ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদ

সব পথ যাবে মিশে ভোট কেন্দ্রে

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ৮ অক্টোবর ২০১৮

সব পথ যাবে মিশে ভোট কেন্দ্রে

নির্বাচন মানে আর কিছু নয়, জনতার কাছে যাওয়া আর তা শুধুই যাওয়া নয়, তাদের মতামত গ্রহণই মুখ্য। জনতার রায়ই আসল কথা। কারণ, জনগণই নির্বাচিত করে কে তার প্রতিনিধি হবেন। আশা-ভরসা, ইচ্ছে-আকাক্সক্ষা পূরণে হবেন রথী। জনগণের সেবা প্রদান করবেন যিনি নিবিষ্টচিত্তে, উদারনৈতিক ধারায়। তার প্রতিই তো ঝুঁকবে মানুষ। ব্যক্তি মানুষ তো শুধু ব্যক্তি নয়, একটি রাজনৈতিক দল ও শক্তির অনুষজ্ঞও। দলীয় সংঘ শক্তির নীতি, আদর্শকে ধারণ করেই ব্যক্তির পথচলা। যিনি দলের চিন্তা-ভাবনা, নীতি-নৈতিকতার ঘেরাটোপে আবদ্ধ থেকে সেই ধারায় জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে আসেন। শুধু প্রকাশ নয়, তাকে বাস্তবে রূপদানের কাজটিও এই ব্যক্তি নেতার। রাজনীতির যে বিশাল দিগন্ত, তার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি জনমানুষের প্রতিনিধি হয়ে জনমানুষের প্রতি কর্তব্যবোধে তাড়িত হয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়ন এবং অগ্রগতির রথকে টেনে নিয়ে যান। এটা তো বাস্তব যে, একটি দল বা জোটকে জনগণ ভোট দেয়, তাদের অধিকার রক্ষা এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্যই। একটি দল বা জোট ক্ষমতায় আসে কতিপয় প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে। এ কারণে রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগেই দলীয় ইশতেহার বা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে, যা জনগণের কাছে তুলে ধরে দলের প্রতি জনগণের আস্থা অর্জন করতে চায়। এই ইশতেহার যে দুটি মূল বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি হয়, তা হচ্ছে দেশ ও জাতির উন্নয়ন এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা। তখন জনগণ যে দলকে তুলনামূলকভাবে ‘কমিটেড’ বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মনে করে, তাকেই ভোট দেয়। অবশ্য বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারের প্রতি ভোটারদের মনোযোগ সহজে গড়ে ওঠেনি। পাকিস্তান পর্বের শেষ দিকে বাঙালী শেখ মুজিব ও তাঁর দল আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল ছয় দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। ছয় দফাকে বঙ্গবন্ধু বাঙালীর মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিভাত করতে পেরেছিলেন। এই ছয় দফার ভিত্তিতেই ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করেছিল। জনগণের কাছে তা পৌঁছে দেয়ার কাজটি সুচারুরূপে করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। ছয় দফা ছিল বাঙালীর স্বাধিকার এবং বাংলার স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখা। জনগণ ছয় দফাকেই গ্রহণ করেছিল মনেপ্রাণে মুক্তির দিগন্ত খুঁজে পাবার সম্ভাবনা থেকে। মুক্ত মানুষের স্বাধীনতা অধিকার বোধ সঞ্চারিত করে দিয়েছিল এই ছয় দফা, যা স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হয়েছিল, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ পর্বে প্রথম যে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭৩ সালে, তাতে জনগণ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দলকে নিরঙ্কুুশ বিজয়ের পথে নিয়ে গিয়েছিল। শোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্নসাধ তখন প্রতিটি বাঙালী অন্তরে ধারণ করেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাকে যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে তুলে আনার জন্য বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকার নির্বাচিত হয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশ গড়ার কাজে। তিন বছর সময় চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু জনগণের কাছে। এই সময়ের মধ্যে বিধ্বস্ত দেশ আবার গড়ে উঠেছিল নতুন রূপে। রাজনৈতিক মতবাদে ততদিনে এসে গেছে অনেক পরিবর্তন। রাষ্ট্রীয় মূলনীতির আলোকে দেশকে এগিয়ে নেয়ার কাজে রাজনৈতিক আদর্শেও এসেছিল গুণগত পরিবর্তন। কিন্তু জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে ধূলিসাত করে সোনার বাংলাকে আবার শ্মশান বাংলা পরিণত করার ষড়যন্ত্র সফল হয়। স্বাধীনতা অর্জনের সাড়ে তিন বছরের মাথায় হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে খুনীরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নেয়। অরাজনীতির কাছে পরাজয় ঘটে রাজনীতির। বহিরাগতের কাছে পরাজয় ঘটে এস্টাব্লিসমেন্টের। একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোর্দ- প্রতাপ শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করা কতিপয় ক্ষমতালোভীর সহযোগিতায়। বঙ্গবন্ধুর গড়ে তোলা দেশ তার হারিয়েছিল গৌরব। পাকিস্তানী ভাবধারায় দেশকে ফিরিয়ে নেয় দুই সামরিক জান্তা শাসক। ক্ষমতা দখল করেই তারা আইয়ুব-ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মায় পরিণত হয়। সামরিক শাসন জরুরী অবস্থা সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন ইত্যাকার ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটতে থাকে। জনগণের মৌলিক অধিকার এমনভাবে ভূলুণ্ঠিত হয় যে, ভোটাধিকারও হরণ হয়ে যায়। ভুয়া ভোটারের বাড়ে প্রাধান্য। ভোটারবিহীন নির্বাচনে শাসকের মতোই প্রতিফলিত হয়। হানাহানি, সংঘর্ষ, ভোটার নিপীড়ন, ইত্যাকার যত নির্বাচনবিরোধী কর্মকা- রয়েছে, সবকিছুরই ঘটানো হয় অবতারণা। নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো বা ইশতেহারের অবস্থান হয়ে যায় বাহুল্য। পেশিশক্তি, অস্ত্রশক্তির কাছে ইশতেহার হয়ে পড়ে অপ্রয়োজনীয়। সেসব এদেশের মানুষের স্মৃতিতে এখনও অমলিন। ধ্বংস হয়ে যাওয়া নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম, জেল-জুলুম, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এদেশের জনগণের কাছে নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক রাষ্ট্রীয় মৌলিক বিষয় এখানে জড়িত থাকে। জনগণের অধিকার নিশ্চিত হয় অবাধ, স্বচ্ছ ভোটের মাধ্যমেই। সেই অধিকার যখন কেড়ে নেয়া হয়, জনগণ বুঝতে পারে একটা অন্ধকার সময় এখন তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন হয়। অথচ সেই নির্বাচনে জনগণ যদি তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে না পারে, তবে তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। বেঁচে থাকার অধিকারও হয় ক্ষুণœ। সেই অধিকার রক্ষা বা ফিরিয়ে আনার জন্য এদেশের মানুষকে অনেক রক্তও ঝরাতে হয়েছে। বিসর্জন দিতে হয়েছে প্রাণ। ‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক’ বলে কোটি কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত স্লোগান ফিরিয়ে দিয়েছিল ভোটাধিকার, সেই ভোটাধিকার রক্ষার কাজটি এখনও সম্পূর্ণ হয়েছে বলা যাবে না। কারণ কতিপয় রাজনৈতিক দল ভোটাধিকার নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবায়নের জন্য জনগণের কাছে না যেয়ে বরং বিদেশীদের কাছে ধরণা দিয়ে আসছে। যেন বিদেশীরা, এমনকি জাতিসংঘ তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেÑ এমন উদ্ভট ভাবনা তাদের মস্তিষ্ক প্রসূত হলেও জনমনে বিভ্রান্তি তৈরিতে তা কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে অনেক ক্ষেত্রে। এমন অনেক দলও রয়েছে, যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এমনকি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছিল শুধু নয়, বাঙালী নিধন বা গণহত্যা চালিয়েছিল। তারা দেশের পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করতে চায়। তারা স্বাধীনতার ইতিহাসকেও মুছে দিতে বদ্ধপরিকর। স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এখনও সংহত হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিরা মাঠে শক্তিমত্তা নিয়ে নানা গোলযোগ বাধিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মপ্রাণ ও ধর্মভীরু মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সচেষ্ট। এরা বিদেশী শক্তির সহায়তা পেয়ে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থানের জন্য এরা জনগণের কাছে অদ্যাবধি ক্ষমা চায়নি। বরং প্রশ্রয় পেয়ে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডারের গড়া দলের কাছ থেকে। এই কমান্ডার আবার জাতির পিতা হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ যুক্ত বলে প্রচলিত রয়েছে। এই শক্তিরা বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে চায়। সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াতে এদের নেত্রী তো দীর্ঘকাল বলে এসেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি শোনা যাবে। আরও এগিয়ে তিনি বলে আসছেন, আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রি করে দিতে চায়। এসব কথাবার্তা উদ্ভট শোনালেও এর পেছনে যে তাদের হিংসাতুর মনোভাব কাজ করে, তা সহজেই অনুমেয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গত সাড়ে নয় বছর ধরে। অথচ দেশ বিক্রিও হয়নি। উলুধ্বনিও শোনা যায়নি। বরং দেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এমন স্থানে পৌঁছেছে, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবার পথে ইতোমধ্যে যাত্রাও করেছে। নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর কাছে ‘রোল মডেলে’ পরিণত হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার বিস্তার, গড় আয় ও আয়ু বেড়েছে। আওয়ামী লীগ গত নির্বাচনে যে ইশতেহার প্রকাশ করেছিল, তার প্রায় সবই বাস্তবায়ন করেছে বা করছে। কিন্তু এদেশের কথিত সুশীল বা শিক্ষিতজনরা দলটির এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা ইশতেহার বাস্তবায়নকে গুরুত্ব দিতে চায় না। আওয়ামী লীগকে এজন্য ‘ক্রেডিট’ দিতে অস্বস্তি ও কার্পণ্যবোধ করে। তারা বরং নেতিবাচক সমালোচনা করে। এমনকি অপপ্রচার চালায়। একজন কথিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী পর্যন্ত বিদেশী টিভিতে সাক্ষাতকার দিয়ে এমন ‘প্রোপাগান্ডা’ চালায় যে, বাংলাদেশ উচ্ছন্নে যেতে বসেছে। সুশীল নামধারীরা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝাতে চায়, যেমনটা তারা অতীতে করে এসেছে যে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। আর আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হলেও সে দেশবিরোধী, গণবিরোধী। তাদের অনেকে এমন যুক্তিও দেখান যে, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে অনেক সময় সঠিক ভূমিকা পালন করে। গণতান্ত্রিক আচরণ করে ক্ষেত্র বিশেষে। কিন্তু তারা দেখে না বা বলতে চায় না যে, বিএনপি-জামায়াত কিভাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পঙ্গু করেছে। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পঁচাত্তর পরবর্তী সময় থেকেই এই ধারা তাদের অব্যাহত। অথচ বিএনপি-জামায়াত নিজেরাও বিশ^াস করে না তারা গণতান্ত্রিক। সুশীলদের শিরোমণি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজবিশ্লেষক দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। এই যে দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, না খেয়ে কেউ মারা যাচ্ছে না, গ্রামে গ্রামে বিদ্যুত পৌঁছে গেছে, কুঁড়ে ঘরের স্থলে টিনের ঘর ও দালান কোটা গড়ে উঠেছে। মঙ্গা, লোডশেডিং, ভিক্ষুক শব্দগুলো অবলুপ্ত প্রায়, তখন তিনি লিখছেন, ‘দেশের পরিস্থিতিতে যে ভাল নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’ এমনও লিখেছেন, ‘এখনকার পরিস্থিতি বিশেষভাবে মন্দ মনে হচ্ছে কয়েকটি অতিরিক্ত কারণে। দেশ, জাতি, সমাজ ও মানুষের সঙ্গে যারা সম্পর্কিত তারা এমন বাক্যে বিস্মিত হবেন স্বাভাবিকভাবেই। দুবেলা দুমুঠো খেতে পাওয়া মানুষ এমন কথা শুনলে বরং ভিমড়ি খাবেন। তমুদ্দুন মজলিশ থেকে মার্কসীয় ধারণায় উত্তরিত প্রফেসর চৌধুরী যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কর্মকা-ে অসন্তুষ্ট, তাই অবলীলায় লিখেছেন, ‘মানুষ সমাজে বাস করে। সেখানে আজ কোন নিরাপত্তা নেই। না আছে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, না দৈহিক। রাষ্ট্র তার কর্তব্য পালন করতে পারছে না।’ ক’দিন আগে একটি দৈনিকে ‘নির্বাচন ও সমাজ পরিবর্তন’ শীর্ষক প্রফেসর চৌধুরীর কলাম পাঠ করে বিস্মিত অনেকে হয়েছে। আমি হইনি। কারণ ১৯৭২-৭৫ সময়কালকে তিনি এখনও যেভাবে মূল্যায়ন করে থাকেন, তাকে মার্কসীয় বিশ্লেষণ বলা অপরাধই হবে। বরং বলা যায়, প্রকাশ্য বিদ্বেষসিক্ত গর্জন-তর্জন। যা সুস্থ রাজনীতির লক্ষণ নয়। এই বিশ্লেষণ বিভ্রান্তির চোরাবালিতে আটকা পড়েছে এমনভাবে যে, সমাজে কোন সুস্থির অবস্থা তার দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই তিনি যেসব ‘কুৎসিত’ সমালোচনা করেছিলেন, পরবর্তীকালে প্রমাণ হয়েছে সবই ডাহা মিথ্যে। লিখেছিলেন তিনি, শেখ মুজিব দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ ও টাকাকড়ির পাহাড় গড়েছেন। দেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানী ভাবধারাকে বহাল রেখেছিলেন। শেখ মুজিব সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন না- ইত্যাকার মিথ্যাচার বা অপপ্রচার যে তিনি করেছিলেন, সেসব তার গ্রন্থেই সন্নিবেশিত রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি গত ক’মাস ধরে যা লিখছেন, তাতে ফয়েজ আহমদ রচিত ‘সত্যবাবু মারা গেছেন’ শীর্ষক রচনাকেই মনে করিয়ে দেয়। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশজুড়ে তত নির্বাচনী হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। মানুষের কাছে উন্নয়ন, স্বাধীনতা, একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ মানে আওয়ামী লীগ। আর সেই আওয়ামী লীগ যাতে আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেজন্য শিক্ষিতজনরাও অপপ্রচারে শামিল যে হবেন, তা স্পষ্ট। গ্রাম বাংলা জুড়ে নির্বাচনী বাতাস বইছে জোরেশোরে। মানুষ ভোটে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রার্থী হবার বাসনায় অনেকেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন, তখন দেশের পরিস্থিতি নিয়ে যে শঙ্কা তুলে ধরা হচ্ছে, তার নেপথ্যে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট যাতে না হয়, তারই নমুনা বলা যায় এসব লেখা। অপপ্রচারের অক্ষ এক সময় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। যখন সারাদেশের সব পথ মিশে যাবে ভোট কেন্দ্রে, মানুষ অবাধে ভোট দেবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে, তখন সুশীলরাও নতুন নতুন মিথ্যাচারকে সামনে নিয়ে আসতে পারেন। যদিও জনগণের কাছে এসবের কোন বাহ্যিক মূল্য নেই।
×