ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাই কঠোর পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১৯ জুলাই ২০১৮

চাই কঠোর পদক্ষেপ

দেশে লাগামহীন গতিতে বেড়ে চলছে মটরসাইকেলের সংখ্যা। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি জনপদে মটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি আর মুহুর্মুহু বাজানো হর্নের উচ্চ শব্দে পথচারী ও রাস্তার আশপাশে বসবাসরত জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রতি মুহূর্তে পথচারীদের মধ্যে দুর্ঘটনার আশংকা বিরাজমান। মটরসাইকেলের দাপটে নিরাপদ সড়ক হয়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ। বাড়ছে যানজট। অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। আগেকার দিনে সচ্ছল পরিবারের লোকজন মটরসাইকেল কিনত। আর অনেক কৌতূহলী লোকজন তা দেখতে আসত। তখন দামও ছিল বেশি। শহরে গিয়ে এককালীন টাকা দিয়ে কিনতে হত। কিন্তু এখন হাত বাড়ালেই মটরসাইকেল কিনতে পাওয়া যায়। দামেও সস্তা আবার রাস্তায় চালাতে কোন লাইসেন্স বা কাগজ পত্রের প্রয়োজন হয় না, অন্যদিকে কিস্তির সুবিধাও রয়েছে। আগে এটি ছিল সৌখিনতা কিংবা রুচিশীল একটি বাহন আর এখন বেকারত্ব দূর ও অর্থ উপার্জন করার একটি মাধ্যম। দেশের বহু হাট বাজারে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা চোরাই হোন্ডার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এর বিক্রেতারাই মূলত প্রশিক্ষণ ও কাগজপত্রবিহীন হোন্ডা চালাতে উৎসাহিত করে। এতে অদক্ষ বিবেকবর্জিত চালক চলে আসে সড়কে। এদের মধ্যে অনেকে মাদক ও অন্যান্য অপরাধ চক্রের সাথে জড়িত থাকে। তাই অবৈধ হোন্ডাগুলো বন্ধ করা উচিৎ। গ্রামের হাট বাজারেও বিভিন্ন কোম্পানির শোরুম রয়েছে। সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, গরিব, এমনকি দরিদ্র সীমার নীচে বসবাসরত উঠতি বয়সের তরুন ও যুবকদের মধ্যে মটরসাইকেল চালানোর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। কারণ তারা গরিব হলেও কিংবা লেখাপড়া না জানলেও হোন্ডা চালানোর সুবাদে সবসময় প্যান্ট শার্ট পরে ভিআইপি হালতে চলার সুযোগ পাচ্ছে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি ইমেজ সংকট কাটিয়ে ওঠার এ সুবর্ণ সুযোগটি হাত ছাড়া করতে রাজি নয় তরুণ ও যুবকরা। এক দুই লিটার তেল কিনে একজন চালককে দুই তিনশ টাকা দিয়ে কয়েক ঘন্টা তালিম নিয়ে হোন্ডা ভাড়া নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। হাতেখড়ির সময় এদেরকে ধারণা দেওয়া হয় হোন্ডা যত দ্রুত চলে তেল তত কম লাগে। তেলের খরচ কমাতে ভাড়াটিয়া অবিবেচক হোন্ডা চালকরা বেপরোয়া গতিতে চালায়। যাত্রীও নেয় বেশি। এতে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। উন্নত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ড্রাইভার হলে এমনটি হত না আশা করা যায়। কাগজপত্র ও লাইসেন্স বিহীন হোন্ডা ও চালক অল্পতেই ছাড়া পাওয়ার কারণে এদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। এরা অল্পতেই মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাই সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। শহরে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকলেও গ্রামে তা নেই। মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তা নামমাত্র। ভাড়ায় চালিত কাগজপত্র বিহীন হোন্ডা ধরা পড়লেও ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় সেগুলো ছাড়া পেয়ে যায়। ব্যক্তি মালিকানাধীন দুই চারটা হোন্ডাকে মামলা দিয়ে অভিযান সমাপ্ত হয়। প্রশাসনের সততা ও আন্তরিকতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। নিয়মিত মনিটর করতে পারলে অনেক ভাল হয়। সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে সরকার জনস্বার্থে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এটাই সর্বস্তরের মানুষের দাবি। লালমোহন, ভোলা থেকে
×