ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়ের বারি

পরিবেশ দূষণরোধে সবুজ কংক্রিট

প্রকাশিত: ০৭:২০, ৪ মে ২০১৮

পরিবেশ দূষণরোধে সবুজ কংক্রিট

কংক্রিট বস্তুটি সবসময় আমাদের চারপাশেই রয়েছে, অথচ অদৃশ্য। সিমেন্ট, বালি বা নুড়ি আর পানি মিশিয়ে যে কংক্রিট তৈরি হয়, এ আমরা সকলেই জানি। শহরের বড় বড় বাড়িঘরের অস্থিমজ্জা হলো এই কংক্রিট। সিমেন্ট আর পানি ছাড়া কংক্রিটে যা কিছু থাকে, পরিভাষায় তার নাম ‘এ্যাগ্রেগেট’। কিন্তু সেই এ্যাগ্রেগেটে যদি পুরনো ইনডাস্ট্রিয়াল ফাইবার বা আঁশ ঢোকানো থাকে, তাহলে তার নাম হয় ‘সবুজ কংক্রিট।’ সালের্নো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা আপাতত একটি ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত, যার উপজীব্য হলো কংক্রিট। সাধারণ কংক্রিটের উপাদান হলো পানি, সিমেন্ট আর বালি, নুড়ি ইত্যাদিÑ বিজ্ঞানীরা তার সঙ্গে যোগ করেছেন ‘রিসাইকল্ড ইনডাস্ট্রিয়াল ফাইবার’ বা শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত নানা ধরনের আঁশ বা তন্তু। উদ্দেশ্য- আরও বেশি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কংক্রিট তৈরি করা। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এনজো মার্তিনেলি বলেন, ‘আমরা দেখার চেষ্টা করছি, কংক্রিটে সাধারণ ইনডাস্ট্রিয়াল ফাইবারের পরিমাণ কমিয়ে তার বদলে কীভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পোপযোগী তন্তু ব্যবহার করা যায়- এবং কংক্রিটের মান ও স্থিতিস্থাপকতার হানি না ঘটিয়ে তা করার চেষ্টা চলছে।’ রিসাইকল্ড পদার্থে সমৃদ্ধ এই পরীক্ষামূলক কংক্রিট বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হয়- বেঁকিয়ে, চাপ দিয়ে, টেনে লম্বা করে ও চিরে দেখা হয়, চরম পরিস্থিতিতে ওই কংক্রিটের কি প্রতিক্রিয়া হয়। আর্জেন্টিনার ইঞ্জিনিয়ার আন্তোনিও কাজিয়ানো সেজন্য সব ধরনের স্ট্রেস টেস্টের ব্যবস্থা করেছেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আন্তোনিও কাজিয়ানো আরও বলেন, ‘আমরা বুঝেছি যে, রিসাইকল্ড ইনডাস্ট্রিয়াল ফাইবারের মূল সমস্যা হল তার জ্যামিতি। অন্য নানা কাজে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে তাদের জ্যামিতি আর নিয়মমাফিক বা মসৃণ নয়। কাজেই সেগুলো সিমেন্টের সঙ্গে ভালভাবে মেশে না। নতুন ইনডাস্ট্রিয়াল ফাইবার আরও ভালভাবে মেশে। যার অর্থ, আমরা এমন একটা কংক্রিট তৈরি করতে পারি যার যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো আরও বেশি সমজাতীয়, এবং সেই কারণে আরও বেশি নিভর্রযোগ্য।’ কংক্রিটের ভেতরে যা ঘটে যান্ত্রিক পরীক্ষা ছাড়াও গবেষকরা কম্পিউটার সিমিউলেশনের মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করেন, চরম পরিস্থিতিতে কংক্রিটের ভেতরে কী ঘটে। তুকুমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হোসে গিয়ের্মো এৎসে এ বিষয়ে বলেন, ‘একাধিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে- যেমন কংক্রিটের ভেতরে প্রতিটি উপাদানের অনমনীয়তা, কংক্রিটের ভেতরকার আকার, রসায়ন, অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা, আর্দ্রতার পরিমাণ, কংক্রিটে কতটা ফাইবার আছে ও কী ধরনের ফাইবার- এসব প্যারামিটার দিয়ে আমরা কংক্রিটের প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করি।’ বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে, তাঁদের গবেষণার ফলে শীঘ্রই কলকারখানায় ‘সবুজ কংক্রিট’ তৈরি হবে- যেমন এই কারখানাটি, যেখানে প্রতিবছর ষাট হাজার ঘনমিটার কংক্রিট তৈরি হয়। কোম্পানির ম্যানেজাররা বলছেন, তারা টেকসই, বিকল্প কংক্রিট উৎপাদন করতে রাজি। কংক্রিট তৈরির কোম্পানির কোয়ালিটি ম্যানেজার মাউরো মেলে বললেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের কংক্রিটে শতকরা ১০০ ভাগ রিসাইকল্ড পানি ব্যবহার করি। আমরা খুব খুশি হয়ে রিসাইকল্ড ফাইবারের মতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য ‘এ্যাগ্রেগেট’ ব্যবহার করব, যদি তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের উপযোগী হয়’। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এনজো মার্তিনেলি আরেকটি সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করলেন- ‘উদ্ভিদ তন্তু দিয়ে সমৃদ্ধকৃত সবুজ কংক্রিট পুরনো বাড়িঘর মজবুত করার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে- যেমন ঐতিহাসিক বাড়িঘর। এটি ভাল টেকসই বিকল্প, কারণ এমন সব পদার্থ থেকে তৈরি, যার পরিবেশের উপর প্রভাব অনেক কম ও পরিবর্তনীয়। যেহেতু ওই কংক্রিট বাড়ির কাঠামো তৈরির কাজে ব্যবহার হচ্ছে না, কাজেই প্রযোজনে অন্য কংক্রিট দিয়ে তা পালটে দেয়া যাবে।’ পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পোপযোগীতন্তু ও উদ্ভিদজাত তন্তু ছাড়াও বিজ্ঞানীরা আগামীতে পুরনো গাড়ির টায়ার ও পুরনো প্লাস্টিক ব্যবহার করে উচ্চমানের সবুজ কংক্রিট তৈরির আশা রাখেন। সূত্র : বিবিসি
×