ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণের সুদ না কমায় কঠোর হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১১ জুলাই ২০১৮

ঋণের সুদ না কমায় কঠোর হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঘোষণা দেয়ার পরও ঋণের সুদ না কমায় কঠোর হচ্ছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। যেসব ব্যাংক সুদ কমাতে ব্যর্থ হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করা হবে। ইতোমধ্যে ব্যাংকঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে অর্থাৎ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। সংগঠনটির এই ঘোষণার আগে এবার বাজেটে কর্পোরেট ট্যাক্স আড়াই শতাংশ কমানো হয়। এতে করে ব্যাংক পরিচালনা খরচ ব্যাপকহারে হ্রাস পাবে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিএবির এ সিদ্ধান্ত মাত্র দুই একটি ব্যাংক বাস্তবায়ন করেছে। বেশির ভাগ ব্যাংক এখনও তাদের পরিচালনা পর্ষদে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে চলতি সপ্তাহে বাকি ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর এই ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংকঋণের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটর করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের। সূত্রমতে, প্রথম পর্যায়ে ব্যাংকগুলো শুধু শিল্প ঋণে ৯ শতাংশ সুদ নেবে। আর আমানতকারীদের তিন মাস মেয়াদী আমানতে সুদ দেবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে অন্য সব ক্ষেত্রে সুদহার কমানো হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্দেশে ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংকঋণ বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এ জন্য ইতোমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংগুালোকে এটি বাস্তবায়নে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বেসরকারী ব্যাংকগুলোকেও এটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংকিং খাতের খেলাপী ঋণ নিয়েই শুধু আলোচনা হয়। কিন্তু এ খাতে যে অনেক বড় অর্জন আছে সেসব বিষয়ে কেউ নজর দেয় না। আমানত সংগ্রহ, নতুন শাখা খোলা, দশ টাকায় এ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ, ঋণ বিতরণ, লভ্যাংশ প্রদান এসব ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে গত দশ বছরে ৩০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ দিকে, সুদের হার কমানোর ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গবর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে ব্যাংকার্স সভা নামক ওই সভায় ডেপুটি গবর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, এক অঙ্কে ঋণের সুদহার কার্যকর করতে কারও কোন দ্বিমত নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ। কয়েকটি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সভায় এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে। আর যেসব ব্যাংক এখনও চূড়ান্ত করেনি তারাও চলতি সপ্তাহেই পরিচালনা পর্ষদের সভায় এটি চূড়ান্ত করবে। তিনি বলেন, বেসরকারী ব্যাংকগুলো এখন থেকে সরকারী আমানত পাবে ৬ শতাংশ সুদে। সরকারী ব্যাংক ও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারী ব্যাংকে আমানত রাখতে এর বেশি সুদ দাবি করবে না। এতে ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে আর কোন বাধা থাকবে না। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে দেশের অর্থনীতিতে শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরি, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান বাড়াতে ও আমদানি রফতানি বাণিজ্যকে আরও গতিশীল করতে মূলত এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ২০ জুলাই ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বেসরকারী ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন-বিএবি। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে সেদিন ব্যাংক হলিডে থাকায় ২ জুলাই থেকে কয়েকটি ব্যাংক এটি কার্যকর করেছে বলে জানা গেছে। এবিবি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চায় ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নেমে আসুক। এটি কিভাবে কার্যকর করব সেই সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে বলেছে। তবে এটি কার্যকর করতে গিয়ে যাতে কোন নৈরাজ্য বা অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি সুন্দরভাবে দায়িত্ব নিয়ে কার্যকর করতে হবে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়। সঙ্কট থেকে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদ হার। আমানতকারীকে কোন কোন ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে শুরু করে টাকার টানাটানি দূর করতে। আবার আমানতের উচ্চ সুদের হারের কারণে বিনিয়োগের সুদ হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে যায়। এই বাস্তবতায় সুদ কমাতে উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার।
×