ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

পৃথিবীর স্বপ্নপুরী

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ১ জুন ২০১৮

পৃথিবীর স্বপ্নপুরী

(পূর্ব প্রকাশের পর) বুর্জ খলিফা বুর্জ খলিফা আরবী শব্দ, এর বাংলা অর্থ হলো খলিফার টাওয়ার। দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুম ভবনটির উদ্বোধন করেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সম্মানে ভবনটির নামকরণ করেন বুর্জ খলিফা। বুর্জ আল খলিফার নির্মাণকাজ শুরু হয় ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৪ এবং কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে। ৪ জানুয়ারি ২০১০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ভবনটি আরব আমিরাতের দুবাই শহরের দোহা স্ট্রিট, শেখ জায়েদ সড়কে অবস্থিত। রকেটের মতো দেখতে ১৬০ তলাবিশিষ্ট বুর্জ খলিফার মোট উচ্চতা ২,৭১৭ ফুট। ছয় লাখ বর্গফুট বিশিষ্ট এই ভবনে একসঙ্গে ১২ হাজারেরও বেশি লোকের সমাবেশ হতে পারে। বুর্জ ভবনে ৫৪টি এলিভেটর বা লিফট আছে। এগুলোর গতি ঘণ্টায় ৪০ মাইল। উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী ‘বুর্জ খলিফা’র মোট তলার সংখ্যা ১৬০টি। তবে সম্পূর্ণ ভবনঠিতে মোট তলার সংখ্যা ২০৬। এর মধ্যে ১৬০ তলা পর্যন্ত রয়েছে বিভিন্ন অফিস, আবাসন, মসজিদ, সুইমিংপুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। আর ১৬০ তলার পর থেকে ২০৬ তলা পর্যন্ত ভবনটি পরিচালনায় সহায়ক বিভিন্ন কারিগরি কাজে ব্যবহৃত হয়। বুর্জ খলিফার বাইরের প্রাঙ্গণে দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা রয়েছে। এই ফোয়ারটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১৩৩ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড। সশরীরে ১৬০ তলা ভবনের মধ্যে প্রায় ১শ’ তলায় যেতে প্রবেশ মূল্য ২শ’ দিরহাম অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আর ১৬০ তলায় যেতে হলে অনুমতি নিয়ে আরও অনেক বেশি দিরহাম গুনতে হয়। বুর্জ খলিফার ১৬৯ তলায় যেতে হলে সঙ্গে করে অক্সিজেন নিয়ে যেতে হয়। বুর্জ খলিফায় ১৬৯ তলার ওপর থেকে মাঝামাঝি স্থানে দিনে-রাতে চব্বিশ ঘণ্টায় জোনাকির মতো একবার সাদা আলো জ্বলছে আবার আলো নিভছে; যা বহুদূর থেকে দেখা যায়। বিশ্বের সর্বোচ্চ এই ভবনটির মোট ওজন ৫ লাখ টন। ভবনটি নির্মাণে লেগেছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কিউবিক মিটার কংক্রিট, ৩৯ হাজার মিটার স্টিল, ১ লাখ ৩ হাজার বর্গমিটার কাচ এবং ১ লাখ ৫৫ হাজার বর্গমিটার স্টেইনলেস স্টিল। বিলাসবহুল এই ভবনের একেকটি কামরা কেনার জন্য বর্গমিটার প্রতি ক্রেতাদের গুনতে হয়েছে গড়ে ৩৭ হাজার ৫শ’ মার্কিন ডলার। এত উচ্চ মূল্য থাকা সত্ত্বে¡ও দুই বছরের মধ্যেই ৯০০ কামরার প্রায় সবই বিক্রি হয়ে যায়। বুর্জ খলিফায় প্রতি বর্গফুট জায়গার মাসিক ভাড়া চার হাজার ডলার বা দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। ভবনটির চারপাশে রয়েছে ৭.৪ একরের অপরুপ সুন্দর উদ্যান আর ৩০ একর আয়তনের কৃত্রিম হ্রদ। বুর্জ খলিফার বাসিন্দাদের জন্য প্রতিদিন ৯৪৬০০ লিটার পানির প্রয়োজন পড়ে যা অভ্যন্তরীণ পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ৩৪ কিমি এবং জরুরী অগ্নি নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে আরও ২১৩ কিমি বিশেষ পাইপ লাইন ব্যবস্থা। বিশাল এই ইমারতটি একসঙ্গে ২৫ হাজার লোকের ভার সইতে পারবে। বুর্জ খলিফায় আমেরিকানদের বসবাসের ভবনের ৯ থেকে ১৬ তলা পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বুর্জ খলিফার মালিকানা দুবাইয়ের একটি আধা সরকারী রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এমার প্রপার্টিজ। বিস্ময়কর এই ভবনের স্থাপনার স্থপতি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অড্রিয়ান স্মিথ। নকশা প্রণয়নকারী হলো যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্কিডমোর। ওয়িংস এ্যান্ড মেরিল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং, বেলজিয়ামের বিইএসআই এক্স গ্রুপ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আর্বটেক। প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ শ্রমঘণ্টা লেগেছে ভবনটি নির্মাণে। এ প্রকল্পে জড়িত ছিলেন ৩৮০ জন দক্ষ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ। বাটারফ্লাই গার্ডেন আরবের উত্তপ্ত মরুভূমিতে যে কোন প্রাণীর সাধারণ জীবনযাপনে যেখানে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়, সেখানে ৫০ ডিগ্রীর অধিক তাপমাত্রা উপেক্ষা করে বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে প্রজাপতির কৃত্রিম বাগান। আরব আমিরাতের পর্যটন নগরী দুবাইয়ে নির্মিত এ বাগানে শোভা পাচ্ছে নানা প্রজাতির প্রজাপতি। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা একবার হলেও ঢুঁ মারেন দুবাই বাটারফ্লাই গার্ডেনে। বাগানটি সাজানো হয়েছে শ্রেণীবিন্যাস করে। আমিরাতের শাসক থেকে শুরু করে অনেকের ছবি বানানো হয়েছে প্রতীকী প্রজাপতি দিয়ে। আরবের হেজাজ মরু প্রান্তরে যেখানে একটি প্রজাপতিও দেখা যায় না, সেখানে কৃত্রিম ও সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা প্রজাপতির এ বাগানে দিনভর ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। বাগানের প্রবেশ পথে দর্শনার্থীদের আগাম শুভেচ্ছা জানায় ফুল দিয়ে সাজানো প্রজাপতিরা। নাম না জানা অসংখ্য প্রজাতির সম্মিলন এখানে। কৃত্রিম হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বাগান দেখে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা। বাটারফ্লাই গার্ডেনের শ্রমিকরা মনে করেন বাগানে কাজ করা স্বর্গবাসের মতো। বাটারফ্লাই গার্ডেনের এমডি প্রকৌশলী আবদেল নাছের ইয়াছিন রেহাল জানান, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বিলুপ্ত হতে চলছে নানা প্রজাতির প্রাণী। বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীগুলো সংরক্ষণ করে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। সে জন্য বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা প্রায় দুর্লভ প্রজাতির সব প্রজাপতি রাখা হয়েছে এখানে। প্রাথমিকভাবে শখের বশে শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিক রূপ পেয়েছে বাটারফ্লাই গার্ডেন। দুবাই ল্যান্ডের দক্ষিণ আল বারসা এলাকায় বিখ্যাত মিরাক্কেল গার্ডেনের পাশেই বাটারফ্লাই গার্ডেনের অবস্থান। চলবে...
×