মোঃ মামুন রশীদ ॥ ১৯৬৬ সালে কী অঘটনের জন্ম দিয়েছিল ইংল্যান্ড ফুটবল দল? নাহলে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ৫২ বছর কেন অপেক্ষায় থাকতে হলো আরেকটি ফাইনাল খেলার জন্য। এবারও ফাইনাল খেলা হবে কিনা সেটা নিশ্চিত নয়। তবে বর্তমান ইংল্যান্ড দল এখন স্বপ্নের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। তারা কী আজ ২৮ বছর পর সেমিফাইনাল খেলতে নেমে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে আকাক্সিক্ষত শিরোপা লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে পারবে? মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় দ্বিতীয় এই শেষ চারের লড়াই। ৫২ বছর আগের দলটিতে যারা ছিলেন সেই ববি মুর, ববি চার্লটন, জিওফ হার্স্ট, জিমি গ্রিভস, গর্ডন ব্যাঙ্কসরা সর্বকালের সেরাদের কাতারে। তাদের ছুঁতে পারবেন নতুন প্রজন্মের হ্যারি কেন, হ্যারি ম্যাগুইর, রাহিম স্টার্লিং, জেসি লিনগার্ডরা? তবে ক্রোয়েশিয়াই বা কেন ছাড় দেবে? ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে এসেই সেমি খেলা দলটি এবার সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। এখন প্রথমবার ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন দেখছে তারা।
আড়াই যুগ পর সেমিফাইনাল। ১৯৯০ সালে সর্বশেষবার শেষ চারে উঠতে পেরেছিল ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ সালে প্রথমবার সেমির মঞ্চ পেরিয়ে ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করেছিলেন মুর, চার্লটন, হার্স্টরা। এর ২৪ বছর পর আবার ১৯৯০ সালে সেমি খেলা ইংল্যান্ড আরও ২৮ বছর অপেক্ষা করেছে এমন অবস্থানে পৌঁছার জন্য। অথচ এবার এই দলটিকে নিয়ে কোন মাতামাতিই হয়নি। কোন দুনিয়া কাঁপানো মহাতারকাও নেই বর্তমান দলে। কিন্তু সেই দলটি কি অদ্ভুত সাফল্যই এনে দিয়েছে। এখন হ্যারি কেন, রাহিম স্টার্লিং, জেসি লিনগার্ড আর হ্যারি ম্যাগুইর অনেক বড় তারকা হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যেই চলতি আসরে সর্বাধিক ৬ গোল করে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার পথে এগিয়ে রয়েছেন কেন। এছাড়া মারকাস র্যাশফোর্ড, ওয়েলবেকরা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন শিরোপা জয়ের। ১৯৬৬ সালে স্যার আলফ রামসের অধীনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংলিশরা। ৫২ বছর পর সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চলেছেন জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় গ্যারেথ সাউথগেট দলকে নির্দেশনা দিয়ে। আর এতেই এবার দুরন্ত হয়ে উঠেছে ইংলিশ শিবির। আরেকটি ‘জুজু’ এড়িয়েছে এবার ইংলিশরা। তিনটি বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে টাইব্রেকার নামের ¯œায়ুচাপ উতরাতে পারেনি তারা, ভাগ্যাহত হয়ে বিদায় নিতে হয়েছে। কিন্তু এবার দ্বিতীয় রাউন্ডে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতে সেই চিরাচরিত ধারায় ‘ব্রেক’ ঘটিয়েছে তারা। সে জন্য স্বপ্নটা এবার বড় হতে শুরু করেছে ইংলিশ শিবিরের। ৫২ বছর আগের সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতেই পারে। সে জন্য অবশ্য আরও দুটি ম্যাচ জিততে হবে। আপাতত শেষ চারের গ-ি পেরোতেই মনোযোগী গ্যারেথ সাউথগেটের দল। কারণ ১৯৯০ সালে সেমিফাইনাল খেলেছিল তারা। এরপর আর শেষ আট পেরোতে পারেনি। সেই খরাও কাটিয়েছে এবার ইংল্যান্ড।
সবকিছু পক্ষেই আছে, ভাগ্যদেবীয় দু’হাত উজাড় করে দিচ্ছেন ইংলিশদের। রাশিয়ায় এখন আলোচিত দল সাউথগেটের শিষ্যরা। আরেকটি আশ্চর্য ঘটনা ইঙ্গিত করছে ইংল্যান্ডের শিরোপা জেতার পক্ষে। সেটি হচ্ছে ১৯৬৬ সালে ইউরোপীয় ফুটবলে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর সঙ্গে মিলে গেছে বর্তমান সময়ের ঘটনাক্রম। ১৯৬৬ সালে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, দ্বিতীয় বিভাগের শিরোপা জিতেছিল ম্যানচেস্টার সিটি, বার্নলি ইউরোপা লীগে কোয়ালিফাই করেছিল এবং চেলসি প্রিমিয়ার লীগ শেষ করেছিল পঞ্চম স্থানে থেকে। এ বছরও ইউরোপ সেরা হয়েছে রিয়াল, পঞ্চম হয়েছে চেলসি, প্রিমিয়ার লীগ জিতেছে ম্যানসিটি এবং বার্নলি ইউরোপা খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে কী ইংল্যান্ড জাতীয় দলই চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছে এবার? প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া অবশ্য তেমন সহজ হবে না। যদিও বিশ্বকাপে এর আগে কখনও মুখোমুখি হয়নি দু’দল। পরস্পরের মধ্যে হওয়া ৭ ম্যাচের মধ্যে ইংলিশদের জয় ৪, ক্রোয়েশিয়ার ২। র্যাঙ্কিংয়েও এগিয়ে আছে ইংল্যান্ড। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২ নম্বরে তারা, আর ক্রোয়েশিয়ার অবস্থান ২০ নম্বরে। তবে এরপরও দুটি বিষয় ক্রোয়েশিয়ার পক্ষেই রায় দেবে আজকের সেমিতে। একটি হচ্ছে- এর আগে বিশ্বকাপের এক মঞ্চে কখনও দুটি ইউরোপিয়ান দলকে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। এবার কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেনকে হারিয়েছে তারা। আরেকটি বিষয়- আগের ৭ মোকাবেলায় মাত্র ২ বার জিতলেও ইংলিশদের জালে ক্রোয়েশিয়ার গোল ১০টি এবং হজম করেছে মাত্র ১৮টি গোল। আর এবার ক্রোয়েশিয়া গ্রুপপর্ব থেকেই দুরন্ত। অন্যতম ফেবারিট আর্জেন্টিনাকে গ্রুপপর্বে ৩-০ গোলে হারিয়েছে মারিও মানদুকিচ, লুকা মডরিচ, ইভান রাকিটিচ, পেরিসিচরা। এর পাশাপাশি তাদের গোলরক্ষক সুবাসিচ এখন নায়ক হয়ে গেছেন। চলতি বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষকদের মধ্যে একজন তিনি। বিশেষ করে স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে শেষ আটে জয়ের পেছনে দুর্দান্ত কিছু সেভ করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি। দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনাল খেলবে ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার খেলতে এসেই শেষ চারে উঠে তৃতীয় স্থান দখল করেছিল তারা। এবার সেই সাফল্যকে ছাপিয়ে যেতে উন্মুখ জøাটকো দালিচের শিষ্যরা। স্বপ্ন পূরণ হওয়ার জন্য তো আজকের ম্যাচটি জিতলেই হয়। সে জন্য প্রস্তুত ক্রোয়েশিয়া, প্রস্তুত ইংল্যান্ডও। আরেকটি হাড্ডাহাড্ডি আকর্ষণীয় লড়াই অপেক্ষা করছে ফাইনালের মঞ্চ লুঝনিকি স্টেডিয়ামে।