ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় ১৪২৪

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ১৩ এপ্রিল ২০১৮

বিদায় ১৪২৪

‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ অন্ধবেগে ধেয়ে চলে আসে/বাধাবন্ধহারা/গ্রামান্তরে বেণুকুঞ্জে নীলাঞ্জনছায়া সঞ্চারিয়া/হানি দীর্ঘধারা।/বর্ষ হয়ে আসে শেষ, দিন হয়ে এল সমাপন,/চৈত্র অবসান/গাহিতে চাহিছে হিয়া/পুরাতন ক্লান্ত বরষের/সর্বশেষ গান।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কথা এটি। সেকালের কথা এটি। আজ পুরনো-ক্লান্ত বরষের সর্বশেষ গান একালে আমাদেরও গাইতে ইচ্ছে করছে। আজ ১৪২৪ সনের শেষদিন। রাত পোহালেই বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ সন। অনেক ঘটনা, অনেক স্মৃতি, হাসি-কান্না তথা আনন্দ-বেদনার স্মৃতিবিজড়িত বছরটি আজ চলে যাবে মহাকালের গর্ভে চিরকালের মতো। আর কোনদিন একে খুঁজে পাওয়া যাবে না। দিন পেরিয়ে রাত পোহালেই আসবে আরেকটি বছর, নতুন বাংলা বছর। নতুন বছরকে সবাই স্বাগত জানাবে। আনন্দে মাতবে দেশের মানুষ। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হবে সব স্থানে, বিশেষভাবে হবে রাজধানীতে। আমাদের দৈনন্দিন রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত কাজে ইংরেজী বছর ব্যবহৃত হলেও বাংলা বছর প্রাণের বছর। অতীতে সব কাজই হতো বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে। আজও গ্রামীণ জীবনে, কৃষিসংশ্লিষ্ট নানা কাজে বাংলা সন-তারিখ অনুসরণ করা হয়। কথায় বলে সময় এবং স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না, সতত তা এগিয়েই চলে। মানুষেরও তেমনি সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলা উচিত। নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়। গোটা বিশ্ব এগোচ্ছে। এগোচ্ছে মানুষের চিন্তা-ভাবনার গ-িও। দৃষ্টি প্রসারিত হচ্ছে মানুষের। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। মানুষের চোখ এখন অনেক বেশি প্রসারিত অনন্ত নীল আকাশের দিকে। মানুষ এগিয়েছে সমাজে, সংসারে এবং রাষ্ট্রীয় জীবনধারায়। বর্তমান সরকার তার ধারাবাহিকতার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর শেষ বছরে পা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার দেশের মানুষের মৌলিক অনেক দাবি পূরণ করেছে। নানা সমস্যা সত্ত্বেও গত বছরটি ভালভাবে পার করেছে সরকার। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত ছিল বলা চলে। বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে চেষ্টা করছে সরকার। বিদ্যুতে উৎপাদন ও আমদানিতে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তর, ফ্লাইওভার নির্মাণ, রাস্তা সংস্কারের মাধ্যমে যোগাযোগ খাতে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর কাজ। মেট্রোরেল এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তবেই রূপ নিতে যাচ্ছে। কৃষির সাফল্য এবারও এনে দিয়েছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। স্বাস্থ্যখাত, দেশী-বিদেশী কর্মসংস্থানসহ গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে ধারাবাহিক কাজ করে যাচ্ছে সরকার। ‘পুরনো বছরের অবসান’ হতে যাচ্ছে আজ। বিগত বছরের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে ভুল-ত্রুটির শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে আমাদের। এটাই সময়ের দাবি। মানুষ প্রত্যাশা করে আগামী বছরটি ভাল যাবে। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। জাতীয় কবি নজরুলের কথায় বলতে হবে : ‘আমরা চলিব পশ্চাতে ফেলি পচা অতীত/গিরিগুহা ছাড়ি খোলা প্রান্তরে গাহিব গীত/সৃজিব নূতন ভবিষ্যৎ।’ নতুন ভবিষ্যত গড়ার প্রেরণা নিয়ে আসুক আগামী বছরটি। পুরনো বছরকে বিদায়।
×