ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের কোন মহাসড়কে ওজনস্কেল না থাকলে চট্টগ্রামে থাকবে কেন?

সোচ্চার ৩০ ব্যবসায়ী সংগঠন

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১৮ জুলাই ২০১৮

সোচ্চার ৩০ ব্যবসায়ী সংগঠন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের কোন মহাসড়কে ওজনস্কেল নেই। শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুটি স্থানে এই স্কেল কেন, এই প্রশ্ন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের। এর মাধ্যমে চট্টগ্রামের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন ট্রেডবডির। মহাসড়কে পণ্য পরিহনে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ স্থায়ীভাবে বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি যাত্রী সাধারণও যানজটজনিত ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে ওজনস্কেল অপসারণ চায়। ওজন নিয়ন্ত্রক স্কেল সরিয়ে নেয়া না হলে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রামের ৩০টি ব্যবসায়ী সংগঠন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের দারোগারহাট এবং দাউদকান্দিতে স্থাপিত দুটি স্কেলের কারণে ভোগ্যপণ্যসহ সকল ধরনের পণ্যের স্বাভাবিক পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। পণ্য পরিবহনে ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। আগে ৫শ’ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে যে পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা যেত এখন সে একই পণ্য পরিবহন করতে প্রয়োজন হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার ট্রাক। এত ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান নেই। প্রয়োজনের তুলনায় ট্রান্সপোর্ট কম থাকায় ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবহন ব্যয় চাপছে পণ্যের ওপর, যা প্রকারান্তরে ভোক্তাদেরই বহন করতে হচ্ছে। দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমেদ জানান, দারোগারহাট এবং দাউদকান্দি এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে কোন গাড়ি ১৩ টনের বেশি পণ্য নিয়ে যাতায়াত করতে পারছে না। আগে প্রতিটি গাড়ি যেখানে ২২ টন পণ্য পরিবহন করতে সেখানে ১৩ টনের বেশি সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে এখন লাগছে প্রায় তিনগুণ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। চট্টগ্রামের পণ্য পরিবহনে আগে প্রয়োজন হতো ৫শ’ ট্রাক। এখন দেড় হাজার ট্রাকেও পারা যাচ্ছে না। এত বেশি ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যান নেই। এতে করে ভাড়াও অনেক বেড়ে গেছে। একটি ট্রাকে ২২ টন পণ্য পরিবহনে আগে খরচ হতো ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকা। আর বর্তমানে একই পরিমাণ পণ্য পরিবহন করতে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলমও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকু- ও দাউদকান্দি থেকে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল সরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা এ বিষয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। মন্ত্রী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন, এমনই আশাবাদ রেখে চেম্বার সভাপতি বলেন, দেশের প্রতিটি মহাসড়কে এমন স্কেল থাকলে আপত্তি নেই। শুধু একটি মহাসড়কে এই প্রতিবন্ধকতা অবশ্যই বৈষম্য। দেশের আমদানি রফতানির ৮২ ভাগই পরিবাহিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পেলে পণ্য মূল্যও বাড়ে। চেম্বার নেতারা জানান, চট্টগ্রামে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলো উৎপাদনে আছে এবং কিছু শিল্প রয়েছে উৎপাদনের অপেক্ষায়। এ ওজন স্কেলের কারণে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প ও ব্যবসা খাত। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, হয় সকল মহাসড়কে ওজনস্কেল স্থাপন করা হোক, নইলে এই দুটি স্কেল তুলে নেয়া হোক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বৈষম্যমূলক এক্সেল লোডের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুমকিও দিয়েছে ৩০টি ব্যবসায়ী সংগঠন। ইতোমধ্যেই সংগঠনগুলোর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। এ এক্সেল অপসারিত না হলে পণ্য পরিবহন বন্ধের মতো বৃহত্তর কর্মসূচী প্রদানের হুমকিও দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, টেরিবাজার, মাঝিরঘাট, লবণ সমিতি, সার মালিক সমিতি, স্টিল ও সিমেন্ট মালিক সমিতি, দোকানমালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরসহ বিভিন্ন গ্রুপসহ বিভিন্ন সংগঠন মহাসড়কে এক্সেল লোডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
×