ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুশুকদের জন্য নতুন প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

শুশুকদের জন্য নতুন প্রকল্প

জুবায়ের বারি ডলফিন সাধারণত লবণ পানিতে বাস করে। শুধু বাংলাদেশের শুশুক আর আমাজনের ‘বোতো’ এই দুই প্রজাতির ডলফিন সারা বছরই স্বাদু পানিতে থাকে। সেদিক দিয়ে শুশুক বিশ্বে খুবই বিরল প্রাণী। ২৫-৩০ বছর আগেও বাংলাদেশের নদীগুলোতে অনেক শুশুক বা ডলফিন দেখা যেত। কিন্তু এখন আর সেটা যাচ্ছে না। তাই ১৯৯৬ সাল থেকে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় নাম উঠে গেছে শুশুকের। শুশুকের তেল মাছ ধরার জন্য বেশ কার্যকর। তাই জেলেরা গণহারে শুশুক ধরছে। এছাড়া জাটকা ধরার জন্য যে কারেন্ট জাল ব্যবহার করেন জেলেরা, তাতেও মারা পড়ছে শুশুক। বর্তমানে বিশ্বের অনেক প্রান্তেই লুপ্তপ্রায় প্রজাতি হয়ে দাঁড়িয়েছে শুশুক। এ্যামাজন নদীতে শুশুকদের কল্যাণে অভিনব এক প্রকল্প চালানো হচ্ছে। ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর নেতৃত্বে এক অভিযানের আওতায় এই প্রথম ব্রাজিলের এ্যামাজন অঞ্চলে শুশুকদের পরীক্ষা করা হয়েছে। এ্যামাজনের এক শাখা নদীতে এক শুশুক মা তার শাবককে ডাঙ্গায় তুলে পরীক্ষা করে তাদের শরীরে জিপিএস ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছে। অভিযানের প্রধান মার্সোলো অলিভেইরা বলেন, ‘গোলাপি রঙের এই শুশুক প্রজাতি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। তাদের বাসস্থান সম্পর্কে কিছু তথ্য পেলেও তাদের সংখ্যা, স্বাস্থ্য, রক্তের স্তর, প্যারাসাইট, বিষক্রিয়ার আশঙ্কা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।’ শুশুকদের সার্বিক চেকআপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পশু চিকিৎসক, মেরিন বায়োলজিস্ট, জেলে ও প্রকৃতি সংরক্ষণকারীরা এই প্রথম একসঙ্গে কাজ করছেন। খুব দ্রুত কাজ সারতে হয়, কারণ ডলফিনরা ডাঙ্গার ওপর বেশিক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে না। এর আগে কখনও কোন গোলাপি শুশুকের ওপর আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা চালানো হয়নি। পশু চিকিৎসকের জন্যও এটা সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। নতুন প্রকল্প মায়ের ডাক্তারি পরীক্ষার সময় তার শাবকের উচ্চতা ও ওজন মাপা হয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টা পর দুটি প্রাণীকে আবার নদীতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জেলেরা সাঁও মানুয়েল জা বারা নামের পাশের গ্রামেই থাকেন। এখানকার মানুষ নদীর ওপর খুব নিভর্রশীল। শুশুকদের মতো তাঁদের জন্যও বিশুদ্ধ পানি অত্যন্ত জরুরী। এ্যামাজন অববাহিকায় উপার্জনের পথ খুবই কম। তাই অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে যান। বেআইনি হলেও কেউ কেউ সোনার খোঁজে লেগে পড়েন। তবে সোনার খোঁজে যে পারদ ব্যবহার করা হয়, তা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। শেষ পর্যন্ত এই পদার্থ মানুষ ও শুশুকের খাদ্যে স্থান পায়। তার ফলে এই প্রাণীদের কী হয়, গবেষকরা তা জানতে চান। মার্সোলো অলিভেইরা বলেন, ‘পশুদের শরীরে পারদের প্রভাব সম্পর্কে খুব কম জ্ঞান রয়েছে। মানুষের ওপর এর প্রভাব নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। মানুষের স্নায়ুতন্ত্র ও শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্ষয়ক্ষতির কথা জানা আছে। তবে প্রকৃতির কোলে প্রাণিজগত সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা নেই। তাই আমরা টিস্যু বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে আলট্রাসাউন্ড, ব্লাড কাউন্টের মতো সমান্তরাল পরীক্ষা চালাচ্ছি। গবেষণার মাধ্যমে আমরা বিষক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাই।’ সূত্র : বিবিসি
×