ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাছ রফতানিতে আয় বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৮ এপ্রিল ২০১৮

মাছ রফতানিতে আয় বাড়ছে

আগামি কয়েক দশকের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা পৌঁছে যাবে ১০০০ কোটিতে। মানুষের এই বর্ধিত সংখ্যা বাড়িয়ে দিবে আমিষের চাহিদা। কিন্তু এই সময়ে প্রাকৃতিক উৎসগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি না পেয়ে উল্টো হ্রাস পাবে। এই অবস্থায় পুষ্টির চাহিদা পূরণে মানুষ নির্ভর হয়ে পড়বে খামারে উৎপাদিত মাছসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক খাবারের উপর। আর এই সুযোগে উন্নয়নশীল দেশগুলো খামার উৎপাদিত সামুদ্রিক খাবার রফতানি করে আয় করে নিতে পারবে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ। আর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার তার জন্য এটি আরও বড় সুযোগ আমাদের কাছে। বাংলাদেশের খামারে মাছ চাষের যে সুযোগ রয়েছে তা পৃথিবীর অনেক দেশেই নেই। তাই নতুন কিছু উদ্যোগ আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশও আয় করতে পারবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ২০১৩ সালের এক জরিপ মতে ২০১৩ সালে বিশ্বে যত মাছ উৎপাদিত হয়েছে, এর ৩৭ শতাংশই রফতানি করেছে বিভিন্ন দেশ। মাছের এ বাণিজ্যের পরিমাণ ১৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাপী মাছ-বাণিজ্য দ্রুতগতিতে বাড়ছে। তাই খাতটিকে এখন বেশ অগ্রসরমাণ বলে মনে করা হচ্ছে। সংস্থাটি আরও বলছে, এ অবস্থায় ছোট মৎস্য খামারিদের উৎসাহিত ও সহযোগিতা করা গেলে মাছ উৎপাদনকারী দেশগুলো মৎস্য-বাণিজ্য আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে। বিশ্বে প্রতিবছর মাছের উৎপাদন যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মাছের বাণিজ্যও। এফএও বলছে, ২০১৩ সালে বিশ্বে মাছ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। প্রাকৃতিক জলাশয় ও চাষ থেকে মাছ উৎপাদিত হয়েছে ১৬ কোটি টন মাছ। আগের বছর মাছ উৎপাদিত হয় ১৫ কোটি ৭০ লাখ টন। আর মাছ বেশি উৎপাদিত হলে তা রফতানি হবে এটাই স্বাভাবিক। এদিকে দেশে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে মাছের উৎপাদন। এ ধারাবাহিকতায় বিগত এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে মাছের উৎপাদন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে মাছের উৎপাদন। গত অর্থবছর (২০১৬-১৭) শেষে মাছের উৎপাদন ৪০ লাখ টন ছাড়িয়েছে। কয়েক বছর ধরে মাছ রফতানিতে এক ধরনের স্থবিরতা চলছিল, যেটা এখন কাটতে শুরু করেছে । কারণ উল্লিখিত অর্থবছরে মাছ রফতানিতে আয় বেড়েছে ২৩.৫৭ শতাংশ। তথ্য মতে, গত এক দশকে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৬১ শতাংশ। দেশে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২৪ লাখ ৯০ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এসে দাঁড়ায় ৪০ লাখ ১০ হাজার টনে, যা এর আগের বছরের (২০১৫-১৬) থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টন বেশি। সে বছর দেশে মাছ উৎপাদন হয় ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টন। বিবিএসের তথ্য আরও বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে স্বাদু পানিতে মাছ হয়েছে ৩৩ লাখ ২০ হাজার টন। আর নোনা পানিতে মাছ হয়েছে ছয় লাখ ৯৭ হাজার টন। দুই ক্ষেত্রেই উৎপাদন বেড়েছে। তবে দেশে ইলিশের উৎপাদনও বাড়ার প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক মাছের উৎপাদনে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে চার লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ লাখ টনে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর মেয়াদে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রফতানিতে আয় হয়েছে ২৭ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা; যা এ সময়ের রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২ দশমিক ০৫ শতাংশ বেশি। আর অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে শুধু চিংড়ি রফতানিতে আয় হয়েছে ২৪ কোটি মার্কিন ডলার; যা মোট হিমায়িত ও জীবিত মাছ রফতানি আয়ের ৮৮ দশমিক ১২ শতাংশ। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। এতে জানানো হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রফতানিতে আয় হয়েছিল ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরে এই খাতের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে প্রথম পাঁচ মাসে ২০ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার আয়ের রফতানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ২৭ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২ দশমিক ০৫ শতাংশ বেশি। ইপিবির হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর মেয়াদের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই মেয়াদে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রফতানি আয় ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এ খাতের পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ২৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেরর প্রথম পাঁচ মাসে জীবিত মাছ রফতানিতে আয় হয়েছে ১৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার; যা এই সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫২ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। আলোচ্য সময়ে এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর মেয়াদে জীবিত মাছ রফতানিতে আয় হয়েছিল ৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে জীবিত মাছ রফতানিতে আয় ১৭৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে হিমায়িত মাছ রফতানিতে আয় হয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার; যা এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে রফতানিতে আয় বেড়েছে ৩২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর মেয়াদে হিমায়িত মাছ রফতানিতে আয় হয়েছিল ১ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
×