ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী পোশাকে সয়লাব

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১০ জুন ২০১৮

বিদেশী পোশাকে সয়লাব

ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ মানেই উৎসব। এই আনন্দ উৎসব উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ নতুন পোশাক। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার কাছে নতুন পোশাক অন্যতম আবেদন নিয়ে আসে। আর নতুন পোশাক ছাড়া ঈদের আমেজ থাকে না শিশুদের মাঝে। অভিভাবকরাও নিজেদের পছন্দের কথা না ভেবে গুরুত্ব দেন সন্তানদের আনন্দে। ঈদ এখনও কিছুটা দূরে। তবে ঈদের বাজার জমে উঠেছে রমজানের গোড়ার দিকেই। দেশী ফ্যাশন হাউসগুলোয় পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে বেশি। বয়সে তরুণ ক্রেতারা বেশি ঝুঁকছে দেশী পোশাকের দিকে। কিন্তু তারপরও বিদেশী পোশাকের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। প্রতিবেশী দেশ থেকে চোরাই পথে আসছে নিম্নমানের পোশাক। এসব পোশাকের সঙ্গে দেশী পণ্যকে অসম প্রতিযোগিতায় লড়তে হচ্ছে। গত কয়েক বছরের মতো এবারও ঈদের পোশাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রভিত্তিক পোশাকের দিকেই আকর্ষণ বেশি। চলছে তার আধিপত্য। ঢাকাসহ সারাদেশের অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে দেশী পোশাকের তুলনায় বিদেশী পোশাকের দিকেই ক্রেতাদের বেশি মনোযোগ। এবার ঈদের বাজারে এসেছে হিন্দী সিনেমার নামে একাধিক পোশাক। ভারতীয় সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালের নায়িকাদের ব্যবহৃত পোশাকের আদলে তৈরি পোশাক কম বয়সীদের পছন্দের শীর্ষে। বিশাল একটি মার্কেটের নিচতলয় শিশুদের পোশাকের দোকানগুলোতে রয়েছে প্রধানত বিদেশী পোশাকের সম্ভার। গত কয়েক বছরের মতো এসব দোকানে বেশি বিক্রি হচ্ছে বিদেশী পোশাক। এসবের চাহিদাও বাড়ছে। ভারত, চীন ও থাইল্যান্ডের পোশাকে সজ্জিত দোকানপাটে উপচে পড়ছে ভিড়। দেশীয় পোশাকের মান ভাল হলেও বিদেশী পোশাকের প্রতি আগ্রহ কোনভাবে কমছে না। ‘দেশী পণ্য কিনে হব ধন্য’ স্লোগান এসব ক্রেতাদের মনে কোন রেখাপাত করছে না। দেশী ফ্যাশন হাউসের পোশাকে দেশী সংস্কৃতির সঙ্গে পাশ্চাত্যের মিশ্রণে আধুনিকতার ছোঁয়া আনা হলেও তাতে আগ্রহ বাড়ছে না। নিজস্ব ডিজাইনে কারিগর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এমন দেশী পোশাক বিক্রি হচ্ছে। দেশী ব্র্যান্ডের পোশাকের তুলনায় দেশে বুটিকহাউসের পোশাকের দাম তুলনামূলক কম। বেশিরভাগ দেশী পোশাক উন্নতমানের কাপড় পাকা রং আর ভাল সুতা ব্যবহার করা হয়েছে। ঈদ উৎসব ঘিরে আমদানি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি। কিন্তু ভারতীয় শাড়িতেও বাজার সয়লাব। এসবের অধিকাংশই চোরাই পথে আসা। সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার হওয়া এসব শাড়ি ও পোশাক প্রকাশ্যে ঢাকার বিপণিবিতানগুলোতে ঠাঁই পাচ্ছে। শুধু শাড়ি নয়, সালোয়ার-কামিজ, পায়জামা, পাঞ্জাবিও আসছে ভারত হতে। কেবল বিদেশী বলেই ক্রেতাদের মনোজগতে যে ধারণা বদ্ধমূল, তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দেশী পোশাক গুণে মানে ডিজাইনে বিদেশী হতে কম নয়। তথাপি চোরাইপথে আনা এই নিম্নমানের পোশাকগুলো ভাল বিক্রি হচ্ছে কোন কারণ ছাড়াই। বাংলাদেশ পোশাক রফতানিকারক দেশ। আয়ের সিংহভাগ আসে এই পথ হতে। তারপরও ঈদ বা পালাপার্বণ এলে বিদেশী পোশাক ঝলমল করে দোকানে। নিম্ন আয়ের মানুষেরা দেশী কাপড়ের ক্রেতা হলেও মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্তদের আকর্ষণ বিদেশী পোশাকে, মান যাই হোক। চোরাই পথে আসার কারণে সরকার যেমন এখাত হতে রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি দেশী পোশাকের বাজারও নষ্ট হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শুল্ক বিভাগের নাকের ডগায়, চোখের সামনে দিয়ে এসব চোরাই পথে এসে দোকানে থরে থরে সাজানো থাকে। এসবের বিরুদ্ধে কোন অভিযানও হয় না। চোরাকারবারিরাও ধরা পড়ে না। এসবের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানো উচিত।
×