ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যিক এলাকার প্রধান সড়ক অর্ধেকই দখল গাড়িতে

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৪ আগস্ট ২০১৮

বাণিজ্যিক এলাকার প্রধান সড়ক অর্ধেকই দখল গাড়িতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসিসি) আওতাধীন প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা গুলিস্তান, পল্টন এবং মতিঝিলের সবকটি প্রধান সড়কের বেশিরভাগই বেদখল হয়ে পড়েছে। সড়কের অধিকাংশ স্থানজুড়ে রিক্সা ও গাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে চলাচল। এতে ওইসব এলাকায় যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। সেই সঙ্গে ওই সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও পথচারীরা চরম বিড়ম্বনার কবলে পড়ে নাকাল হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পথচারীদের অভিযোগ, এলাকার প্রধান সড়কগুলোর ফুটপাত হকারদের দখলে। তারা ফুটপাতগুলো স্থায়ীভাবেই ব্যবহার করছেন। মাঝে মাঝে পুলিশ ও ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু তাতে কোন প্রতিকার মিলছে না। উল্টো বিড়াল-ইঁদুর খেলার মতো উচ্ছেদের কিছুক্ষণ পরই ফের হকারদের দখলে চলে যায় ফুটপাত ও সড়কের অধিকাংশ স্থান। হকারদের কারণে ফুটপাত দিয়ে পথচারীরা হাঁটতে না পেরে মূল সড়ক দিয়েই হাঁটতে বাধ্য হন। ফলে ঘটে ছোট-বড় নানান দুর্ঘটনা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ‘মূল সড়কেও গাড়ি পার্কিং, দোকানের মালামাল রাখাসহ নানা কাজ অনবরত চলতে থাকে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট।’ সরেজমিনে গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল ও ওইসব এলাকার আশপাশে ঘুরে দেখা যায়, সবগুলো প্রধান সড়কের দু’পাশের অধিকাংশ স্থান হকার ও গাড়ি পার্কিংয়ের দখলে। কিছু কিছু স্থানে ২০ ফুট সড়কের ১২ থেকে ১৫ ফুটই হকার, রিক্সা ও গাড়ি পার্কিংয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। গুলিস্তানের স্কয়ার মার্কেট হয়ে গোলাপ শাহ মাজার এবং জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের দু’পাশ দখল করে হকাররা নানান পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। ফুটপাত ও সড়কের পাশে চলাচলের পথ বেদখল হওয়ায় পথচারীরা মূল সড়ক দিয়েই হাঁটছেন। এতে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনার পাশাপাশি এসব এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। একই অবস্থা মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকা থেকে আরামবাগ, দৈনিক বাংলা এবং ইত্তেফাক মোড়ের দিকে যাওয়া সড়কগুলোর। সেখানে সড়কের ফুটপাত ও ফুটপাত সংলগ্ন মূল সড়কের কিছু অংশ দখল করেছেন হকাররা এবং কিছু অংশ দখল করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিক্সা চালকেরা। এতে ওই এলাকার সড়কগুলো সংকুচিত হতে হতে মাত্র কয়েক ফুট খালি থাকে। যা দিয়ে একটি দু’টি গাড়ি পাশাপাশি চলাচলেরও উপায় থাকে না। পুরান ঢাকার বাবুবাজার এলাকা থেকে মতিঝিলের একটি বায়িং হাউসে অফিস করেন অহিদুল হক। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল নয়টার দিকে গুলিস্তান থেকে রাজউক হয়ে মতিঝিলের অফিসে যাই। এ সময় যা দেখি তা বলার মতো না। প্রায়ই দেখি হকারদের উচ্ছেদ করে পুলিশ। কিন্তু বিষয় হলো পুলিশ উচ্ছেদ করতে করতে সামনে যায় আর হকার পেছনে দিয়ে এসে বসে। মাঝে মাঝে এগুলো দেখে হাসি। ফুটপাত দখল হতে হতে এখন রাস্তাও দখল হতে চলছে।’ নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, পথচারীর সঙ্গে ফুটপাতের যেমন সম্পর্ক আছে, তেমনি হকারদের সঙ্গে পথচারীর সম্পর্ক রয়েছে। তারা বলছেন, ‘পথচারীরা যেখানে থাকবে, হকারও সেখানে থাকবে। কারণ তাদের ব্যবসা গড়ে উঠে পথচারীকে কেন্দ্র করে। কিন্তু তাই বলে পথচারীর চলাচলের জায়গা দখল করে হকার বসবে এটা অন্যায়।’ এ সমস্যা সমাধানের জন্য সড়ক ও ফুটপাত সংযুক্ত স্থানে আলাদাভাবে হকারদের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্মাণের কথা বলছেন তারা। তারা আরও জানান, আদর্শ নগরের জন্য নগরীর মোট আয়তনের ২৫ ভাগ সড়ক থাকতে হবে। সে হিসেবে ডিএসিসিতে বর্তমানে সড়ক রয়েছে মাত্র ২ হাজার কিলোমিটারের মতো। যা প্রয়োজনের তুলনাই একেবারেই অপ্রতুল। আর পথচারীদের জন্য ২০০ কিলোমিটারের মতো ফুটপাত থাকলেও তার এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১৬৫ কিলোমিটারের ফুটপাত বেদখল হয়ে আছে হকারদের কাছে। নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, ‘পথচারী যেখানে থাকবে হকার সেখানে থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু হকার যখন পথচারীর চলাচলের পথরোধ করে ব্যবসা করবে সেটা অস্বাভাবিকই বটে। তবে এজন্য পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্র ভারত, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক কিংবা নিউয়র্কের ম্যানহাটনের দিকে তাকালেই দেখবেন যে সেখানে হকারদের জন্য ফুটপাতের পাশে বাড়তি জায়গা বরাদ্দ রেখে দিয়েছে। এতে পথচারীদের জায়গা আর দখল হচ্ছে না আবার হকারও তাদের ব্যবসা করে যাচ্ছেন ঠিকমতো। কিন্তু আমাদের দেশে তো সে ব্যবস্থা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ডিএসসিসি মেয়রকে বলেছি, আপনি যেভাবে তাড়িয়ে তাড়িয়ে হকার উচ্ছেদ করে শহর পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন তা সম্ভব নয়। কারণ এটি নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের বাজার। তাই আমি বলেছি উন্নত দেশগুলোর মতো হকার নিবন্ধন করে বসানো হোক। এতে যে কেউ এসে বসতে চাইলেই বসতে পারবে না। কিন্তু এখন যেভাবে পারছে সে সেভাবে বসে-শুয়ে থেকে বেদখল করে চলেছে। একটা প্রক্রিয়ায় না এলে এ ফুটপাত এবং সড়ক যথেচ্ছ ব্যবহার হবে।’ ফুটপাত ও সড়ক দখল বিষয়ে ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরা এসব এলাকায় বেদখল ঠেকাতে নিয়মিত উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করি। কিন্তু সড়ক দখল রোধ করার প্রধান দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের। তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে যে কেউ ইচ্ছে মতো গাড়ি পার্কিং করতে পারে না।’ মতিঝিল জোনের ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার আরশাদ উল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, ‘এ অবৈধ পার্কিং ঠেকাতে আমরা প্রতিদিন মামলা দিয়ে থাকি। সচেতন করার চেষ্টা করি জনগণকে। এটা ছাড়া তো আমাদের হাতে আর কোন উপায় নেই যে আমরা তাদের মেরে মেরে সমস্যার সমাধান করব।’
×