ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ আকাশে ষড়যন্ত্রের কালো মেঘ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সিডনির মেলব্যাগ ॥ আকাশে ষড়যন্ত্রের কালো মেঘ

আজ যখন লেখাটি লিখছি মিডিয়ায় দেখলাম মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ তিন ধাপ এগিয়েছে। গত বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপি শুক্রবার ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৮’ প্রকাশ করেছে; তাতে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হয়েছে তিন ধাপ। এবারের প্রতিবেদনে ১৮৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১৩৬তম অবস্থানে। ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ছিল ১৩৯তম অবস্থানে; তার আগের বছর ছিল ১৪২তম অবস্থানে। প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করে ইউএনডিপি। আরও খবর আছে। এই সূচকে আমরা কোন কোন দেশকে পিছে ফেলেছি? দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ মানব উন্নয়নে নেপাল ১৪৯ ও পাকিস্তানের ১৫০ চেয়ে এগিয়ে থাকলেও শ্রীলঙ্কা (৭৬), মালদ্বীপ (১০১), ভারত (১৩০) ও ভুটানের (১৩৪) চেয়ে পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে মালদ্বীপ গতবারের তুলনায় চার ধাপ, বাংলাদেশ তিন ধাপ এবং ভারত এক ধাপ এগিয়েছে। আর বাকি চার দেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ বছর থেকে বেড়ে ৭২ দশমিক ৮ বছর হয়েছে; শিশুদের স্কুলে কাটানোর প্রত্যাশিত সময় গড়ে ১০ দশমিক ২ বছর থেকে বেড়ে ১১ দশমিক ৪ বছর হয়েছে এবং মাথাপিছু আয় (জিএনআই) বছরে তিন হাজার ৩৪১ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৬৭৭ ডলার। তথ্যগুলো এবং তার স্বীকৃতি আর আজকের রাজনীতিকে মিলিয়ে দেখুন। আবার যখন এই লেখা লিখছি তখন জোট গঠন করে কারা মাঠে নামছেন? ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচী দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। অতি সম্প্রতি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আসম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় বৈঠকে এ বিষয়ে একমত হন জাতীয় ঐক্যের উদ্যোক্তারা। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন দলের যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের ঐক্য প্রক্রিয়া একসঙ্গে কাজ করবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে আগামী অক্টোবর থেকে যুগপৎ কর্মসূচী দেয়া হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টা বোঝা কি খুব কঠিন? শেষের লাইনেই বলা আছে আখেরি চাওয়া বিএনপির সঙ্গে মিলে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সরকার হঠানো। সরকারী দলের নেতা আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশকে যে জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছেন সেখান থেকে সামনে যেতে হলে যে নেতৃত্ব আর নীতির দরকার তা কি আছে এই জোটে? এদের আমরা নতুন চিনি? আজ বলব ঘরশত্রু বিভীষণই মূলত আওয়ামী লীগ বা যে কোন দলের কাল। তাই বি চৌধুরী বা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে মন্দ বলার আগে ভাবতে হবে বাকি তিনজনকে নিয়ে। ড. কামাল হোসেন মাঠের রাজনীতিতে তেমন আলোচিত না হলেও দেশের সুশীল সমাজে তার নাম ডাক আছে। একজন আইনজীবী আর এক সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি। তিনিও আওয়ামী লীগ কতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন আমরা সবাই তা জানি। এই সেদিনও তিনি যখন বঙ্গভবনে গেলেন রাষ্ট্রপতি তাঁকে লিডার সম্বোধন করে বলেছিলেন, অনেক তো হলো। আপনি বলুন আমি নেত্রীকে বুঝিয়ে বলি ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসুন। তিনি সে কথায় কর্ণপাত করেননি। কারণ তাদের মনে আরেক এজেন্ডা কাজ করছে। একানব্বই-এর পর ছিটকে পড়া কামাল হোসেন এখন আরেক মেরুর মানুষ। যেনতেন প্রকারে শেখ হাসিনাকে হঠাতে তিনি খালেদা জিয়া ও বিএনপির সঙ্গে যেতে রাজি। বাকি দুজনের একজন ছাত্রলীগের এক সময়ের নেতা। যিনি স্বাধীনতার পতাকা তুলেছিলেন বটে তারপর সে পতাকা দ-ের বাঁশ নিয়ে ঘুরছেন আজীবন। সম্প্রতি একটি টিভিতে এক তরুণ তাঁকে বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন করেছিল তিনি এরশাদ আমলে সত্তরটি দলের নেতা ছিলেন। তো বাকি ঊনসত্তর দল এখন কোথায়? রব সাহেব জবাব দিতে না পেরে যে ভাষা ও অঙ্গভঙ্গিতে কথা বললেন তার নাম অশ্লীলতা। শোধবোধ হারানো এই ভদ্রলোক এখন বেপরোয়া। মাহমুদুর রহমান মান্না বাইরে যতই সুশীল ভাব করুন মূলত আওয়ামী বিদ্বেষী। দেশে বিরোধী দল থাকবে এটাই গণতন্ত্রের চাওয়া। আমরা অনেককাল কোন ভাল বিরোধী দল দেখছি না। তাই বিরোধিতার দরকারও বোধ করি। কিন্তু এরা তা পারবেন? এই যে তারা শহীদ মিনার থেকে কর্মসূচী দেবেন তার একটা খসড়া দেখলাম। কি আছে তাতে? সেই গৎবাঁধা কথা। যা কাগজে থাকে মগজে থাকে না। সে কথায় চিড়ে ভিজবে? ভিজুক আর না ভিজুক এরা পানি ঘোলা করবেনই। ভয় কোথায়? ভয় হচ্ছে সরকারী দলের অবাধ আর উগ্র আচরণে। একটা ছোট ঘটনা বলি, সিলেটে বাতিল হয়ে যাওয়া বা ভোট স্থগিত হয়ে থাকা যেসব কেন্দ্র্র্রে মেয়র পদের জন্য আবার ভোট হয়েছিল তা ছিল মোটামুটি ঘটনাবিহীন। কারও কোন উত্তেজনা বা দখল না থাকায় সেখানে নিশ্চিন্তে ভোট হওয়া সাড়ে চার হাজার ভোটে নৌকার প্রাপ্তি পাঁচশ’র কাছাকাছি ভোট। বাকি সব গেছে ধানের শীষে। মানে বুঝলেন? যত আয় উন্নতি বা অগ্রগতি হোক না কেন বেঈমানের লেজ সোজা হওয়ার না। আর এ জন্য সরকারী দলের নেতা পাতি নেতা উগ্র কর্মী চাঁদাবাজদের অবদানও কম না। তাই সময় এখন সাবধানতার। নৌকা না জিতলে আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি আমাদের কিছু হবে না। যারা দেশের প্রান্তিক মানুষ তাদের কি কিছু হবে? উত্তরটা খুব সহজ। তাদের জানমালের লোকসান হয়ত হবে না তবে দেশের যে উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়া তার সুফল তারা ভোগ করতে পারবে না। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন তারা, যারা এই সরকারের কাছে এমন কিছু প্রত্যাশা করেন যা মূলত এনে দেয়া যায় না। যারা আকাশ পেলে চাঁদ চায় চাঁদ পেলে সূর্য খোঁজেন সেসব সুবিধাবাদীদের কপালে কি আছে কেউ বলতে পারে না। তারপরও দেখছি সারাদেশে এবং দেশের বাইরে অকারণ বিরোধিতা। মন্ত্রী আসে মন্ত্রী যায়। নেতা আসে নেতাও যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ভাগ্যে আর একজন শেখ হাসিনা কি আসবেন? তাঁর কথা ও স্পষ্টভাষিতা বা অতীত নিয়ে বার বার বলাটা অনেকের মনে ভাল লাগে না। সেটা মেনে নিয়েও বলি তাঁর দিকটা ভেবে দেখুন। তিনি কিন্তু মিথ্যা বলছেন না। এই যে হোটেল শেরাটনে তিনি সে হোটেলে একাত্তরের বীরত্বগাথার কথা বলতে গিয়ে ঢাকার সৌন্দর্য ও পরিবেশ নিধনে জেনারেল জিয়ার গাছ কাটার কথা বললেন তা কি মিথ্যা? কি নিদারুণ বাস্তবতা। এক জেনারেল গাছে লুকিয়ে থাকা আততায়ীর কল্পিত ভয়ে আমাদের পরিবেশের সর্বনাশ করেও কিভাবে প্রিয় হতে পারেন? কিভাবে সে দল যারা আক্রোশ আর প্রতিশোধের জন্য মরিয়া তারা আবার গদিতে আসতে পারে? দেশে জনগণের কাছে পৌঁছতে না পারা মির্জা ফখরুল এখন আমেরিকায় জাতিসংঘে গিয়ে ধরনা দিয়েছেন। ভারত-পাকিস্তান বা আর কারও কাছে যখন আর আশা নেই তখন পৌঁছে গিয়েছেন জাতিসংঘে। যারা মধ্যপ্রাচ্যে এত অশান্তি দুনিয়াজোড়া মারামারি আর হিংসায় কাঠের পুতুল তারা নাকি দেবে সমাধান? তবে এটা বলতে হবে এখন ষড়যন্ত্র ও বাতিল নেতারা সমার্থক। এদের অর্থ আছে। লবিং আছে। আছে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যার বেসাতি। কি তারা পারবেন আর কি পারবেন না জানি না, এটা জানি দেশের ভাগ্যে আর একবার কলঙ্ক বা রক্তের ধারা যারা বইয়ে দিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সাবধান হওয়ার বিকল্প নেই। সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পথে রাজনীতি হোক। রাজনীতি যেন না হয় ভারত পাকিস্তান কিংবা আর কোন দেশের তুষ্টি সাধন কিংবা ইশারায়। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত কারণে আর একবার পদানত করা কিংবা পেছনে টানার চেষ্টা প্রতিহত করা একা শেখ হাসিনার কাজ হতে পারে না। এ দায় সকলের, না হয় সময় কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। [email protected]
×