ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাদাকনাথ মুরগিতে অপার সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ৬ মে ২০১৮

কাদাকনাথ মুরগিতে অপার সম্ভাবনা

কালো কুচকুচে মুরগির নাম কাদাকনাথ। যার হাড়, মাংস, জিব, মাথার ঝুঁটি, নখ পর্যন্তু কুচকুচে কালো। এই জাতের মুরগির আদিনিবাস ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপ। সেখানে এটাকে বলা হয় আয়্যাম কেমানি। বাংলাদেশের কাদাকনাথের খামার করে সাড়া ফেলেছেন তরুণ উদ্যোক্তা নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মজলিশপুরের কামরুল হাসান মাসুদ। বাণিজ্যিকভাবে তিনি কাদাকনাথের খামার গড়ে তুলেছেন। সেখানে কাদাকনাথ ছাড়াও আছে আছিল, প্লিলব্যাক, বেনথাম, আরআইআর, কয়লার, সিল্কি, টার্কিসহ প্রায় ১১ প্রজাতির মুরগি। ভারতের মধ্য প্রদেশে কাদাকনাথ কালোমাসী বা কড়কনাথ নামে পরিচিত। ভারতের ছত্তিশগড় প্রদেশের দান্তেওয়াদার এলাকার প্রায় ১৫০০ নারী কাদাকনাথ পালন করেন। সেখানে একটি কাদাকনাথ মুরগি ৪০০ থেকে ৯০০ রুপিতে বিক্রি হয়। দান্তেওয়াদারের মানুষ কাদাকনাথকে কারিয়াকুকদি নামে ও ডাকে। জেলা কর্তৃপক্ষ বাচ্চা সরবারহে প্রায় ৯০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়। এরপর প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করে। মহিশুড়ে এই মুরগির জাত সম্প্রসারণে বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলছে বলে জানা যায়। জানা যায় ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এক ব্রিডার, যার নাম হলো পল ব্র্যাডশ একটি কালো মুরগির দাম হেঁকেছেন ২ হাজার ৫০০ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা কম করে হলেও প্রায় দুই লাখ টাকা। নরসিংদীর মাসুদ শুধু কাদাকনাথ পালন নয়। সফলভাবে বাচ্চা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য তার খামারে ইনকিউবেটর রয়েছে। তার খামারে প্রতি মাসে উৎপাদিত হচ্ছে প্রচুর সংখ্যক বাচ্চা। ২১ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদিত হয়। প্রতিমাসে গড়ে ১৭০০ থেকে ১৮০০ বাচ্চা উৎপাদন করতে সক্ষম হন বলে মাসুদ জানান। এক মাস বয়সী একটি বাচ্চার দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ১০০০ টাকায় দেড় মাস বয়সী বাচ্চা পাওয়া যায়। ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা দুই মাস বয়সী বাচ্চার দাম। কাদাকনাথের তিনটি জাত মাসুদের কাছে রয়েছে। একটি জাতের পালক সম্পূূর্ণ কালো, আরেকটি জাতের গলার দিকটা সামান্য রুপালি। তৃতীয় জাতটির গলায় আছে সোনালী রং, যা গোল্ডেন পেনসিল বলে খ্যাত। খোলা জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির মুরগি ছেড়ে পালেন মাসুদ। যেটা বাংলাদেশের পেক্ষাপটে ব্যতিক্রম বটে। মানসম্মত খাবার দিলে ১০০ থেকে ১২৫ দিনে একটি কাদাকনাথ বাচ্চার ওজন ১ কেজি থেকে ১ কেজি ২৫০ গ্রামের মতো হয়। পোলট্রিতে লেয়ার বয়লার নানা জাতের মুরগি রয়েছে। তারপরে কাদাকনাথের প্রয়োজন কেন? এই জাতের মুরগি পালনে সুবিধা কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ জানান, কাদাকনাথের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এই মুরগির খাবার খরচ খুব কম। আর পুষ্টি উপাদান অন্য সব মুরগির চেয়ে বেশি। আর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ও অনেক বেশি। কাদাকনাথ কাঁচা ঘাসও স্বচ্ছন্দে খায় বলে তিনি জানান। কাদাকনাথ মোরগের ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি,মুরগীর ওজন দেড় থেকে দুই কেজি হয়ে থাকে। চাহিদার তুলানায় উৎপাদন কম হওয়ার কারণে বিক্রিতে সমস্যা নেই। বাচ্চা নিতে হলে মাস খানেক আগে অর্ডার দিতে হয় বলে জানা যায়। পোলট্রি শিল্পে যখন রীতিমতো মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। খামারিরা লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তখন মাসুদের হাত ধরে বাংলাদেশে আসা কাদাকনাথ এক অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। পুষ্টিগুণ বিবেচনায় কাদাকনাথ অন্য সব মুরগির চেয়ে এগিয়ে। কাদাকনাথের রক্ত প্রায়ই মানুষের মধ্যে দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই মুরগির মাংসে কোলেস্টেরল কম থাকে। কাদাকনাথের মাংস ভিটামিন বি১, বি২, বি৬, বি১২, সি, ই, নিয়াসিন, প্রোটিন, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, মানবদেহের জন্য ৮টি অপরিহার্য এ্যামোনি এসিডসহ প্রায় ১৮ ধরনের এ্যামিনো এসিড সমৃদ্ধ। কালো মুরগির মাংস পালমোনারি সমস্যা, যক্ষ্মা, হৃদরোগ, শিশুদের দৈহিক গঠনের জন্য অনেক উপকারী বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। কাদাকনাথের ডিম মাথাব্যথা, পোস্ট ডেলিভারি সমস্যা, হাঁপানি ও নেফ্রাইটিসের সমাধানে কাজ করে। ভারতের মহিশুরের সেন্টাল ফুড সোসাইটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে কাদাকনাথের মাংসের উপরোক্ত পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করে। কাদাকনাথের মাংসে খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায় বলে ভারতের মধ্য প্রদেশে কিছু মানুষের বিশ্বাস। জিন গত কারণে কালো কুচকুচে হলেও বাণিজ্যিক সম্ভাবনায় এই মুরগি কালো সোনা। কাদাকনাথ নিয়ে বাংলাদেশে আরও গবেষণা হওয়া দরকার। সরকারী সহযোগিতা পেলে মাসুদের মতো তরুণ উদ্যোক্তারা এই খাতে সম্পৃক্ত হলে পোলট্রি খাতে বিদ্যমান মন্দাবস্থা দূর হতে পারে। সে জন্য পরিকল্পিত উপায়ে ক্ষুদ্র খামারিদের সহায়তা, প্রশিক্ষণ, লোন প্রয়োজন।
×