ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ এশিয়া কাঁপিয়ে ঘরে ফিরল বাঘিনীরা

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ৯ অক্টোবর ২০১৮

দক্ষিণ এশিয়া কাঁপিয়ে ঘরে ফিরল বাঘিনীরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দক্ষিণ এশিয়া কাঁপিয়ে-জয় করে সোমবার ভুটান থেকে ঢাকা ফিরেছে বাংলার বাঘিনীরা। তারা জিতেছে সাফ অ-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে রবিবার অনুষ্ঠিত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে তারা ১-০ গোলে নেপালকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। সোমবার বিমানযোগে ঢাকায় আসার পর সেখানে তাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বাফুফের দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। রসিক ফুটবলপ্রেমীরা মন্তব্য করেছেন, ‘ঘোষণা স্বর্বস্ব ক্রীড়া উপমন্ত্রী আগের দু’বার মেয়েদের পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবার কেন বিমানবন্দরে গেলেন না? এর মানে কি আগের দু’বারের প্রতিশ্রুতির টাকা মেয়েদের এখনও না দেয়ার লজ্জাতেই এবার বিমানবন্দরে যাননি?’ এদিকে জানা গেছে, ভুটান-জয় করা বাংলার বাঘিনী এবং সব কোচিং স্টাফদের আগামী বৃহস্পতিবার এক সংবর্ধনা প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেয়েদের এই সাফল্যের নেপথ্য কারিগর যিনি, সেই গর্বিত কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ভাসছেন প্রশংসার জোয়ারে। এ নিয়ে মেয়েদের বয়সভিত্তিক ফুটবলে সাতবার শিরোপা জিতলেন কোচ হিসেবে। কোন সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের কিংবদন্তি কোচ হিসেবে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়ে ফেলেছেন ছোটন। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত যে সাত শিরোপা জিতেছি মেয়েদের দলের কোচ হিসেবে, সেগুলোর মধ্যে কোনটা গুরুত্বের বিচারে সেরা, সেটা বলা মুশকিল। আসলে সব শিরোপাই আমার কাছে স্পেশাল।’ সাফ অ-১৫ এবং অ-১৮ আসর এবারই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে (আগস্টে ও অক্টোবরে)। দুটিতেই বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নতুন আসরে খেলতে নেমেই চ্যাম্পিয়ন হওয়া, এই সাফল্যের রহস্য কি? ছোটন বলেন, ‘বিশেষ কোন রহস্য নেই। মেয়েরা একসঙ্গে অনেকদিন ধরেই আছে এবং কঠোর পরিশ্রম করছে। সেটারই প্রভাব পড়েছে মাঠে।’ ছেলেদের আগে মেয়েরাই বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপে খেলবে বলে বিশ্বাস করেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। এ ব্যাপারে ছোটনের মন্তব্য কি? ‘অ-১৪, ১৪, ১৬ ও ১৮ আসরে মেয়েরা সাফল্য পেয়েছে। এভাবে ধারাবাহিকতা-একাগ্রতা ধরে রাখতে পারলে অবশ্যই তারা একসময় অ-২০ বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। ওদের যদি ঠিকমতো পরিচর্যা করা যায়, সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায়, তাহলে অবশ্যই তাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’ ছোটন আরও যোগ করেন, ‘আমরা এখন শুধু দক্ষিণ এশিয়ান জোনেই নয়, আসিয়ান জোনেও প্রাধান্য বিস্তার করছি এবং সাফল্য পাচ্ছি। এই পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে আমরা সঠিক পথেই আছি। আমাদের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে আমাদের হাতে নতুন-পর্যাপ্ত খেলোয়াড় আছে। তাছাড়া প্রতিবছরই বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে নতুন মেধাবী খেলোয়াড় যুক্ত হচ্ছে। এভাবে আমাদের পাইপলাইন আরও শক্ত হচ্ছে। ফলে আশা করা যায় আমাদের জন্য অদূর ভবিষ্যতে আরও ভাল কিছু অপেক্ষা করছে। এ নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী।’ ছোটন আরও বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের বেশিরভাগই একই সময়ে অ-১৪ থেকে শুরু করে অ-১৮ পর্যন্ত একসঙ্গে খেলছে। অবধারিতভাবে তারা যুবদল ও সিনিয়র দলে খেলবে। এক্ষেত্রে আমাদের উচিত হবে তাদের ব্যাকআপ দেয়ার জন্য আরও ৩-৪টা জুনিয়র ব্যাচ তৈরি করা, যারা সিনিয়রদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে।’ গত আগস্টে এই ভুটানের মাটিতেই সাফ অ-১৫ আসরের ফাইনালে ভারতের কাছ ০-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। ওই দলের ১৩ ফুটবলার এবার অ-১৮ আসরেও খেলেছে। অ-১৮ আসরের ফাইনাল খেলতে নামার আগে কি আগস্টের হারের স্মৃতি ফিরে আসেনি খেলোয়াড়দের মনে? ছোটন বলেন, ‘অবশ্যই। তবে এই স্মৃতি যেন তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, সেজন্য ওই ফাইনালের কথা বলেই বরং তাদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছি। আর ১০টা ম্যাচ খেললে ১টা ম্যাচ হারতেই পারি, এ নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই।’ সাফ অ-১৮ আসরে নেপালকে গ্রুপ পর্বেও হারিয়েছে মৌসুমীরা। তবে ওই ম্যাচে নেপাল অনেক ফাউল করে খেলে। এ প্রসঙ্গে ছোটন বলেন, ‘নেপালকে ধন্যবাদ যে তারা এভাবে খেলে আমাদের একটা শিক্ষা দিয়েছিল। ফাইনালেও একই পন্থা অবলম্বন করেও তারা কিন্তু আর পারেনি। কারণ সেজন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম।’ ছোটনবাহিনীর পরের মিশন এএফসি অ-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব, তাজিকিস্তানের দুশানবেতে। খেলা শুরু ২৪ অক্টোবর থেকে। ‘ডি’ গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া, চাইনিজ তাইপে এবং তাজিকিস্তান। শেষের দুটি দল বাংলাদেশের জন্য তুলামূলক সহজ হলেও কোরিয়া অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ বলে মনে করেন ছোটন। তাদের বিপক্ষে ভাল খেলাই তার লক্ষ্য।
×