট প্রণয়, সমুদ্রের প্রতি তার
সীমিত আগ্রহ... সীমিত ভাবনায়
তেপান্তর যেন থাকে সীমার ভেতর,
সব আকুলতা মনের কাঁপন বৃষ্টির প্লাবন
শ্রাবণের ঢল, মেঘাবৃত জলের গতর
যেন আয়ত্তের ভেতর থাকে ,
রৌদ্র ও মেঘের খেলা ঝরো ঝরো
রৌদ্রের প্রহর কিংবা সময় প্রবাহ
বনসাই স্বাধীনতা...
ইচ্ছের সীমানাটা চিহ্নিত কর
তা কি হয় বল, জীবনটা বড়।
** প্রান্তজনের পা-ুলিপি
[প্রিয় আতিউর রহমানকে]
শতাব্দী জাহিদ
পুরনো ঠা-া জমানো শহুরে বাতাসে জমে যাওয়া ভাদ্রের রবির সকালে
সোনালি লিকারে বুদ হয়ে সিলিং ছোঁয়া ধোঁয়ায় তাকিয়ে, বললেÑ
হাওড়ের জলে প্যাঁক প্যাঁক পাখোয়াজে একপাল হাঁস
ডুবে ডুবে মুখে তোলে শামুক, কেঁচো, পোনা মাছ, ঘাস ফড়িং, পোকাদের দল।
হেমন্তের ফরসা বাতাস আইল বেয়ে ঘরে ফেরে
এস এম সুলতানের শক্তিমান পেশির ক্লান্তিহীন হাসিমুখ কৃষকের পানে
দূরের উঠানে ঘামে ভেজা কৃষাণির লাজুক চোখ;
পায়ের নগ্ন নৃত্য ছড়ায় অহঙ্কারের এবাদতি ঘ্রাণ।
শীতের লাকড়ির আগুন সকালে
বুড়ি, মা-দাদির গা ঘেঁষে পিড়ি পেতে জুড়ে দেয় রূপকথার কিচ্ছার হাট
তাল রাখে বাজানের বাজারফেরা প্যাডেলের থামা ডাক
কুয়াশা উঁকি দেওয়া মিঠাই রোদেÑ
বুকের পাঁজরে বাঁধে সদ্য পাওয়া রঙিন মলাটের বই-খাতা
সাইকেলের ডানায় উড়ে বুড়িরা সব দল বেঁধে বাজায় স্কুল ঘণ্টা।
** বুলেটবিদ্ধ শরীর
আতিক আজিজ
এ বিপন্ন দুপুরে চারদিকে ওড়াউড়ি করে শিমুল তুলো
হৃদয়, বীজপত্র ও ধানের শীষ, শূন্য বাড়িঘর, পশুর খোঁয়াড়।
কয়েক শ’ বুলেটবিদ্ধ এ শরীর, টানটান পেশী,
এমনভাবে বসে আছে যেন চুলের ভাঁজে লুকিয়ে আছে সাপ ও নদী,
এসব বেদনার গোপন রক্তস্রোতে, বিলাস থেকে দূরে
একতারার সুর শোনা যায়, অন্যকিছু শোনা যায় অন্যবুকে,
মুহূর্তে পটভূমি পাল্টে যাওয়া এ সময়, জটিল ভাঁজ
কীটনাশক হৃদয় ঔষধ ও বিজ্ঞাপন।
অস্ত্র ও বর্বরতার আদিম মন্ত্রবলে ভেসে যাচ্ছে আমার প্রফুল্লমালা
গোরাঘাটি, লাটিয়াছাড়া নিলয়, সুতারমুড়া, বংশীবাড়ী
আমার হেঁটে যাওয়া পথ, স্বপ্নকুমারী ও প্রিয় বেলীফুল,
প্রতিদিন পার হওয়া নদী, উঠানে বিছিয়ে রাখা কাঠআলুর
সাদা গুঁড়ো লাল হচ্ছে, ক্রমশ স্বপ্নে গলে পড়ছে
রাবার গাছের ঠুলির ভেতর, জমা হচ্ছে ঠুলির
মতো জঙ্গলের খোড়লের ভেতর।
** সাদৃশ্য
সোমের কৌমুদী
প্রতিদিন ওকে দেখি আমি
মাঝে মাঝে ঘুমের মাঝেও।
আসলে ওর ডাকে ঘুম ভাঙলে প্রথমেই ওকে দেখি।
ওকে দেখি- আমার সঞ্চিত প্রিয় বইগুলোর উপরে
মাঝে মাঝে ও এসে বসে আমার পাশে বিছানার ওপরে।
সঙ্গীকে হারানোর বেদনা দেখি নি ওর মুখে
হত্যাকারী জেনেও জিঘাংসু চোখে তাকায়নি আমাকে।
ও শুধু খোঁজে খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ আর
পুরনো কিংবা নতুন বই নতুবা এক টুকরো পেপার।
সঙ্গী হারানোর ব্যথা ব্যথিত করেনি ওকে,
প্রেমের চেয়ে বেঁচে থাকার তাগিদ যেমন
চালিত করে মানুষকে।
শীর্ষ সংবাদ: