ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় হবে ৩২ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা

ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া কারখানাসহ ২০ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১০ অক্টোবর ২০১৮

ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া কারখানাসহ ২০ প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৃষকের স্বার্থে সার উৎপাদনে দৃষ্টি দিচ্ছে সরকার। দেশে পর্যাপ্ত সার উৎপাদন না হওয়ায় কৃষকের চাহিদা পূরণে প্রতি বছরই আমদানি করতে হয়। এতে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তাই কৃষক পর্যায়ে সারের যোগান ঠিক রাখতে সরকার আরও একটি ইউরিয়া সার কারখানা নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে কমাতে চায় আমদানিনির্ভরতাও। এ জন্য ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সরকারী খরচ ধরা হয়েছে ১৮৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর সংস্থার (বিডার্স ফাইন্যান্স) ব্যয় হবে ৮৬১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ঘোড়াশালÑপলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কারখানাসহ ২০ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। ২০টি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৫২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ১৫ হাজার ৪৯৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন হবে ১১ হাজার ৬৫৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫ হাজার ৩৭৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা দেয়া হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম এবং আইএমইডির সচিব মফিজুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানসহ অন্যরা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় ১৯৭০ সালে দৈনিক ১৪০০ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন ঘোড়াশাল ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি এবং একই স্থানে ১৯৮৫ সালে দৈনিক ৩০৫ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয়। কারখানায় দুটি দীর্ঘদিন উৎপাদন থাকায় যন্ত্রপাতি পুরাতন ও জরাজীর্ণ হয়ে পরিচালন ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়ে অলাভজনক হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এই দুই কারখানায় ৬৪ দশমিক ৭ এমএমসিএফ গ্যাস ব্যবহার করে দৈনিক এক হাজার ৫০ মেট্রিক টন সার উৎপাদন করা হয়। অথচ একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে দৈনিক দুই হাজার ৮০০ মেট্রিক টন সার উৎপাদন করা সম্ভব। এ অবস্থায় দুই কারখানার কাছেই নতুন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দেশে সারের চাহিদা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৬-৩০ লাখ মে.টন। এর বিপরীতে বিসিআইসির আওতাধীন ৬টি কারখানায় বার্ষিক মোট উৎপাদন হচ্ছে ৯-১০ লাখ মে.টন। প্রায় ১৭-২০ লাখ মে.টন ঘাটতি থাকার কারণে প্রতি বছরই সার আমদানি করতে হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সার আমদানি আরও প্রায় ৮ লাখ মে.টন কমানো সম্ভব হবে বলেও জানান মন্ত্রী। চলতি অর্থবছরে শুরু করে ২০২২ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় শিল্প মন্ত্রণালয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গৃহীত এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) বাস্তবায়ন করবে। এদিকে, চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল ঢাকায় আসবে পাইপলাইনে। জ্বালানি তেল সহজ, সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনের জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের এই পাইপলাইন কুমিল্লা ও চাঁদপুরেও যাবে। এতে করে সিস্টেম লস কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। একনেকের সভায় এটিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। যার পুরোটাই নিজস্ব সংস্থার মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী ব্রিফিংয়ে জানান, পেট্রোলিয়াম পণ্যের বর্তমান বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৫৮ লাখ মে.টন। গ্যাস সঙ্কটের ফলে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। ঢাকা ও তদসংলগ্ন এলাকায় বর্তমানে জ¦ালানি তেলের চাহিদা ১৫ লাখ মে.টন। যা গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে কোস্টাল ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে গোদনাইল, ফতুল্লা এবং চাঁদপুরে জ¦ালানি তেল সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে ৯০ শতাংশ জ¦ালানি সরবরাহ করা হয় নদী পথে। যেখানে বছরে প্রায় ২০০টি কোস্টাল ট্যাঙ্কার নিয়োজিত। তবে দিন দিন নদীর নাব্যতা কমার কারণে কোস্টাল ট্যাঙ্কার চলাচলে বিঘেœর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও নদীপথে জ¦ালানি সরবরাহের কারণে পরিবেশগত প্রভাবতো আছেই। ভবিষ্যতে জ¦ালানির নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করতেই এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। এছাড়াও মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, পুরাতন যেসব রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট রয়েছে সেগুলো যাতে ভাঙ্গা অবস্থায় না থাকে। অর্থাৎ আগের অবস্থায় যাতে ফিরে যায়। সড়ক উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী। একনেক সভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ¦ালানি তেল পরিবহন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। জরুরী সহায়তা প্রকল্প বিআরবি অংশ (কক্সবাজার আশ্রয়গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য বিদ্যুতায়ন) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট (আরসিআইপি) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ইমারজেন্সি এ্যাসিসটেন্স (এলইডি অংশ) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৯৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠাইন উপজেলাধীন নির্মিতব্য মিঠামইন সেনা উপস্থাপনা এর ভূমি সমতল উঁচুকরণ, ওয়েভ প্রটেকশন ও তীর প্রতিরক্ষা কাজ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩০৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম জেলাধীন রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী ও ইছামতি নদী এবং শিলক খালসহ অন্য খালের উভয় তীরের ভাঙ্গন হতে রক্ষা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৯৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলায় তিস্তা নদীর ডান তীর ভাঙ্গন হতে রক্ষা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৬৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ক্রস বর্ডার রোড নেটওর্য়াক ইমপ্রুভমেন্ট (বাংলাদেশ) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গোবিন্দগঞ্জ- ঘোড়াঘাট -বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নতিকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮৮২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক (এন-১) উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৫৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি (সংশোধিত ৪৬টি) উপজেলা সদর স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪১৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এই প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই সব উপজেলায় একটি করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকুক। যাতে করে যে কোন দুর্ঘটনায় জনগণকে দ্রুততার সঙ্গে সহায়তার হাত বাড়াতে পারে। এছাড়াও অনুমোদন পেয়েছে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। যার খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, একনেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পড়ালেখার সুবিধার জন্য জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে ক্লাস রুমে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। এছাড়া এখন থেকে পুরনো সিটি কর্পোরেশনগুলোতে আর সরকারী অর্থে প্রকল্প দেয়া হবে না। তাদের স্বাবলম্বী হতে হবে। জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমাদন দিতে গিয়ে তিনি এ নির্দেশনা দেন বলেও জানান মন্ত্রী। একনেকে আরও অনুমোদন পেয়েছে শহীদ এম. এনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সিরাজগঞ্জ স্থাপন প্রকল্প যার খরচ ধরা হয়েছে ৮৮৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ১২টি ক্যাডেট কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধাদি সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলা) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৬৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৫নং গুদারাঘাটের নিকট শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর কদমরসুল ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৯০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক কাম বেড়িবাঁধ প্রতিরক্ষা এবং নিষ্কাশন প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৫৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
×