ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এমডি পদত্যাগে বেসিক ব্যাংক নতুন করে সঙ্কটে পড়বে না ॥ অর্থমন্ত্রী

বাড়ছে লোকসানের পাল্লা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৯ আগস্ট ২০১৮

বাড়ছে লোকসানের পাল্লা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসিক ব্যাংকে খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। দিনদিন বাড়ছে লোকসানের পাল্লা। উন্নয়ন সূচকে নেই অগ্রগতি। এসবের মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ। যা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। যার ফলে পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ আউয়াল খান। মূলত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর দুর্নীতি আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে ধুঁকছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। পর্ষদ ভেঙ্গে নতুন করে পুনর্গঠন হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির। এদিকে, এমডি আউয়াল খানের পদত্যাগে বেসিক ব্যাংক নতুন করে সঙ্কটে পড়বে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি। বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ আউয়াল খান গত ১৪ আগস্ট পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে তিনি শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঋণ অনুমোদন, কিছু ঋণ পুনঃতফসিলের মতো ব্যাংক ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পেরে তিনি পদত্যাগ করেছেন। অপর সূত্রের দাবি, সুদহার কমে যাওয়া, খেলাপী ঋণ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে চলতি বছর বেসিক ব্যাংক ৮০-৯০ কোটি টাকা লোকসান করবে। এমন পরিস্থিতি বুঝেই সমালোচনা এড়াতে আগেভাগেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, এমডির পদত্যাগপত্র পেয়েছি। আগামী ৩০ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিষয়টি উপস্থাপিত হবে। আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, বোর্ড চাইলে তিনি থাকবেন, না চাইলে থাকবেন না। এ বিষয়ে পর্ষদ সদস্যরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। পর্ষদের চাপে এমডি পদত্যাগ করেছেন কি না- জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, পর্ষদের চাপ ছিল না। উনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। এদিকে, এমডি আউয়াল খানের পদত্যাগে বেসিক ব্যাংক নতুন করে সঙ্কটে পড়বে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এমনিতেই সেখানে সমস্যা রয়েছে, এর মধ্যে এমডির পদত্যাগে একটা নেগেটিভ বার্তা আসছে কি না- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, না পদত্যাগের জন্য ব্যাংকটির কোন সমস্যা হবে না। পদত্যাগের বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক। এতে আমি মোটেও বিচলিত নই। চেয়ারম্যান-এমডির অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের কারণে তিনি (আউয়াল খান) পদত্যাগ করেছেন- এমনটি শোনা যাচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মুহিত বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি চেয়ারম্যানকে কিছু জিজ্ঞাসাও করিনি। এমডির পদত্যাগের বিষয়টি খবরের কাগজ থেকেই জেনেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না। মুহাম্মদ আউয়াল খান ২০১৭ সালের ১ নবেম্বর বেসিক ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন। ব্যাংক ও আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগ তাকে তিন বছরের জন্য এ পদে নিয়োগ দেয়। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ১ নবেম্বর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের লোকসান হয়েছে দুই হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ৬৮টি শাখার মধ্যে ২১টিই লোকসানে রয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর আমলে অর্থাৎ চার বছরে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা বের করে নেয়া হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির ৫৯ দশমিক ২২ শতাংশই খেলাপী ঋণ। বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ আট হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বেসিক ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান হওয়ার পর ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় নয় হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকটি ছয় হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়, যার প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভেঙ্গে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে ঋণ বিতরণে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ার পর প্রথমে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। ২০১৪ সালের ২৯ মে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ৪ জুলাই অর্থমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। পরে বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সর্বমোট ৫৬টি মামলা করে দুদক। যদিও ওইসব মামলায় বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। পরে আদালতের নির্দেশে বাচ্চুর বিষয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করে দুদক।
×