ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাকিদ হায়দার

সহজ কথন

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ৬ জুলাই ২০১৮

সহজ কথন

আজকাল সব কিছুই দৃশ্য থেকে দৃশান্তরে চলে যাচ্ছে। তারই মাঝখানে হেমন্তের আকাশ এখন যেন খিল খিল করে হাসছে সুনীল আনন্দে। সেই হাসি, সেই আনন্দের ছটা যেন রুপালি রোদ হয়ে ঝরে পড়েছে গাছের সবুজ পাতায় দূর অরণ্যে, চারদিকের তরুলতায় প্রান্তরে প্রান্তরে, এমনকি ভোরের শিশির নিজেই কেঁদে ভিজিয়ে দিয়েছে সবুজ দূর্বা ঘাস। সেই শিশির বাতাসের সঙ্গে নাচতে নাচতে রাতভর গান গাইতে গাইতে এসে জড়িয়ে ধরল গোলাপ মল্লিকা আর গেদা ফুলের হাজার রকমের পাপড়িকে ও প্রিয়বন্ধু হাস্না হেনাকে। এমন সময় মা বললেন ভোর হয়েছে দোর খোল ঠিক তখনই সেই হাস্না হেনার বন থেকে দৌড়ে এলো চঞ্চল টুনটুনি আর তার সখী তারাও আমার মায়ের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলল তাকিয়ে দেখ, জানালার শিকে পড়েছে দিনের প্রথম সূর্য। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম টুনটুনি দম্পতি নিমেষে উধাও মনে হলো তারা দু’জনেই আমার অন্য ভাইবোনদের জানাতে গিয়েছে ভোর হয়েছে। ঘুম থেকে ওঠো, হাত মুখ ধোও, পড়ালেখা করতে যেতে হবে। সেই অস্থির চঞ্চল এবং বিচলিত দম্পতি এ জানালা, সেই জানালায় গিয়ে বোধহয় ওই একই বারতা শুনিয়েছে। ভোর হলো, দোর খোল, দিনের প্রথম সূর্য তোমাকে ডাকছে। সেই টুনটুনিদের আমি তো বন্ধু নই বাড়ির জানালার সামনে কয়েকটি লাল টুকটুকে সন্ধ্যা মালতির গাছ শীতের শিশিরে জবুথবু এবং ওই সন্ধ্যা মালতির সঙ্গে চঞ্চল পাখি দুটির খুব ভাব। ভালবাসা গভীর হয়ত তাদের কানে কানে পৌঁছে দিচ্ছে ওই একই বারতা ভোর হয়েছে। শামীম মোল্লার বাঁশ বাগানের মাথার উপর সূর্যের প্রথম আলো এসে পড়েছে, সন্ধ্যা মালতি, চন্দ্র মল্লিকা, শিউলি তোমরা ঘুম থেকে ওঠো, -টুনটুনির আহ্বানে সাড়া না দিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা শিউলি জানাল আমরা জেগে জেগেই সূর্যকে ডেকে আনলাম, শিউলির কথার ভেতরে দুঃখ-বেদনার সুর সহজে বুঝতে পেরে টুনটুনিরা দূরে উড়ে যেতে যেতে শুনতে পেল দোয়েলের শিষ। অস্থির চড়ুইয়ের দৌড়াদৌড়ি দেখতে পেল এবং কর্কশ স্বরে ডেকে উঠল দাঁড়কাক। এমন সময় হাসির তরল গুঞ্জন ভেসে এলো বাতাসে। এক ঝাঁক মৌমাছি গান গাইতে গাইতে, হাকিম শেখের দোতলা বাড়ি পেরিয়ে চলে এলো উত্তরের রাজাপুরের দিকে। কিছুটা সময় পরেই মিলিয়ে গেল মৌমাছিদের পাখার তরঙ্গ ঠিক তখনই আমার কাছে যেন এগিয়ে এলো আমাদের পুকুরের পানিতে ভেসে থাকা সাদা আর গোলাপি রঙের শাপলা ফুল। তারা অভিযোগ করল এই শীতে তুমি তো এক দিনও পুকুরে স্নান করতে এলে না। একবারও আমাদের দিকে চেয়ে দেখলে না। দুষ্ট ভ্রমর আমাদের নিঃস্ব করে নিয়ে গেছে, আমাদের সুবাস। তার সঙ্গে ভোরের শিশির দিয়েছে ভিজিয়ে। আমাদের সাদা আর গোলাপি পাপড়িগুলো দুষ্ট ভ্রমর ফিরে গিয়েছে তার কুঞ্জ বনে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে। ওদের অভিযোগ শুনে আমার মনের ওপরে, চেতনার ওপর, সেই সকাল থেকে ঝরছে এক বিষণœ বোধের বিন্দু বিন্দু শিশির। যেন চারদিকটাই গিয়েছে ভিজে। আমার লুকানো কান্নার মতো। তখনই হঠাৎ মনে হলো এতক্ষণ যা ভেবেছিলাম সবই আমার হারানো অতীত। হারানো কুসুমেষু ভোর। খেজুরের গাছে দোয়েল, ফিঙ্গের নাচানাচি আমার গ্রাম দোহার পাড়ার সেই আবু তাহের গাছির শীতার্ত মুখের চেহারা, দুই কান গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে তিনি তরতর করে উঠে যাচ্ছেন এই খেজুর গাছ সেই খেজুর গাছে। আমি যে তারই মতো একদিন খেজুর গাছের গাছি হতে চেয়েছিলাম। যেমন- রবীন্দ্রনাথ হতে চেয়েছিলেন খেয়া ঘাটের মাঝি। আজকাল প্রায়ইশ মনে পড়ে আমাদের নাগরিক জীবন থেকে কি যেন হারিয়ে গেছে। মুছে গিয়েছে অনেক স্মৃতি। শৈশব-কৈশোরের শিউলিতলা আবু তাহের গাছির সেই নিঃসঙ্গ খেজুর গাছ। কি হারালাম? কি বা তার নাম? হয়ত তার নাম সুখের স্মৃতি শৈশব- কৈশোরের ঘুড়ি ওড়ানোর দিন। আমাদের সরলতার কাল। আমাদের সুখের ছবি অথচ এই আমরাই বারো মাস ধরে বেড়ে উঠি। চালাক চতুর হই আরও একটু বড় হলে হয়ে যাই অভিজ্ঞ। আস্তে আস্তে হারান নাপিতের সেই চকচকে ক্ষুরের মতো। ধারাল বুদ্ধিও অর্জন করি একদিন। আমার তো মনে হয় বড় না হয়ে চির দিনই যদি ছোটই থাকতাম মানুষের বাড়ি আম, কাঁঠাল, পেয়ারা পেরে খেলেও এমনকি দোহার পাড়ার ট্রাক ড্রাইভার আয়াজ উদ্দিনের ল্যাংরা মায়ের পাকা পেঁপে চুরি করে খেলেও বয়সীরা বলতেন শৈশব-কৈশোরে ছেলেরা ওই রকম করেই থাকে আমরাও করেছি। হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করি আমি বড় হতে চলেছি। ভাইদের ভেতরে আমি লম্বা হয়ে গেলাম। যেন হঠাৎ করেই সেই ১৯৫৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বাড়ির বাগানের পাকা সুপারি পাড়তে কখন যে ৩০-৩৫ ফুট উঁচু সুপারি গাছ থেকে পড়ে গেলাম। গলার হাড়, ডান হাত ভেঙ্গে মাস খানেকের বেশি পাবনার সদর হাসপাতালে থাকতে থাকতেই একদিন জ্ঞান ফিরে এলো। পিতা তাড়াতাড়ি করে ধর্মীয় যজ্ঞের ব্যবস্থা করলেন। শহরের নামী-দামী মাওলানা দিয়ে। লাল টুকটুকে সুপারি পাড়তে গিয়েছিলাম মেজ কাকার মেয়ে কনাকে সঙ্গে নিয়ে, তার আগে আমার ছোট বোন হেনার সঙ্গে মারামারি করেই পাড়তে গিয়েছিলাম ওই লালটুকটুকে সুপারি। দেখতে অনেকটা ছিল ফিঙ্গে পাখির লেজের নিচে যে পালকগুলো লালটুকটুকে সেই রকম। তখন চতুর্থ শ্রেণীর পরীক্ষা শেষ হয়েছিল ডিসেম্বর মাসেই। আর ওই মাসে আমার পতন হয়েছিল সুপারি গাছ থেকে। পাড়ার ফনি দা বললেন শোন, হঠাৎ তোর লম্বা হওয়ার কারণ হলো গাছ থেকে পতন। তার মানে তুই এখন বড় হয়ে যাচ্ছিস। বড় হওয়া মানে যাবতীয় স্মৃতির জগত থেকে দূরে চলে আসা। বড় হওয়া মানেই ঘুড়ি ওড়াতে না পারা। ‘নাই ক্ষণাই’-এর সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে মারামারি করতে না পারা। এক অদৃশ্য সুতায় ক্রমাগত জড়িয়ে যাওয়া। শেয়ালের ফাঁদে, ইঁদুরের গর্তে, সাপের খোলসে পা দেয়া। আমিও বড় হতে চাই নাই। ফনিদার একটা দীর্ঘশ্বাস যেন শুনেছিলাম সেদিন। কিছু দিন পরে হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেলেও সেই টুনটুনি সেই চড়ুইয়ের জগত থেকে যেন নিজেকে নিজের অজান্তেই ঘটিয়ে নিতে না নিতেই সেই ফনিদা আর একদিন আমাকে দেখতে এসে জানালেন। দেখতে দেখতে আমার বয়স সাতচল্লিশ বছর হবে এই পৌষ মাসেই। কাঁচা চুলগুলোর মাঝখানে দু-একটি পাকতে শুরু করেছে। বোধ করি কয়েক বছরের ভেতরে মনি কাকার মতো দেখতে হয়ে যাব। মাথায় সাদা চুল, গোঁপ সাদা, এমনকি ভ্রু দুটো সাদা হয়ে কদম ফুলের পাপড়ি হয়ে যাবে আমার মাথা। তাতেও আমার দুঃখ নাই। দুঃখ হলো আমার হারিয়ে যাওয়া শৈশব ছিল, ছিল কৈশোর, সুন্দর সরল অনাড়ম্বর একটি শৈশব। সব কিছুই কে যেন কেড়ে নিয়ে গেল। কিছু একটা বুঝে উঠবার আগে। কুঞ্জে কুঞ্জে পাখিরা হয়ত গাইবে আকাশে ঠিক আগের মতোই রংধনু উঠবে। কিন্তু তুই আর কোনদিন গাছ থেকে সুপারি পাড়তে যাবি না। এমনকি খুঁজেও পাবি না কি হারালাম। তুই আমি মামা, বাবা, মেসো, মা সবাই একে একে হারিয়ে ফেলি শুভ্র শৈশব-কৈশোর, রাধা এবং কৃষ্ণ কুঞ্জ বনে গিয়েছিলেন তাদের যৌবনে। সেই যৌবন একদিন ফাঁকি দিয়ে চলে যায় নদীর স্রোত, সময়, তুই আমি সকলেই। চলে যেতে হবে তারা যাবি গোরস্তানে আমরা যাব...পরের কথাটুকু সেদিন ফনিদা না বললেও হঠাৎ করে তিনি চলে গেলেন ঈশ্বরদী থেকে ফেরার পথে বাস দুর্ঘটনায়। ফনিদার হঠাৎ চলে যাওয়ায় পাড়ার সকলেই খুব কষ্ট পেয়েছিলেন, স্কুল মাস্টারটা অনেক ছেলেমেয়েদের বিনা টাকায় ইংরেজী, বাংলা পড়াতেন। আমাদের পিতা শেখ মোহাম্মদ হাকিম উদ্দিন আমাদের কয়েক ভাইবোনকে একত্রিত করেছিলেন শিমুল তুলা ছাড়ানের জন্য। শিমুল তুলা চৈত্র শেষে তার ফলের ভেতর থেকে এক সময় ফেটে যায়। তখনই শিমুল গাছ থেকে শিমুলের ফলগুলো বস্তাভর্তি করে বাড়িতে এনে দিন কয়েক রাখার পরে এক ধরনের গন্ধ বের হয়। পরে গন্ধ ছড়ানো ফলগুলো ফাটিয়ে তুলা বের করতে হয়। পিতা সেই কর্মটি করিয়ে নিয়েছিলেন আমিসহ আমার ছোট ভাইবোনদেরর নিয়ে আর তখনই পিতা ‘সিন্ডেরেলার গল্পটি’ তিনি ব্রিটিশ ইংরেজীতে মুখস্থ শুনিয়েছিলেন বিরতিহীনভাবে আমাদের এবং বলেছিলেন সব বেঁচে থাকলে ওর মুখ থেকে সেক্সপিয়ারের ‘হ্যামলেট নাটকের কিছু ডায়ালগ শুনিয়ে দিতে বললে ফনি শুনিয়ে দিয়ে খুশি হতো। সেই ফনিদা নেই, নেই আমাদের শৈশব-কৈশোর। তবে ফনিদার কুঞ্জ বন শব্দটি দীর্ঘদিন আমার মাথার ভেতর আটকে ছিল। যে কুঞ্জ বনে একদা কৃষ্ণ বাঁশি বাজাতেন। গরু চড়াতেন সেই কুঞ্জ বনে রাধিকা যেতেন। তার প্রেমাস্পদের নিকট সুখ সঙ্গ দিতে এবং নিতে, যমুনাতে জল আনবার ছল করে চলত তাদের অভিসার। অতি সম্প্রতি এমন একটি অভিসারের আয়োজন করেছিলেন, রাজশাহীর ‘কবি কুঞ্জ’ নামের একটি শিল্প সাহিত্যের সংগঠন। বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে শিল্প সাহিত্যের চর্চা, ১৯৭৫ সালের পর থেকে অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ হয়েছিল এং তার স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়েছিল বেশ কয়েক বছর পর। মৌলবাদীদের আধিপত্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে লুপ্ত হয়েছিল বাঙালীর যাবতীয় সংস্কৃতি শিল্প এবং সাহিত্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শহিদ ইকবাল ‘চিহ্ন’ নামের একটি লিটল ম্যাগাজিন বের করলেও অন্য কোন প্রতিষ্ঠান তেমন কোন লিটল ম্যাগাজিন কিংবা মাসিক, ত্রৈমাসিক, পত্রিকা বের করেছিল কিনা আমার জানা না থাকলেও এই বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আম বাগানের নিচে আয়োজন করেছিলেন চিহ্ন ছোট কাগজের জন্ম উৎসব। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে কবি, ছড়াকার, গল্পকার কথকসহ ভারতের কলকাতা থেকে কয়েক কবি এসেছিল সেই জন্ম উৎসবে। প্রফেসর আনিসুজ্জামান, সেলিনা হোসেন, বিশিষ্ট কথা শিল্পী হাসান আজিজুল হক ও ড. অসিত সাহা এবং উদ্বোধক ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ মিজান উদ্দিন। চিহ্ন ছোট কাগজের সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক রহমান রাজু তবিবুর রহমান তৌফিক জহুরী এবং মর্মরিদ ঊষা ও সৈকত আরেফিরনসহ অনেক কবি। অপর দিকে ২০১০-২০১৩ রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে আব্দুল মান্নান। যিনি কবি আসাদ মান্নান নামে সমধিক পরিচিত। কবি আসাদ মান্নান রাজশাহীতে শিল্প সাহিত্যে এক নতুন জোয়ারের সৃষ্টি করেছিলেন। সমগ্র উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলায় গিয়ে তিন স্থানীয় কবিদের নিয়ে শিল্প সাহিত্যের আসরে তরুণ কবিদের উৎসাহিত করতেন। নবীন এবং প্রবীণ কবিদের। সেই প্রবীণদের ভেতরে কবি ওমর আলী যিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার পেলেও তার আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। সে কথা জেনে কবি আসাদ মান্নান কবি ওমর আলীর চর কোমরপুরের বাড়িটি নির্মাণের জন্য প্রচুর আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন। তখন পাবনার জেলা প্রশাসক ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। জনাব রহমান তার কার্যকালীন সময়ের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কর্মের ভেতরে ঈশ্বরদী, নগরবাড়ী, রেলওয়ের জমি হুকুম দখল করতে গিয়ে কিছুটা অসুবিধা হয়েছিল। সেই অসুবিধার সৃষ্টি করেছিল কতিপয় ভূমিদস্যু। অপরদিকে পাবনা শহরের জামতলা রোডের পশ্চিম দিকের প্রায় বিঘাখানেক জমি দখল করে রেখেছিল ভূমি দস্যুরা। ওই জমিটির মূল মালিক ছিলেন পাবনার পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ড যখন কোন কাজে লাগাতে পারেনি তখনই সেই জায়গাটিতে পাবনার শিল্পকলা একাডেমির জন্য জায়গা দখল নিতে গিয়ে প্রশাসন বনাম ভূমি দস্যুদের ভেতরে গ-গোল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। জেলা প্রশাসকের দৃঢ় মনোবলের কারণে এক পর্যায়ে ভূমি দস্যুদের বাড়িঘর রাতারাতি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। জনাব মোস্তাফিজুর রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছিলাম এই বলে যে, জায়গাটির পশ্চিমে জেলা জজের বাড়ি। ঠিক উত্তরেই সুচিত্রা সেনের বাড়ি। কবি আসাদ মান্নান বিভাগীয় কমিশনার থাকাকালীন সময়ে যে শিল্প সাহিত্যের আবহ সৃষ্টি করেছিল সেটি অবশ্যই স্মরণযোগ্য। এমনকি কবিদের নিয়ে বসন্তকালীন কবিতা উৎসবের ব্যবস্থা করেছিলেন রাজশাহী জেলা পরিষদ ভবনে, এমনকি খোলা মঞ্চেও একাধিকবার কবিতা পাঠের ব্যবস্থা করায় ঢাকার অনেক কবিকেই যেতে হয়েছিল আসাদ মান্নানের আমন্ত্রণে রাজশাহী কবিতা পাঠের আসরে। সৈয়দ শামসুল হক আনোয়ারা সৈয়দ হক, রফিক আজাদ, দিলারা হাফিজ, নির্মলেন্দু গুণ, মুহাম্মদ নুরুল হুদা, টোকন ঠাকুর, নাসির আহাম্মেদ, হাবিবুল্লাহ সিরাজি, আরিফ হায়দার, অসীম সাহা, সিহাব শাহারিয়ারসহ সমগ্র বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন নবীন-প্রবীণ কবিরা। সুখের বিষয় প্রায় প্রতি কবিকেই তিনি সম্মানিসহ ট্রেনে প্রথম শ্রেণীর টিকেটের ব্যবস্থা করেছিলেন। পূর্বে কোন বিভাগীয় কমিশনার করেছিলেন কিনা তা আমার জানা নাই। এখন যিনি বিভাগীয় কমিশনার আবদুল হান্নান তিনি একদা আমার সহকর্মী ছিলেন বিসিকে (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা) গত অক্টোবর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে জনাব আবদুল হান্নানের সঙ্গে দেখা হলো রাজশাহীর একটি চায়নিজ রেস্তরাঁয় দুপুরের নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রাজশাহীর ভারতীয় উপ-দূতাবাসের কর্ণধার, শিল্প-সাহিত্য ও কবিতাপ্রেমিক শ্রী অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি কুঞ্জের প্রাণপুরুষ কবি রুহুল আমিন প্রামাণিক। কবি আরিফুল হক কুমার বিশিষ্ট কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকসহ আরও অনেকের ভেতরেই ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার আবদুল হান্নান। সেই দিন দুপুরের ভোজনের পর আবদুল হান্নানকে অনুরোধ করেছিলাম জনাব আবদুল মান্নান (কবি আসাদ মান্নান) বিভাগীয় কমিশনার থাকতে যেভাবে শিল্প-সাহিত্যের বিস্তার এই রাজশাহী বিভাগের হয়েছিল তোমার বেলাতেও হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমার কথায় তিনি খুশি হয়ে জানালেন আমাদের সাতক্ষীরা তো প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গের এবং বাংলাদেশের কবিকুল এসে যদি সাহিত্যমেলায় পড়তে পারে তাহলে রাজশাহী বিভাগীয় শহরে অবশ্যই হতে পারে। তখনই তিনি কবি কুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমারকে জানালেন আগামী মহান বিজয় দিবসের আগে-পিছে শিল্প-সাহিত্যের অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। শুনে সকলে খুশি হলাম। বিশেষত আমরা যারা কবিতার কর্মী ছিলাম। সেই দিনের সেই ভারতীয় উপ-দূতাবাসের দেয়া মধ্যাহ্ন ভোজে। রাজশাহীর কবি কুঞ্জের জন্ম খুব বেশি দিনের নয়। ইতোমধ্যে পাঁচ বছরকাল অতিক্রম করেছেন। তবে পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ২১ অক্টোবর ২০১৬ শুক্রবার কবি কুঞ্জের উদ্বোধনীর দিনে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, হাসান আজিজুল হক, অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি জুলফিকার মতিন অনীক মাহমুদ ঝর্না রহমান, রফিকুর রশিদ, মনি হায়দার নাজমা মান্নান, আসাদ মান্নানসহ বিভিন্ন জেলার এবং বগুড়ার কবি ইসলাম রফিক, সিকতা কাজল, কামরুন্নাহার, কোহেলী অচিন্ত্য চয়ন শিবলি মোক্তাদীর এবং কুষ্টিয়ার আবুল জোয়ারদার, চট্টগ্রামের একদল তরুণ কবিদের সমাগমে সারাদিন যে কোথায় গিয়ে কেটে গেল জানতেই পারলাম না। জানতে পারলাম বরিশালের কবি নাহিদা আশরাফী জানালেন, সমগ্র বাংলাদেশ থেকে কবি কুঞ্জের দুই দিনের কবি জীবানন্দ দাশের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান প্রতিবছরই কবি কুঞ্জের সভ্যরা করে থাকেন। ঠিক তখনই কবি কুঞ্জের আরেক সভ্য কবি কামরুল বাহার আরিফের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম সমগ্র বাংলাদেশ থেকে কতজন কবিতাপ্রেমিক কবি কুঞ্জের এই অনুষ্ঠানে এসেছেন। তিনি জানালেন দুই দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের যাবতীয় খরচা খরচ, থাকা-খাওয়া কবি কুঞ্জের এবং অনেকের জন্যই ট্রেনের ও বাসের ভাড়া আমরাই দিয়ে থাকি। গত রাত পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশ থেকে দু’শ’ আটচল্লিশ জন এই সম্মেলনে এসেছেন। পরের দিন শনিবার। শনিবারে সাত সকালে কবি কুঞ্জে অনুষ্ঠানের মাঠ শাহ মখদুম কলেজের চত্বরে গিয়ে সকলে উপস্থিত হলাম। রাজশাহী শহরে পশ্চিমে আছে দৃষ্টিনন্দন ১২৫ বিঘা জমির ওপরে একটি আম বাগান। সেই বাগানের ভেতরে আছে পিকনিকের সুবিশাল ব্যবস্থা। প্রায় শ’ দুয়েক লোকের সকালের নাস্তা দুপুরের উৎকৃষ্ট মানের খাবার ব্যবস্থাসহ কবিতা পাঠের এবং অভিনয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন কবি কুঞ্জের কৃষ্ণেরা। কবি আসাদ মান্নান, ইসলাম রফিক, কামরুল বাহার আরিফ ও আমিসহ দেশে অনেকেই কবিতা পাঠ করেছিলেন এবং গান গেয়ে শোনালেন নাজমা মান্নান, সিকতা কাজল এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফ হায়দার একক অভিনয় দেখিয়ে সকলকেই মুগ্ধ করলেন। অনুরূপভাবে মুগ্ধ করলেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, তিনি রাজশাহীতে একটি গানের দল বানিয়েছেন। সদস্যরা অধিকাংশই নিম্নবিত্তের ওই নিম্নবিত্তের মানুষগুলো তাদের কাজকর্ম ফেলে প্রায়শই। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গান-বাজনা করে বেড়ান, করে থাকেন। ইতোমধ্যেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে দলটির নামও হৃদয়গ্রাহী। ‘মাতাল বাউল’ সেই দিন ছিল ২২ অক্টোবর শনিবার। শনিবারের সন্ধ্যায় শুরু হয়েছিল শাহ মখদুম কলেজের মাঠে প্রচুর লোকের সমাগম ও অনেক দর্শকের উপস্থিতিতে বইমেলা এবং কবি কুঞ্জের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের ছোট গল্প নিয়ে আলোচনা করলেন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক গল্পকার জাকির তালুকদার, রফিকুর রশিদ, পশ্চিম বঙ্গের অমর মিত্র এবং মনি হায়দার ও আরও অনেকেই। পরের সেশনে শুরু হয়েছিল কবিতা পাঠের আসর। কবি জুলফিকার মতিন কবি সব্যসাচীদেরা সিরাজদৌল্লা বাহার, কবি অচিন্ত্য চয়ন, বাবুল জোয়ার্দার এবং বান্দরবানের কবি, বাবুল চৌধুরী, চট্টগ্রামের উজ্জ্বল একঝাঁক কবি বগুড়ার তরুণ কবিদের কয়েকজন আমরা যারা ঢাকা থেকে গিয়েছিলাম তাদের ভেতরে কবিতা পাঠ করেছিলাম মিলন সব্যসাচী এবং আমি। সুখের বিষয় কবি জীবানন্দ দাশ পুরস্কার এবার আমাকে ক্রেস্টসহ দিলেন কবি কুঞ্জ কর্তৃপক্ষ, যার অর্থমূল্য অকল্পনীয় শেষের অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিয়েছিলেন, কথা শিল্পী। কথার নায়ক হাসান আজিজুল হক। তিনি তার বক্তৃতায়ই জানালেন কবি কুঞ্জের যাত্রার কথা এবং আরও জানালেন উপস্থিত সুধীদের বাংলাদেশের ‘হায়দার’ পরিবারের ভাইদের কথা যারা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে ধ্রুবজ্যোতির মতো উজ্জ্বল করিয়াছে বাংলাদেশের সাহিত্য, ক্রমান্বয়ে আমাদের কয় ভাইয়ের নাম বলার পরে জানালেন হায়দার পরিবারের অগ্রজ জিয়া হায়দার তিনি ১৯৫৬ সালে আমার সহপাঠী ছিলেন এই শহরের রাজশাহী কলেজের, তিনি আনন্দের সঙ্গে জানালেন তরুণ কবিদের কথা এবং দুঃখ প্রকাশ করলেন তরুণ কবিদের ভবিষ্যত নিয়ে, শেষমেশ আমার জীবানন্দ দাশ পুরস্কারপ্রাপ্তির ওপর আমাকে অনুভূতি জানাতে বলা হলে জানিয়েছিলাম ২০১২ সালে প্রথম আমাকেই পরস্কারে ভূষিত করেছিলেন টাঙ্গাইলের ভাষাসৈনিক সোফিয়া খাতুন খান স্মৃতি পুরস্কার, যেটি অরণি সাহিত্য পুরস্কার। ১৭ ডিসেম্বর ২০১২তে প্রদান করেছিলেন কবি বুলবুল খান মাহবুব, সভাপতি ছিলেন আনিসুর রহমান মিয়া, ফজলুল রহমান খান ফারুক। অরণি সম্পাদক কবি মাহমদু কামাল, অপরদিকে বগুড়ার লেখক চক্র ২০১৩ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর আমাকে ওই টাঙ্গালের মতোই অর্থসহ ক্রেস্ট দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন লেখকচক্রের সভাপতি কবি ইসলাম রফিক ও সাধারণ সম্পাদক আমির খসরুর সেলিম সেখানে অনুভূতি জানাতে গিয়ে সত্য কথা বলতে হয়েছিল, গত শতকের শেষের দিকে ফরিদপুর সাহিত্য সংসদ থেকে আপনাকে পুরস্কার দেব। শুনে আনন্দিত হলাম পরে তারা জানালেন কিছু অর্থের সংস্থান করে দিতে হবে। আমি তাদের বিমুখ করে বিদায় দিয়েছিলাম। অনুরূপ আর একটি ঘটনা যশোরের জনা কয়েক কবিতাপ্রেমিক যশোর সার্কিট হাউসে এসে আমাকে জানালেন তারা আমাকে পুরস্কার দেবেন। একজন অখ্যাত ব্যক্তির নামে কথা প্রসঙ্গে জেনেনিলাম সেই অখ্যাত ব্যক্তির নাম, বিসিক শিল্প নগরী, জুম জুমপুরে একটি শিল্প প্লটের প্রয়োজন তার। আমি যদি পুরস্কার গ্রহণে রাজি হই তা হলে উক্ত শিল্প মালিক অর্থ প্রদানে রাজি আছেন। আরও জানলাম ভদ্রলোক নিজে একজন চোরা কারবারী। তিনি এখন শিল্পপতি হওয়ার পথে যশোরের শিল্প নগরীতে যদি একটি কারখানা স্থাপন করতে পারেন। তবে তিনি সমাজের শিল্পপতি হিসাবে গণ্য হতে পারেন। যশোরের তরুণ কবিদের দোষ দেয়াটা সমীচীন নয়ম কিন্তু তারা জানতে পারিনি, আমি উক্ত পুরস্কার গ্রহণে অসম্মতি জানাব। অথচ টাঙ্গাইল, বগুড়া, রাজশাহীতে তারা যেভাবে পুরস্কার দিয়ে একজন কবিকে সম্মানিত করলেন সেটি অবশ্যই স্মরণযোগ্য। উপস্থিত স্রোতাদের ভেতর থেকে গুঞ্জন শুনলাম এবং অনেকেই জানালেন আজকাল টাকা দিলেই ক্লাবের সভাপতি থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্যের সভাপতি হওয়া যায়। গত অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বগুড়া লেখক চক্রের ২৮তম জন্মবার্ষিকীতে গিয়েছিলাম প্রধান অতিথি হয়ে। সঙ্গে ছিলেন গল্পকার অনুবাদক, নরুল করিম নাসিম এবং ছড়াকার আলাম তালুকদার দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হয়েছিল বগুড়ার উডবার্ন হলে স্রোতাদের অভাবনীয় সহযোগিতা লক্ষ্য করলাম। সভাপতি ছিলেন কবি আমিনুল ইমলাম। দুই সন্ধায় গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও ছড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এবং দুই সন্ধায় বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় গান করেছিলেন দুজন শিল্পী সিকতা কাজল এবং একজন অন্ধ গায়ক। ৯ অক্টোবর রবিবারে বগুড়ার লেখক চক্রের চক্রীদের নিয়ে গিয়েছিলাম রবি ঠাকুরের কুটিবাড়ি দেখতে, পরিসরে যাবার পথে পড়েছিল সেই বিখ্যাত নন্দী গ্রাম, যে গ্রামের লোকেরা চাঁদের ভেতরে দেখতে পেয়েছিল সাঈদীকে ২০১৪ সালে। তবে শহর থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যেতে কবি আবদুল খালেক গাড়ি থামিয়ে আমাদের নিয়ে গেলেন একটি বধ্যভূমিতে। ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করেছিল পাকিস্তান আর্মিরা, যারা বয়সে ছিলেন তরুণ গ্রামবাসী এবং সকলে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা তাদের এক সারিতে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে যাদের হত্যা করেছিলেন সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম। ১. শহীদ সাইফুল ইসলাম ২. জালাল উদ্দিন জালাল ৩. আব্দুল কুদ্দুস নান্টু ৪. আব্দুল কাদের বাদশা ৫. বাচ্চু শেখ বাচ্চা মিয়া ৬. আব্দুল মান্নান মান্না ৭. আলতাফ আলী আলতা ৮. আব্দুস ছবুর ভোলা ৯. মহিলা মুক্তিযোদ্ধা নূরজাহান লক্ষ্মী ১০. মোফাজ্জল হোসেন আবুল ১১. আব্দুল হান্নান, ১২. ওয়াজেদুর রহমান টুকু ১৩. ফজলুর রহমান খান ফজলুসহ অজ্ঞাতদের নিকটে যে পুকুরটি আছে তারই পাড়ে হত্যা করে ফেলে দিয়েছিল পুকুরের পানিতে। আব্দুল খালেক একাধারে শিশু সংগঠক এবং বগুড়ার লেখক চক্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি যখন ওই হত্যাকা-ের বর্ণনা যখন দিচ্ছিলেন তখন লক্ষ্য করলাম তার চোখ দুটি ভেজা। পতিসরে গিয়ে ঠাকুর বাড়ির স্থাপত্য দেখলাম এবং একই সঙ্গে দেখলাম ১৯৩৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন, পতিসরের কুঠিবাড়ির পূর্ব দিকেই সেই বিখ্যাত নাগর নদী। পতিসরে বসেই রবীন্দ্রনাথ ‘ইছামতি’ কবিতাটি লিখেছিলেন, ছিন্নপত্রের ১৪ সংখ্যক চিঠিও লেখা হয়েছিল ০৬ (ছয়) মাঘ ১৮৯১ সালে। তিনি ওই চিঠিতে খিলেছিলেন ‘আমার বোট কাছারি থেকে অনেক দূরে এনে একটি নিরিবিলি জায়গায় বেঁধেছি’। সেই বোটটিকে দেখলাম সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির অজস্র ছবি এবং ওই বোটটির বিশাল নোঙ্গর। নাগর নদীতে মুখ ধুতে গিয়ে নিজেকে খুব শ্রভ্র মনে হর। কিন্তু নদীটির পশ্চিম পাড়েই নদীর ভেতরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের এক তলা- দোতলা দোকান উঠেছে ৯টি। সেখান থেকে কাছারি বাড়ির দূরত্ব ৩-৪ মিনিটের তখন দুর্গোৎসব চলছিল। ম-পে দেখলাম প্রচুর লোকের সমাগম। ছোটকালে যেভাবে আমাদের পাবনার পূজাম-পে দেখেছি এবং সেই ভাবে গিয়েছিলাম দুর্গা ঠাকুরকে দেখতে। এবারও গিয়েছিলাম ঠিক সেই ভাবে। কিন্তু আমার মাথায় সাদা চুল। তাই আমার অতীত নিয়ে কিছুদিন আগে একটি কবিতা লিখেছিলাম। ‘যে আমারে কাঁদায় সে কেন কাঁদে না নিজে।’
×