ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

মহাসড়ক কি মহানরক?

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩০ আগস্ট ২০১৮

মহাসড়ক কি মহানরক?

যুগের চাহিদা, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গতিশীল করতে মহাসড়ক নির্মাণের বিকল্প নেই। তাই ছোট ছোট সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি মহাসড়ক ও বিশ্বরোড নির্মাণের চিত্র চোখে পড়ার মতো। তবে কতটুকুই বা মানসন্মত ও টেকসই মহাসড়ক নির্মিত হয়- তা প্রশ্নবোধক। ফলে মহাসড়কে মহানরকের যন্ত্রণা লাঘব হওয়ার বদলে বরং বেড়ে যায়। আর সেই নরকের চিত্র ঈদ এলে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। মহাসড়কের বেহাল অবস্থা বাংলাদেশে নতুন কিছু নেই। মহাসড়ক তত্ত্বাবধানকারী ও মেরামতকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বদল হয় ঠিকই কিন্তু বছরের পর বছর ধরে মহাসড়ক তার আপন অবস্থাতেই বিদ্যমান থাকে। ঈদ এলে যেহেতু মহাসড়কের আসল চিত্র বেরিয়ে আসে আর তখনই মেরামতের মহড়া শুরু হয়ে যায়। জোরাতালি দিয়ে কোন মতে মহাসড়ক মেরামত করা হলেও ঈদ গেলে আগে যা অবস্থা ছিল সেই অবস্থাতেই ফিরে আসে। তখন আর দেখার কেউ থাকে না। মহাসড়ক মেরামত ও নির্মাণের কাজ শুধু যেন ঈদের আগেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ঈদের পূর্বে সবাই চায় প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে। আর সেই লক্ষ্যে ঈদের সময়ে মহাসড়কে এমনিতেই সাধারণ দিনের চেয়ে বহুগুণ যানবাহনের চলাচল বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও কোরবানি ঈদের আগে কোরবানি পশু নিয়ে যানবাহনের ব্যস্ত চলাচল তো রয়েছেই। মহাসড়কে যেহেতু যানবাহনের আধিক্য এই সময় বেশি থাকে তাই ফিটনেসবিহীন গাড়ি যদি একবার রাস্তার মাঝখানে অকেজো হয়ে পড়ে তাহলে তো দুর্ভোগের সীমা থাকে না। অনেক সময় ঈদে যাতায়াতকারীকে একদিনের পথ দুই দিনে পাড়ি দিয়ে তবে গ্রামে পৌঁছতে দেখা যায়। আবার অন্যদিকে বর্ষাকাল এলে মহাসড়কে চলাচলকারী জনসাধারণের দুর্ভোগ যেন আরও দিগুণ হয়ে ওঠে। এ সময় সড়ক-মহাসড়কে ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে সেখানে বৃষ্টির পানি জমে মহাসড়কের অবস্থা আরও কাহিল হয়ে পড়ে। মহাসড়ক যতটুকু ভাল থাকে তাও ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। অবশ্যই কোন কিছুই চিরকাল স্থায়ী থাকে না কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের পরেও যে প্রতিবছর এগুলোর মেরামত ও যতœ নিতে হয় তা হয়তোবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা একেবারেই জানেন না। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় টেকসই এবং চোখ ধাঁধানো মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে অবহেলা ও অযতেœ সে মহাসড়কগুলো অচিরেই নষ্ট হয়ে পড়েছে। উন্নয়নের পূর্ব শর্তই হলো সড়ক-মহাসড়কের মসৃণতা, নিরাপদে চলাচল ও যাতায়াতের গতিশীলতা। বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে সেখানে সড়ক-মহাসড়কের এই বেহাল অবস্থা যদি না থাকত তাহলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নের সূচক আরও উর্ধমুখী হতো। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও মেরামতে যে টাকা বিনিয়োগ করা হয় তা যদি যথাযথ ব্যবহার করা হয় তাহলে চলাচল ব্যবস্থায় আরও গতিশীলতা পাওয়া যাবে। দুঃখের বিষয় পঞ্চভূতের দৌরাত্ম্য এতটাই যে তাদের অর্থলোপাট মনোভাব ও দেশপ্রেমের অভাবে সড়ক-মহাসড়কের কোন উন্নতি নেই- মাঝখান থেকে সাধারণ জনগণ দুর্ভোগ পোহায়। ঈদের সময় ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দের কারণে রাস্তায় বাঁধে দীর্ঘ যানজট। দীর্ঘ সময় রাস্তায় অথর্ব বসে থাকা ছাড়া তখন আর কোন উপায় থাকে না। সময় মতো গ্রামে পৌঁছানো যায় না। এই চিত্র বছরের সব সময় বিদ্যমান থাকাতে প্রতিবছর অর্থনীতিতে বড় অঙ্কের অর্থ, শ্রম ও জ্বালানির ক্ষতি হয়। আনন্দের বিষয় ইতোমধ্যে সরকার অন্যান্য জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের উন্নয়নের জন্য চারলেনের রাস্তার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছেন। ইতোমধ্যে অনেক নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় রয়েছে। আগামী বছর ঈদের সময় জনগণ নির্বিঘেœ গ্রামে পৌঁছতে পারবে বলে আশা রাখি। বনানী, ঢাকা থেকে
×