ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী

শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১ জুন ২০১৮

শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন

২৪ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিম বাংলায় গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে। বিগত ৯ বছরে শেখ হাসিনা বিশ্বের বহু দেশের সরকার/রাষ্ট্র প্রধানদের আমন্ত্রণে সফর করেছেন। কিন্তু এ সফর একটু ভিন্ন ধরনের এবং বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ সফরকালে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণকারী একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়, যথা শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। পরে আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রী গ্রহণ করেন। এ সফরকালীন দুটি ঘটনাই বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য গর্বে বুক ভরে যাওয়ার মতো। বিশ্বভারতী এমন এক বিশ্ববিদ্যালয় যার প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী প্রথম এশিয়ান। ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধীসহ বিশ্বের বেশ কয়েকজন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকাল কাটিয়েছেন। প-িত রবিশংকর, ইহুদি মেনোহিন, জীবেন মেহতাসহ বহু বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীত প্রতিভা কিছু না কিছু সময় শান্তিনিকেতনে কাটিয়েছেন। কাটিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন, অস্কার বিজয়ী সত্যজিৎ রায়ও। পশ্চিমা বহু গুণীজন অনুশীলন নিয়েছেন শান্তিনিকেতনে। বিশ্ব ভারতী যে শুধু একটি বিদ্যায়তন এবং সঙ্গীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান তা নয়, এখানে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ হয় খাঁটি বাঙালিয়ানার, বাংলা সংস্কৃতি, কৃষ্টি, বাঙালীর ঐতিহ্যগত আচার-আচরণের। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ও বাঙালীদের জন্য গর্বের প্রতিষ্ঠান। কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বিদ্রোহী কবিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এক জীবন্ত দ্রোহ, যা পরিষ্কার হয়ে উঠে কা-ারি হুঁশিয়ার কবিতায় যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ হিন্দু না ওরা মুসলিম জিজ্ঞাসে কোন জন হে’। তিনি সত্য এবং সাম্যের মূর্ত প্রতীক হিসেবে লিখেছেনÑ ‘শান্তির জয় হোক, সত্যের জয় হোক, জয় হোক। ঔপনিবেশিক শাসনের মূলোৎপাটনের জন্য লিখেছিলেন ‘কারার ঐ লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট’। কট্টর মৌলবাদীদের চপেটাঘাত করে তার ছেলেদের নাম দিয়েছিলেন বাংলা ভাষায় যথা : কৃষ্ণ মুহাম্মদ, কাজী অনিরুদ্ধ, কাজী সব্যসাচী, কাজী অরিন্দম খালেদ। লিখেছিলেন অগণিত কীর্তন এবং শ্যামা সঙ্গীত, মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় সঙ্গীত। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী তার ভারতীয় প্রতিপক্ষসহ শান্তিনিকেতনে উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ ভবনের। চারটি কারণে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর আমাদের জন্য বয়ে এনেছে অনির্বাণ গৌরব গাথা। প্রথমত. ভারতের সবচেয়ে সম্মানিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি হিসেবে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নিমন্ত্রণ পাওয়া নিশ্চিতভাবে একটি বিরল সম্মাননা। দ্বিতীয়ত. তিনি ডক্টর অব লিটারেচার পেলেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, সে বিশ্ববিদ্যালয় এমনি এক ব্যক্তিত্বের নামে যিনি ছিলেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সাম্যের পক্ষে এবং উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে এক বজ্রকণ্ঠ। তৃতীয়ত. এ সফরকালে তিনি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রীসহ শান্তিনিকেতনের মাটিতেই উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশ ভবন। বিশ্বকবির বিদ্যায়তনে প্রতিষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের একটি স্থায়ী ঠিকানা। চতুর্থত. এ সফরকালে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিলেন কলকাতায় স্থাপিত হবে বঙ্গবন্ধু ভবন। বাংলাদেশের আপামর জনতা উৎফুল্ল, আপ্লুত। তবে কিছু ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি আছেন যাদের মধ্যে বিরাজ করছে গাত্রদাহ। তারা না সহ্য করতে পারেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে, না পারেন নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে। এইতো মাত্র কয়েক বছর আগের কথা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী স্থির করলেন ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে পালন করবেন কবিগুরুর জন্মের সার্ধশতবার্ষিকী। কিন্তু যে কবি বাংলাভাষাকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার ব্যাপারে এহেন মহান উদ্যোগ অনেকেই পছন্দ করতে পারেননি। যাদের নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি প্রকাশ্যেই বাংলাদেশ সরকারের এই মহান উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এত মাখামাখি কেন? অনেকেই খালেদা জিয়ার মন্তব্যে অবাক হননি এ কারণে যে, যেহেতু বিদ্যা অর্জনের সুযোগ তার জীবনে ঘটেনি, তাই রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল সম্পর্কে তার জ্ঞান না থাকারই কথা। তার মন্তব্যের ভিত্তি ছিল সাম্প্রদায়িকতার কারণ তিনি পাকিপ্রেমী হিসেবেই পরিচিত। তিনি যদি রবীন্দ্রনাথের ভারত-তীর্থ পড়ার (বা বোঝার) সুযোগ পেতেন তাহলে জানতেন রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু-মুসলমান। এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খৃস্টান’। ব্রাহ্মণকে মন সূচি করে সকলের সঙ্গে হাত মিলানোর কথা বলে তিনি লিখেছেন ‘এসো ব্রাহ্মণ, সূচি করি মন হাত ধর সবাকার’। কাবুলিওয়ালা গল্পে তিনি আব্দুর রহমান নামীয় এক মুসলমানকে চিত্রিত করেছেন এক পিতৃস্নেহে ভরপুর, আদর্শ পিতা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ সারাবিশ্বের অল্প সংখ্যক কবির একজন, যিনি নিজের শ্রেণী অর্থাৎ জমিদার শ্রেণীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে লিখেছেন ‘এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি’। লিখেছেন ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ আমি চোর বটে’। রাজর্ষি নাটকে তিনি নরবলি তথা ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লিখেছেন। শোভা উপন্যাসে, বাক-প্রতিবন্ধী শোভার উপর সমাজের অনাচারের কথা বিষোদভাবে ব্যক্ত করে তিনি যেভাবে সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লিখেছেন তা শরৎচন্দ্রের লেখা, জর্জ বার্নার্ড শ’ চার্লস ডিকিনস বা রাশিয়ান সাহিত্যে ম্যাক্সিম গোর্কির লেখা থেকে কম ধারালো নয়। ‘জীবিত এবং মৃত’ উপন্যাসের, যেখানে হেমাঙ্গিনীকে মরিয়া প্রমাণ করতে হলো সে মরে নাই, তিনি সামাজিক অনাচারের চিত্র তুলে ধরেছেন। খালেদা জিয়া হয়তো জানেন না, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকা-ের পর (তিনি সম্ভবত জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকা-ের কথাই কখনো শোনেননি) রবীন্দ্রনাথ তাকে দেয়া নাইট উপাধি (স্যার) বর্জন করেছিলেন, লিখেছিলেন ‘এ মণিহার আমায় নাহি সাজে’। রবীন্দ্রপূর্বে কুষ্টিয়ায় ঠাকুর পরিবারের জমিদারগণ হিন্দু-মুসলমানদের আলাদা করে দেখতেন। সেসময় হিন্দুদের বসতে দিলেও মুসলমানদের দাঁড়িয়ে রাখা হতো। রবীন্দ্রনাথ সেই বৈষম্য ঘুচিয়ে দিয়ে বলেছিলেন সব প্রজাই সমান সবাই বসবে। রবীন্দ্রনাথের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক মার্ক টুয়েইনের (ছদ¥নাম) মতো। মার্ক টুয়েইন যেমন তার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস ‘হেকেলবেরি ফিনে’ এ বুঝিয়ে দিয়েছেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসও মানুষ, রবীন্দ্রনাথও ঠিক তেমনি একজন চ-ালের মেয়েকে যে কথা বলে সম্মানিত করেছেন তা হলো ‘যেই মানব আমি, সেই মানব তুমি হে কন্যা’ (চ-ালিকা গীতিনাট্য)। ‘গান্ধারির আবেদন’ কবিতায় তিনি লিখেছেন ‘বিশ্ব বিধাতার সবাই সন্তান মোরা’। তিনি বার্নার্ড শর মতো সমাজতন্ত্রী ছিলেন না বটে কিন্তু বার্নার্ড শ যেমন সেকালের আইরিশ সমাজের অনাচারের সমালোচনায় কলম দাগিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথও তেমনি ভারতবর্ষে প্রচলিত সামাজিক অন্যায়-অনাচারের চিত্র তুলে ধরেছেন বহু উপন্যাসে যথা ‘শোভা’ (এক বাকরুদ্ধ মেয়ে দুর্বিষহ জীবন) ‘জীবিত ও মৃত’ (কাদম্বিণীকে শেষ অবধি মরিয়া প্রমাণ করতে হলো সে মরে নাই)। ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও তিনি লিখতে ছাড়েন নাই, যা পরিষ্কার দেখা যায় তার ‘রাজর্ষি’ নাটকে, যেখানে তিনি নরবলিকে নরহত্যাতুল্য মনে করেছেন। চার্লস ডিকানস যেমন অলিভার টুইস্ট, গ্রেট এক্সপেক্টেশন, ডেভিড কপারফিল্ড উপন্যাসসমূহ তৎকালীন ব্রিটিশ সমাজের অনাচারের বিরুদ্ধে লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথও তেমনি ভারতবর্ষের প্রচলিত অনাচারের বিরুদ্ধে কলমযুদ্ধ চালিয়েছেন। তিনি যে কত বড় মাপের একজন মানবতাবাদী মহাপুরুষ ছিলেন, তার লেখা “জবষরমরড়হ ড়ভ ধহ অৎঃরংঃ” পড়লেই তা বোঝা যায়। এ বিষয়ে বার্ট্রান্ড রাসেলের সঙ্গে তার তুলনা হয় এবং এ কারণেই বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আইস্টাইনের তিনি ছিলেন ব্যক্তিগত এবং বিশিষ্ট বন্ধু। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কবিগুরুর লেখনী মেক্সিম গোর্কি, শরৎচন্দ্র, বিদ্যাসাগরের মতোই শক্তিশালী। তাইতো ইংল্যান্ডের স্ট্রার্টফের্ড আপন এখন এ শেক্সপিয়ার জাদুঘরে রাখা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ ভাস্কর্য। উদার মনের এই মহান ব্যক্তিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করার প্রচেষ্টায় সদা ব্যস্ত রয়েছে সঙ্কীর্ণমনা একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। তারা আর কেউ না, তারা সেই অপশক্তি যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা করেছেন। এখনও করছে, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। তাদের প্রিয় পাকিস্তান ভেঙ্গে গেল এ বাস্তবতা তারা মানতে পারছে না। চেষ্টা করছে যদি আবার পাকিস্তানে ফিরে যাওয়া যায়। খালেদা জিয়ার বিদ্যার দৌড় অতি সীমিত বলে তিনি না হয় সুযোগ পাননি রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের লেখা পড়তে, কিন্তু এমন অনেকে আছেন যারা জ্ঞানপাপির মতো সব জেনেও রবীন্দ্রনাথকে দেখাবার চেষ্টা করছেন একজন হিন্দু সাম্প্রদায়িক কবি হিসেবে। এমনি একজন ছিলেন হাইকোর্টেরই এক বিচারপতি যিনি রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’র মতো একটি কবিতা, যাতে জমিদারের অত্যাচারের কাহিনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তাতে সাম্প্রদায়িকতা খুঁজে পেয়েছেন। দুর্ভাগ্য, এই যে আমাদের সকলের দাবির মুখেও সে সময়ের প্রধান বিচারপতি সিনহা সেই বিচারপতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। কাজী নজরুলের মতো রবীন্দ্রনাথও ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে লিখেছেন। তার ভাষাশৈলী ভিন্ন ছিল। তিনি লিখেছেন ‘বাঁধ ভেঙ্গে দাও বাঁধ ভেঙ্গে দাও, ভাঙ্গ’। লিখেছেন ‘যদি তোর ডাক শোনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’। লিখেছেন ‘ওহে বীর, হে নির্ভয়, হবে জয়’। লিখছেন ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই তার ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। লিখেছেন ‘ঐ নূতনের কেতন উড়ে কাল বৈশাখীর ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু একাডেমিক অর্থেই ডিগ্রীধারী শিক্ষিত নন, শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত এবং অন্যান্য বিষয়েও তার জ্ঞানের ভা-ার খুবই সম্প্রসারিত। তাই তিনি যথার্থই বলতে পেরেছেন ‘বাংলা ভাগ হলেও রবীন্দ্র-নজরুল সবার’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৭ মে ২০১৮)। উন্মুক্তমনা কোন মানুষের মনেই এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকতে পারে না যে রবীন্দ্রনাথ সমস্ত বাঙালীর কবি, উভয় বাংলার কবি। তার কাব্য এবং সাহিত্যচর্চার বিরাট অংশ কেটেছে কুষ্টিয়ায়। তার আদি পুরুষরা ছিলেন যশোরের বাসিন্দা। লালন, গগন হরকরা প্রমুখ বাউল সাধকদের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন যা দেখা যায় তার বেশ কয়েকটি গানে/কবিতায়। যথা:- ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’ ‘ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’ এমনটি ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ যা আমাদের মহান জাতীয় সঙ্গীত। সে গানের সুর দিতেও রবীন্দ্রনাথ গগন হরকরা নামক এক লালন ভক্ত বাউলকে অনুসরণ করেছিলেন। ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পায়নি তোমায়, দেখতে আমি পায়নি’ এ গানটিও বাউল মতধারার। নজরুল-রবীন্দ্রনাথ মিশে আছেন, থাকবেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি চিন্তায় চেতনায়। তাদের ছাড়া কি বাংলা সাহিত্যের কথা চিন্তা করা যায়? রাজনৈতিকভাবে দু’বাংলা ভাগ হলেও দু’বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, আচার-আচরণ, ঐতিহ্য অবশ্যই অবিভাজ্য। পাকিস্তানী আমলে রবীন্দ্রনাথকে আমাদের মনোজগত থেকে বিতাড়িত করার প্রচেষ্টা যেমন তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে গিয়েছিল, বর্তমান বাংলাদেশে পাকিস্তানী চরদের একই রকম প্রচেষ্টাও একইভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ হতে বাধ্য। জয় শব্দটিকে হিন্দু শব্দ বলে জিয়া, তার স্ত্রী আমাদের মাঝে থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন, আর এই ‘জয়’ শব্দ রয়েছে রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল উভয়ের অনেক কবিতায়। নজরুল লিখেছেন ‘শান্তির জয় হোক, সাম্যের জয় হোক, সত্যের জয় হোক’ কবিগুরু লিখেছেন ‘হবে জয়, হে নির্ভয়’। ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। এ বন্ধুত্ব রক্তের অক্ষরে লেখা। রবীন্দ্র-নজরুল ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুর মতো হয়েই কাজ করবে। শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন এবং কলকাতায় প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু ভবন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে নিশ্চয়ই আরও শক্তিশালী করবেÑ এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলেরই প্রত্যাশা। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আপীল বিভাগ
×