ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে টিসিবির পণ্য তোলেনি ৮১ ডিলার

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১০ মে ২০১৮

যশোরে টিসিবির পণ্য তোলেনি ৮১ ডিলার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ রোজায় নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে দেশব্যাপী খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে সরকারী সংস্থা টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ)। কিন্তু গত ৪ দিনে যশোরের বাজারে টিসিবি’র ন্যায্য মূল্যের পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়নি। কারণ যশোরের ৮১ ডিলারের কেউ এখনও পর্যন্ত খোলা বাজারে বিক্রির জন্য টিসিবি’র পণ্য তোলেননি। ফলে রমজান মাসে ন্যায্য মূল্যে পণ্য সরবরাহের সরকারী উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। ডিলাররা বলছেন, বাজার দরের থেকে টিসিবি পণ্যের দামের পার্থক্য খুবই সামান্য। পাশাপাশি খুলনা থেকে মালামাল বয়ে এনে বিক্রির পর লোকসানের কারণে মালামাল তুলছেন না। যোগাযোগ করা হলে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের খুলনা কার্যালয়ের উপ-উর্ধতন কার্যনির্বাহী রবিউল মোর্শেদ জানান, যশোর থেকে এখনও পর্যন্ত কোন ডিলার পণ্য উত্তোলন করেনি। দ্রুত পণ্য উত্তোলন করে বিক্রির জন্য আমরা ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। জানা গেছে, গত ৬ মে থেকে ভ্রাম্যমাণ ট্রাক ও ডিলারদের মাধ্যমে রমজান মাসে ভোক্তাদের কাছে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির ঘোষণা দেয় টিসিবি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ছোলা, মসুর, চিনি, খেজুর ও সয়াবিন তেল। ভোক্তারা বলছেন, যশোরে টিসিবি পণ্যের দোকান নেই। কোথায় বিক্রি হয় জানেন না তারা। টিসিবি খুলনা কার্যালয় সূত্র জানায়, নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী প্রতি কেজি দেশি চিনি-৫৫ টাকা, ছোলা-৭০ টাকা, মসুর ডাল (মাঝারি আকারের) ৫৫ টাকা, খেজুর ১২০ টাকা এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরের টিসিবি ডিলারদের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, ছোলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, খেজুর মান ভেদে ৮০ থেকে ২০০ টাকায় এবং সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। এই হিসেবে খুলনা থেকে টিসিবি’র পণ্য তুলে এনে পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে যশোরে বিক্রি করলে এবারও লোকসান গুণতে হবে। যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার টিসিবি পণ্যের ডিলার মেসার্স সোনালী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমীন বলেন, গত দুই তিন বছর ধরে তিনি টিসিবি পণ্য তুলছেন না। এ বছরও মালামাল তুলব না। কারণ বাজার দরের সঙ্গে টিসিবি’র পণ্যেও দামের খুব বেশি পার্থক্য না থাকায়, মানুষজন এখন আর লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনার আগ্রহ দেখায় না। দিন দিন মানুষের আয় বাড়ছে। সবার হাতে এখন টাকা আছে। দুই তিন টাকা দামের হেরফেরের কথা চিন্তা করে টিসিবি’র পণ্য কেনা নিয়ে মাথা ঘামায় না। যশোর শহরের আরেক ডিলার জেল রোড এলাকার মেসার্স সরদার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল লতিফ সরদারের ছেলে রাসেল সরদার জানান, এ বছর টিসিবি’র পণ্য উত্তোলনের ইচ্ছা তাদের নেই। কারণ বাজার দরের চেয়ে টিসিবি পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি। এছাড়া যশোরে টিসিবি’র কোন গুদাম নেই। খুলনা থেকে মালামাল নিয়ে আসতে হয়। ফলে পণ্য পরিবহনের জন্য বাড়তি ব্যয় করতে হয়। অনেক টাকা ব্যয় করে মালামাল এনে বিক্রির পর লোকসান গোনা লাগে। এদিকে প্রতিবারই ভোক্তারা টিসিবির দোকান খুঁজে পায় না বলে আসছে। ভোক্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী শহরের বড় বাজার, দড়াটানা এলাকা ঘুরে টিসিবি পণ্যের দোকানের খোঁজ করা হয়। জেলা প্রশাসনের কার্যালয় ও টিসিবি খুলনা কার্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যশোর জেলার ডিলারদের তালিকা ধরে শহরের ডিলার পয়েন্ট খুঁজে দেখা হয়। কিন্তু খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে তালিকা অনুযায়ী অধিকাংশ ডিলার পয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তালিকা অনুযায়ী শহরের বকুলতলা এলাকায় মেসার্স কু-ু ট্রেডার্সের খোঁজ করা হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া যায় কু-ু অয়েল মিলের। সেখানে আলাপ হয় মিলের মালিক রবিণ কুমার কু-ুর সঙ্গে। তিনি বলেন, লোকসানের কারণে গত তিন বছর ধরে টিসিবি পণ্য বিক্রি বন্ধ করার পাশাপাশি গত বছর লাইসেন্স সারেন্ডার করেছি। এদিকে ডিলার তালিকায় নাম রয়েছে হাটখোলা এলাকার লোকনাথ ভা-ারের নাম। স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে দোকানটির খোঁজ পাওয়া গেলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পাশের কয়েকজন দোকানি জানান, এ দোকানটিতে আগে মুদি মালামাল বিক্রি হতো। এখন সেখানে ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রি ও মেরামত করা হয়। ফলে দোকানটিতে টিসিবির মালামাল বিক্রি করার প্রশ্নই আসে না। তালিকা অনুযায়ী চুড়িপট্টির মিন্টু এন্টারপ্রাইজের খোঁজ করা হয়। কিন্তু ওই নামে কোন প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে মশিয়ার রহমান মিন্টু বলেন, আট বছর আগে আমি টিসিবি ডিলারশিপ বাতিল করে দিয়ে জামানতের টাকা তুলে নিয়েছি। গত বছর ডিসি অফিসে টিসিবি পণ্য বিক্রি নিয়ে এক সভায় আমি আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ডিলার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার কথাও জানিয়ে এসেছি। এভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানের টিসিবির ডিলারদের তালিকায় নাম থাকলেও বাস্তবে তারা এখন আর এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেই বলে জানা গেছে।
×