বনের পশু কখনও প্রয়োজন ছাড়া অপর কোন পশুকে আক্রমণ করে না। হয়ত বেঁচে থাকার তাগিদে খাদ্যের প্রয়োজনে নয়ত নিজেকে অপরের হাত থেকে বাঁচাতে তারা এই পথ ধরে। সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ হয়েও মানুষ বিনা কারণে কোন মানুষকে আক্রমণ করে। কোন প্রয়োজন নেই তবুও মানুষ অপরকে খোঁচা মারে। এই স্বভাবটা মানুষের বেশ ভালভাবেই আছে। বনের কোন পশু অন্য পশুর শারীরিক কিংবা অন্য কোন উন্নতিতে মনে কষ্ট পায় কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু মানুষ সেই প্রাণী যে অন্যের উন্নতি দেখলে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরে। একে বলা হয় পরশ্রীকাতরতা।
পাশের বাড়ির ছেলেটি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করলে আমাদের মনে দুঃখ হয়। অমুকের ছেলে এত ভাল করল কী করে! আর নিজের ছেলে যদি কোন কারণে খারাপ রেজাল্ট করে তাহলে তো কোন কথাই নেই। আমরা উঠেপড়ে লাগি তাকে পেছনে ফেলার জন্য। আমাদের ভেতর এই ভয়ঙ্কর ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। কেউ যদি একটা ভাল গাড়ি কেনে, ভাল একটা বাড়ি বানায়, ভাল বেতনের চাকরি করে তাহলে আমাদের এত কষ্ট হয় কেন? আমদের মানসিকতা এত নগ্ন কেন! অথচ আমাদের উচিত ছিল ভাই-ভাই হিসেবে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সমাজে বসবাস করা। এতে আমাদের নিজেদের যেমন উন্নতি হতো তেমনি আমাদের সমাজও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হতো। আফসোস! আমাদের ভেতর কোন প্রকার অনুশোচনার লেশমাত্র নেই। আমরা সবাই আজ নিজেদের মিথ্যা অহংকার এবং পরশ্রীকাতরতার জন্য পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছি। পরস্পরকে সাহায্য করা তো দূরে হোক, সবার সাথে ঠিকমতো কথা পর্যন্ত বলি না। একই সমাজে বাস করার পরেও নিজেদের কর্মকাে র দ্বারা পরস্পরকে আমরা নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছি। যেন সবাই এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস করছি! বাঙালীদের ভিতর পরশ্রীকাতরতার পরিমাণটা একটু বেশিই যেন। পৃথিবীর আর কোন জাতির মধ্যে এই মনোভাব এতটা প্রকটভাবে আছে কিনা আমাদের জানা নেই। একজন ব্যক্তিকে কিভাবে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামিয়ে আনা যায় সেটা আমরা খুব ভালভাবেই পারি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: