ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সহে না যাতনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২ আগস্ট ২০১৮

সহে না যাতনা

শ্রাবণে অঝোর ধারার বর্ষণের রিমঝিম শব্দ এখন আর অধিকাংশ নগরবাসীর মনে আগের মতো অনুরণন তোলে না, কণ্ঠ থেকেও নিঃসৃত হয় না সুমধুর বর্ষাসঙ্গীত – ‘এলো বরষা যে সহসা মনে তাই, রিমঝিম রিমঝিম গান গেয়ে যাই।’ কারণ শ্রাবণের ভারি বর্ষণের ফলে নগরীর অনেক এলাকা জলের নিচে তলিয়ে যায়; রাস্তায় কখনও হাঁটু বা কোমর সমান দূষিত কাদাজল, খানা-খন্দ ও গর্তের মতো মৃত্যুফাঁদ পেরিয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করে নগরবাসী যাতায়াত করে। জীবিকার প্রয়োজনে শ্রাবণের দুর্ভোগ উপেক্ষা করে তাদের ঘরের বাইরে যেতেই হয়! কিন্তু বাইরে বের হয়ে একি দুরবস্থা! সড়কে জলজটÑযানজট ও জলাবদ্ধতার সীমাহীন মহাদুর্ভোগের শিকার প্রায় সবাই। শ্রাবণে অতি বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক এলাকা যেন এক ভাসমান নগরীতে রূপান্তরিত হয়- যেন এক নদী আর সেই নদীতে বাস চলছে দরজাসমেত আধা-নিমজ্জিত হয়ে অসহ্য জলাবদ্ধতার মাঝে, অতি কষ্টে ধুঁকে ধুঁকে এগিয়ে চলেছে গন্তব্যের দিকে কিন্তু তাতেও সুবিধা বা রেহাই নেই, কিছুদূর গিয়েই ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যাওয়ার ফলে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি করে ফেলে; তার পাশাপাশি চলেছে নৌকাও, যার মাঝি বৈঠা বেয়ে পানিবন্দী মানুষদের পারাপারে ব্যস্ত। এ এক অদ্ভুত দুর্ভোগের দৃশ্য ঢাকা শহরের মানুষ অবলোকন করছেন বেশ ক’বছর যাবত! আর বর্ষা এলেই শুরু হয়ে যায় সড়ক সংস্কারের কাজ ও খননকার্য; ওয়াসার পাইপ লাইন বসানো থেকে শুরু করে স্যুয়ারেজ ও গ্যাস পাইপ্ লাইনের কার্যক্রম আরও বেগবান করতে ঠিকাদারের লোকজন খুঁড়ে চলেছে রাস্তায় গর্ত ! নগরীর কোন কোন এলাকা বিশেষ করে মিরপুর এলাকার চিত্র আরো ভয়াবহ ! সম্প্রতি নর্দমা সংস্কারের জন্য খননকার্য চলেছে এই অতি বর্ষায় ও গর্ত খুঁড়ে বর্জ্য পদার্থ সড়কের উপরেই জড়ো করে রাখা হচ্ছে, যা মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে ড্রেনের বর্জ্য, পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে রাস্তাসহ পুরো এলাকা নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পানিতে সয়লাব। আর সেই দূষিত পানির জন্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ডায়ারিয়া, আমাশয় ও বিভিন্ন চর্মরোগসহ মারাত্মক পানিবাহিত রোগে। মিরপুরে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কার্যক্রম; ফলে সঙ্কুচিত হয়ে গেছে দু’পাশের রাস্তা; দিনরাত যানজট লেগেই আছে; সেখানে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে তিন/চার ঘণ্টা! আমি নিজেও কর্মজীবি নারী; এই তো ক’দিন আগে বাসা থেকে বেরুনোর মুখেই পড়লো বাধা; ভরা বর্ষার পানিতে এক রিকশা উলটে পড়ে আছে, রিকশাযাত্রীও পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় পড়ে আছেন, তাকে উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তিন-চার জন মিলে! সর্বাঙ্গ ভিজে একাকার সবার, উদ্ধারের পর বিপুল প্রাণশক্তি নিয়ে এগিয়ে চললেন তিনি জলের মাঝেই! আমরা এগোলাম কিন্তু জলমগ্ন রাস্তা ধরে কিছুদূর এগিয়ে যাবার পরই গাড়ি থেমে গেল; ড্রাইভারের বিরক্তি পূর্ণ কণ্ঠস্বর‘ খালাম্মা, সব্বনাশ হইছে, কলেজে যাইবেন কেমনে? ইঞ্জিন আর কারবুরেটরে পানি ঢুইক্কা গেছে ! গাড়ী আর আগাইবো না।’ আমিও মহাবিরক্ত হয়ে রিকশা ডাকতে বললাম, রিকশায় উঠতে যেয়েও পানির মধ্যেই আমায় এক্রোবেটিক কৌশলে রিকশার পাদানিতে পা রাখতে হলো। কিছুদূর যাবার পর বিশাল এক গর্তে চাকা আটকে ত্রি-চক্রযানটি কাত হয়ে গেল; আমিও জলে নিমজ্জিত হলাম; হাতের দামী মোটা বইটা পড়ল পানিতে, দেখতে দেখতেই ফুলে ঢোল হয়ে গেল আমার গুরুত্বপূর্ণ বইখানি! পরের দুর্ভোগের কথা আর মনে করতে চাই না- শুধু মনে এলো রবীঠাকুরের বাণী -‘ সহে না যাতনা।’ মিরপুর, ঢাকা থেকে
×