ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গত বছর ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৮ আগস্ট ২০১৮

গত বছর ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই অঙ্ক থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধ শেষে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা, যা ঘাটতি বাজেট অর্থায়নে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা (সংশোধিত) থেকেও দুই হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি। বিদায়ী অর্থবছরে বিক্রীত সঞ্চয়পত্র থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মুনাফা পরিশোধ হয়েছে ২০ হাজার দুই কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগের অর্থবছরে (২০১৬-১৭) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি টাকার। সঞ্চয়পত্র বিক্রি হলেও তুলনামূলক কম মূল ও মুনাফা পরিশোধের কারণে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে মূল ও মুনাফা পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল ২২ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে মুনাফা পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ তথ্য মতে, অর্থবছরের শেষ মাস জুনে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার। ওই মাসে মূল ও মুনাফা পরিশোধে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। ফলে ওই মাসে সরকারের নিট ঋণ হয় তিন হাজার ১৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ব্যাংক আমানতের সুদহার নিম্নমুখী এবং শেয়ারবাজারের অস্থির অবস্থার কারণে কয়েক বছর ধরে নিরাপদ বিনিয়োগের আশায় সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন সঞ্চয়ীরা। তবে দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উচ্চহার বজায় থাকায় বাজার সুদহারে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। এই অসামঞ্জস্যতা দূর করতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বিভিন্ন সময় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার এসইসি সম্মেলন কক্ষে ব্যাংক পরিচালক ও নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার আগামী ৮ আগস্ট পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান। গত ৮ জুন বাজেট পেশ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, সাধারণত দুই-তিন বছর পরপরই আমরা সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পর্যালোচনা করি। কিন্তু এবার একটু দেরি হয়েছে। এবার বাজেটের মাসে বা বাজেটের পরের মাসেই এটা পর্যালোচনা করা হবে।’ তবে জুলাই মাস শেষেও এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেননি অর্থমন্ত্রী। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারের সঙ্গে বাজার সুদহারের বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। আগামী ৮ আগস্ট আমরা এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেব।’ মূলত তিন বছরের বেশি সময় ধরে সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ শতাংশের ওপরে রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়। এই সময়ে দেশের ব্যাংক খাতের আমানতের সুদহার কমতে কমতে কখনও কখনও মূল্যস্ফীতির নিচেও চলে যায়। বিদায়ী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ঋণ এসেছে পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে। ওই সময়ে পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ এসেছে ১৬ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ এসেছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। পেনশনার সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ এসেছে তিন হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ এসেছে তিন হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদী হিসাবে নিট ঋণ রয়েছে ছয় হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে নিট ঋণ আসে এক হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি অর্থয়ানে সঞ্চয়পত্র থেকে নজর সরিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমসহ সব ধরনের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে ২৬ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা (সংশোধিত) ১৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
×