ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৃতি যখন বৈরী

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৩১ মে ২০১৮

প্রকৃতি যখন বৈরী

বরাবরের মতো এবারও আবহাওয়ার চরম খামখেয়ালিপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড পরম অনুভূত হচ্ছে সারা দেশে। বিশেষ করে রাজধানীতে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। দিনে দুপুরে প্রচণ্ড নিদাঘ ও উচ্চ তাপমাত্রা, যার জের চলে সারা রাত। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ ও রোজদারদের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে এর জন্য। অন্যদিকে স্বস্তি নেই রাতের বিশ্রামেও। ভ্যাবসা গরমে মশারি টাঙানো যায় না বললেই চলে। ফলে মশা-মাছি-পোকামাকড়ের উপদ্রব এড়ানো যায় না। মাঝে-মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাতও কিছু কম হয়নি ঢাকাসহ সারাদেশে। রাজধানী ইতোমধ্যেই একাধিকবার স্বাদ পেয়েছে জলজট ও জলাবদ্ধতার, চৈত্র-বৈশাখ মাসে গ্রীষ্মের দাবদাহের তুলনায় বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়েছে বেশি, আবহাওয়াবিদরা যাকে অভিহিত করেছেন অস্বাভাবিক হিসেবে। অন্যদিকে জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি অনুভূত হচ্ছে প্রচ- ভ্যাপসা গরম। আবহাওয়ার এহেন দ্বিমুখী আচরণে আম-কাঁঠাল-ধানসহ ফসলাদি পরিপক্ব হওয়ার জন্য অনুকূল হলেও জনস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিকূল। ফলে ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে জ্বর, বিশেষ করে ভাইরাল ফিভার। শরীরে প্রচ- উত্তাপ, একই সঙ্গে তীব্র ব্যথা। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, সর্দি-কাশি-ডায়রিয়ার খবরও আছে। বিক্রীত খোলা খাবার, কাটা ফলমূল, শরবত-লাচ্চি ইত্যাদি অধিকাংশই অবিশুদ্ধ ও ভেজাল যুক্ত। এসব নিয়েই জনস্বাস্থ্য রয়েছে প্রবল হুমকিতে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ভিড় বাড়ছে ক্রমশ। আসন্ন ঈদের কেনাকাটার পাশাপাশি ওষুধ শিল্পেরও রমরমা অবস্থা। সরকার তো ভেজাল খাদ্য ও মশা-মাছির বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেই খালাস। আবহাওয়া ও ঋতু পরিবর্তন শুধু বিশ্বব্যাপী নয়, বরং বাংলাদেশেও বেশ ভালভাবেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রবল বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ সড়কের অবস্থা ভাঙাচোড়া, বিপর্যস্ত। রেল ও নৌযোগাযোগ ব্যাহত হয় প্রায়ই। সব মিলিয়ে জনজীবন, জনদুর্ভোগ হয়ে উঠেছে বিপর্যস্ত, অবর্ণনীয়, অসহনীয়। প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিয়মিত আশ্রয়, ত্রাণ ও সাহায্য দেয়ার অভিঘাত অনিবার্য হয়ে পড়েছে জাতীয় অর্থনীতিতে। সব মিলিয়ে অতিবর্ষণ, খরা ও বন্যা পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সমগ্র জনজীবন এখন এসে দাঁড়িয়েছে দুঃসময়ের মুখোমুখি। এসব সমস্যা থেকে সহসা মুক্তি কিংবা পরিত্রাণের সহজ কোন পথ নেই। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করেই বেঁচে থাকতে হবে বাংলাদেশের মানুষকে। তবে এক্ষেত্রে পরিবেশের বিপর্যয় রোধসহ সুরক্ষা অবশ্যই প্রত্যাশিত। দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতিও বহির্বিশ্বে প্রশংসিত। ইতোমধ্যে খবর এসেছে রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন রান্নার চাহিদা মেটাতে বিপুলসংখ্যক গাছপালা নিধন হয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের। অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। এর জন্য সক্রিয় হতে হবে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগকে। করতে হবে বিকল্প ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নিতে হবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। স্যুয়ারেজ লাইনগুলো সংস্কার করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে। উপকূলীয় বাঁধসহ হাওড় অঞ্চলের বাঁধগুলো মেরামত করতে হবে বর্ষা মৌসুমের আগেই। কাজগুলো যাতে সুষ্ঠু ও সমন্বিতভাবে হতে পারে সে জন্য সর্বস্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করা গেলে এসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাওয়া যেতে পারে।
×