ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়াতে বেলফাস্টে

প্রকাশিত: ০৭:১০, ৬ এপ্রিল ২০১৮

বেড়াতে বেলফাস্টে

(পূর্ব প্রকাশের পর) সেদিনের মতো যাত্রা শেষ হল শহরে ফিরতি পথে গেম অব থরন্সে দেখা বিখ্যাত ডার্ক হেজেসে হেঁটে। নির্জন এক রাস্তার দু’ধারে ন্যাড়া গাছের সারি উপরের দিকে একে-অপরের সঙ্গে খিলান আকৃতিতে মিলে এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করেছে আর তা দেখতে সারা দুনিয়া থেকে পর্যটকের দল হুমড়ি খেয়ে এসে পড়ছে সেখানে। পরদিন সকালে প্রথমেই রওনা দিলাম বিশ্বখ্যাত টাইটানিক জাহাজের জন্মস্থান বেলফাস্ট টাইটানিক কোয়ার্টারে। পয়লা গন্তব্য টাইটানিক জাদুঘর। বিংশ শতকে পেলাই টাইটানিক তৈরি হয়েছিল এখানে। জাদুঘরে মূলত সে ইতিহাস-ই বর্ণনা করা হয়েছে বেশি করে। কত শ্রমিক কী অপরিসীম পরিশ্রম করে সে সময় এই জাহাজের জন্ম দিয়েছে তা-ই দেখে নিলাম জাদুঘরের ক্যাবল কারে চড়ে। পরের গন্তব্য শহরতলীর বেলফাস্ট ক্যাসেল ঘুরে ক্রামলিন রোডের পুরাতন কারাগারে। সৌভাগ্যবশত কারাগারে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল কারাভ্যন্তরের গাউডেড ট্যুর। প্রথমেই গমন বন্দীদের যেখানে পদার্পণের পর পোশাক পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হতো নির্দিষ্ট সেলে সেখানে। বেলফাস্ট ক্রামলিন রোড গাওল (পুরাতন কারাগার) এখন আর ব্যবহৃত না হলেও ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে কালের সাক্ষী হয়ে; আর এখন পরিণত হয়েছে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণে। আমাদের পুরাতন কারাগার ঘিরেও অনেক গুঞ্জন শোনা গেলেও কিছুদিনেই সেসব স্তিমিত হয়ে এখনতো তা আবার ব্যবহৃত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কারা নিবাস হিসেবে! গাইড তারপর আমাদের নিয়ে চললো শীতল (আবহাওয়া ঠাণ্ডা হওয়ায় এবং ইট-পাথরের ইমারত হওয়ায় একটু বেশি-ই শীত অনুভূত হচ্ছিল) এক গুহার ভেতরে। এই গুহা দিয়েই রাস্তার অপর পাশের পুরাতন কোর্ট ভবনে বন্দী আনা-নেয়া করা হতো এক সময়। গুহা নির্মাণের সময় যানবাহন বলতে স্বল্প সংখ্যক ঘোড়া আর ঘোড়ার গাড়ি থাকলেও কালের পরিক্রমায় তা ভারী ভারী লরিতে পরিণত হওয়ায় গুহার নির্মাণেও পরিবর্তন আনা হয় পরবর্তীতে। ফলে কেবল লরি-ই নয় বিধ্বংসী বোমা মেরেও আর গুহা থেকে বন্দী নিয়ে পালানো যেত না। তারপর আমরা গেলাম জেল গভর্নরের কক্ষে। গাইডের ভাষায় উষ্ণ বলে কারাগারের ভেতর তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা এটা। এরপর আমাদের নিয়ে চললেন মূল কারাগারে, যেখানে বন্দীরা দিনানিপাত করতো; আর বর্ণনা করতে লাগলেন নানা ইতিহাস। এই জেলখানায় যেমন বন্দি ছিল কুখ্যাত অপরাধী ঠিক তেমনি ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াই করেও কারাবাস করতে হয়েছে অনেককে। তেমনি এক উদাহরণ টেনে আনলেন আমাদের নারী গাইড। নারীদের ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করায় অনেককেই কারাবরণ করতে হয়েছে সেসময়। আবার শাস্তিরও ছিল নানান ধরণ। প্রথমদিকে বন্দীদের দিয়ে পাথর ভাঙ্গার মতো ভারি ও পরিশ্রমী কাজ দেয়া হতো। আবার অনেক সময় শাস্তির অংশ হিসেবে বন্দীদের কারও সঙ্গেই কোন রকম কথাবার্তা বলতে দেয়া হতো না; এমনকি মুখও ঢাকা থাকায় চোখের ভাষায়ও বার্তা বিনিময়ের সুযোগ ছিল না একে অপরের সঙ্গে। কারা কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল তাতে জেল থেকে বের হয়ে একে অপরকে যেন চিনতে না পারে। কিন্তু ফলাফল হল ভয়ানক। অনেকেই মারাত্মক মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে গেল, তাই বিধান পরিবর্তন করে কথা আগের মতোই বলতে না দিলেও অন্তত মুখ দেখতে পেত বন্দীরা পরের দিকে, যাতে অন্তত চোখ দিয়ে কিছু কথা নিজেদের মধ্যে সেরে নিতে পারে। শেষমেষ আমরা গাইডের পিছন পিছন চললাম কনডেম সেল (যেখানে শুধু ফাঁসির আসামিদের রাখা হতো) ও ফাঁসি কার্যকরের মঞ্চের দিকে। অপরাধীর ঠিক পাশের ঘরেই সর্বক্ষণ একজন অফিসার নিয়োজিত থাকত তার উপর সব সময় নজরদারি রাখতে; তবে ফাঁসির দিন সকালে ঠিকই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নতুন একজন অফিসার এসে আসামিকে নিয়ে যেত ফাঁসির কাষ্ঠে যেন এতদিন একসঙ্গে থাকার ফলে আসামি সেই অফিসারের কাছ থেকে কোন আবেগের সুযোগ নিতে না পারে। আমাদের দেশের মতোই আসামিকে আগে থেকে জানানো হতো না কবে তার ফাঁসি কার্যকর হতে পারে। তবে রায় কার্যকরের আগের দিন পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়া হতো শেষবারের মতো দেখা করে নিতে। ফাঁসি দেয়া হতো সকাল আটটায়। তাই আগেই রাতেই তার পছন্দের খাবার সম্পর্কে জেনে নেয়া হতো এবং তাকেও জানিয়ে দেয়া হতো এটাই হতে চলছে তার শেষ আহার; চাইলে সে ডাক্তারের কাছ থেকে কোন ওষুধ নিয়ে নিতে পারে যেন সে রাতে অন্তত মৃত্যুচিন্তাকে পাশ কাটিয়ে এটুু ঘুমিয়ে নিতে পারে। এই কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫৪ জনের মধ্যে অন্যায় সাজা ঘাটার মতোই অন্যায্যভাবেও কাউকে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে এখানে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরের পরে মৃতদেহ পরিবারের হাতে সমর্পণ না করে পরিচয়বিহীন ও শনাক্তকরণের ব্যবস্থা না রেখে কারাগারের মধ্যেই সমাহিত করা হবে বলে বন্দী ও তার পরিবারকে জানানো হতো। তবে বাস্তবে জেল গবর্নর যাকে যেখানে সমাহিত করা হতো তার পাশের পাথরের দেয়ালে তার নাম খোদাই করে রাখত; যেন পরে কোন প্রয়োজনে চিহ্নিত করা যায়। পরবর্তীতে কারাগার যখন স্থানান্তরিত হয় তখন রানীর এক বিশেষ মার্জনার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা নিজ খরচে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পরিজনের লাশ নিশ্চিত হয়ে কারাগার থেকে নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে সমাহিত করতে পারে। পুরো প্রক্রিয়া বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় ও অনেক পরিবার চরম ঘৃণ্য অপরাধ করায় অপরাধীকে চিরতরে পরিত্যাগ করায় এ উদ্যোগে খুব কমই সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানা গেল। শেষদিন আসার তাড়া ছিল তাই বেশি দূর না যেয়ে প্রথমেই গেলাম সেই যে বেলফাস্ট সিটি হলের কথা বলেছিলাম সেখানে। যদিও রাতে সিটি হলো দেখতে আরও বেশি রূপবতী। নীলাভ আলোয় বেলফাস্ট সিটি হল মোহনীয় রূপ ধারণ করে সেসময়! আমরা যখন যাই সিটি হলে তখন একটা প্রদর্শনী চলছিল সঙ্গে প্রত্যেকদিন নিয়ম করে সকাল ১১টা, দুপুর ২টা ও ৩টায় তিনবেলা বিনামূল্যের গাইডেড ট্যুর আছে! এখানেও গাইড বর্ণনা করে চললেন সিটি হলো নির্মাণের ইতিহাস; কবে, কখন, কিভাবে তৈরি হলো এই বিশাল দালান! তারপর আমাদের নিয়ে চললেন ভবনের বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থানসমূহে। এসবের এক ফাঁকেই ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয়ে গেল বেলফাস্ট সিটি কাউন্সিলের (আমাদের সিটি কর্পোরেশনের মতো) ডেপুটি লর্ড মেয়রের সঙ্গে! বেলফাস্টে ২০১৪ সালের পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিলের প্রধান চার পদেই নারীরা নেতৃত্বে এসেছেন। গাইড দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ডেপুটি লর্ড মেয়র যখন কোন এক মিটিং সেরে লবি ধরে কোথাও যাচ্ছিলেন তখন তিনি সেসব ফেলে আমাদের সঙ্গে করমর্দন করে কুশল বিনিময় করলেন আর আমাকে ভাবনায় ফেলে দিলেন ভিনদেশী কোন পর্যটকের জন্য কোন দর্শনীয় স্থানে কি আমরা এমন মূল্যের বিনিময়ে হলেও সমস্ত কিছু জানানোর ব্যবস্থা রেখেছি? বা আমাদের দেশের কোন মেয়র কি যেভবনে নিত্যদিন পর্যটকেরা আসে সেখানে তার কাজ ফেলে এত আন্তরিকতা নিয়ে কুশল বিনিময় করে তাদের মুগ্ধ করে দিতেন? এসব ভাবতে ভাবতেই ঢুকে পড়লাম কাউন্সিল চেম্বারে। ওয়েস্টমিন্সটারের হাউস অব কমন্সের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এখানেও কাউন্সিলরদের মুখোমুখি বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে; মাঝখানের সবচেয়ে বড় আর উঁচু চেয়ারটি লর্ড মেয়র আর তার পাশের একটি চেয়ার ডেপুটি লর্ড মেয়র এবং অপরটি হাই শেরিফের বসার জন্য নির্ধারিত। চাইলে সাধারণ দর্শনার্থীরাও উপরের তলায় বসে কাউন্সিলের মিটিং প্রত্যক্ষ করতে পারবে; তাছাড়াও রয়েছে ক্যামেরার মাধ্যমে সর্ব সাধারণের জন্য সরাসরি সে কার্যক্রম সম্প্রচারের ব্যবস্থা। ৬৬ জন কাউন্সিলর মিলে প্রতি বছরের জুলাইয়ে তাঁদের শহরের লর্ড মেয়র; ডেপুটি লর্ড মেয়র ও হাই শেরিফ নির্বাচিত করেন। প্রত্যেক মাসে একবার কাউন্সিলের সভা বসবে, তাও সাধারণত সন্ধ্যা ৬টায়। যেহেতু দিনের বেলায় কাউন্সিলররা সবাই যাঁর যাঁর কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাই এ ব্যবস্থা। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে যেসব উপ-কমিটি রয়েছে তারাও প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার বসে সিদ্ধান্ত নিতে। এখানে মাঝে-মধ্যেই হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলের কার্যক্রম জানাতে ও রাজনীতিতে উৎসাহিত করতে যুব কাউন্সিলের আয়োজন করা হয়। তাইতো তাঁদের এযাবৎকালের সবচেয়ে কনিষ্ঠ কাউন্সিলর যখন মেয়র হন, তখন তিনি আঠার কেবল! মেয়র হয়ে তবেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করেন! ভাবতেই অবাক লাগে বেলফাস্টের সিটি কাউন্সিলেও কত উন্নত গণতন্ত্র চর্চা হচ্ছে! তাই হয়তো ঝামেলাহীন, পরিচ্ছন্ন, সমস্ত নাগরিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি করের টাকার পাই টু পাই হিসাবও সেখানকার বাসিন্দারা পাচ্ছে। অথচ আমাদের জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার সর্বোচ্চ জায়গা জাতীয় সংসদ কালের পর কাল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেবল দলীয় প্রধানের স্তুতিতে মেতে থাকে! সিটি হল ভাড়া নিয়ে কেউ চাইলে সেখানে বইয়ের আয়োজনও করে ফেলতে পারে তাও জানা হল এই দারুণ গাইড ট্যুরের সৌজন্যে। সিটি হল ভ্রমণের একপর্যায়ে গাইড আমার গাঁয়ে ডেপুটি লর্ড মেয়রের জন্য তৈরি সত্যিকারের গাউনও চাপিয়ে দিলেন ছবি তুলতে আর বলে গেলেন আগে নিয়মিত পরা হলেও এখন এই বিশেষ গাউন বছরে ডেপুটি লর্ড মেয়রের তিন বার পরা হয় কেবল। হাতে বিশেষভাবে তৈরি এই গাউন সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি স্থায়ী এবং এতে মেশানো থাকে বিশেষ এক ধরনের সুগন্ধি! শেষে ভিমরি খেলাম যখন জানলাম এই গাউন বানাতে নাকি খরচ পড়েছে চার হাজার বৃটিশ পাউন্ড (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা!)। লর্ড মেয়রের গাউন নাকি আরও বেশি দামী আর সেই দামী গাউন তিনি এমন দেদারসে সকল দর্শনার্থীদের গাঁয়ে চাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ছবি তুলতে! আইনের ছাত্র হওয়ায় তখনও নর্দান আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্ট বিল্ডিং দেখতে না পাওয়ায় মনের মধ্যে একটু খুঁত খুঁতানি চলছিল। আগেই তাই ঠিক করে রেখেছিলাম বিমানবন্দর যাওয়ার আগে দূর থেকে হলেও পার্লামেন্ট ভবন দেখেই যাব। শহর থেকে একটু দূরে হওয়ায় পার্লামেন্টের জন্য বাস ধরতে যাওয়ার পথে বেলফাস্টের ভিক্টোরিয়া স্কয়ার শপিং মলয়ের চূড়ায় উঠে দ্রুত দেখে নিলাম গোটা শহরের ৩৬০ ডিগ্রী ভিউ। অতঃপর যাত্রা গণতন্ত্রালয় পানে। ফাঁকা নির্জন বিশাল প্রান্তরে মস্ত এক ভবন বানিয়ে রেখেছে আইরিশরা তাঁদের গণতন্ত্র চর্চা করতে। নর্দান আয়ারল্যাণ্ড যখন আয়ারল্যান্ডকে ত্যাগ করে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়, তখনই রাণী তাঁদের অনুমতি দিয়েছিলেন পৃথক সংসদ তৈরি করতে। পার্লামেন্ট ভবনের স্থপতি চেয়েছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান তিন অঙ্গকে (নির্বাহী, সংসদ ও বিচার বিভাগ) একই ভবনে বসাবার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখেই তা আর সম্ভব হয়নি। পেল্লাই সাদা রঙয়ের ভবনটি বাইরে থেকে দেখতে চারতলা বলে ঠাওর হলেও আসলে নাকি ছয়তলা (উপরে ও নিচে বাড়তি দুই তলা রয়েছে, যা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না)। এসব-ই জানা হলো ভাগ্যক্রমে আবারও সেই বিনামূল্যের গাইড ট্যুরের সময় হাজির হওয়ায়। গাইড জানাল এই জনতার ভবন চাইলে যে কেউ বিনামূল্যে সমাজের জন্য তহবিল সংগ্রহের কোন কাজে বা প্রদর্শনীর নিমিত্তে ব্যবহার করতে পারে। গাইডের মুখ থেকে এই তথ্য জানার পড়ে আবার আমার বুকের মধ্যে খোঁচা দিয়ে উঠলো; আমাদের শেরে বাংলা নগর এভিনিউয়ের অপূর্ব সুন্দর স্থাপনাটি কবে জনতার ভবন হয়ে উঠতে পারবে? আর কবে-ইবা জনকল্যাণে এ রকম বিনামূল্যে নাগরিকরা তা ব্যবহারের সুযোগ পাবে? একপর্যায়ে ভবন ঘুরতে ঘুরতে গাইড জানাল এই দালানের ছাদ জৌলুসময় হলেও ছাদ ও তার ঠিক নিচের মেঝের ডিজাইন কিন্তু একই! স্থপতি এর মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চেয়েছেন ওপর তলার মানুষদের জীবন জৌলুসময় হলেও রাষ্ট্রের নিকট সকল নাগরিক সমান; কারও প্রতি কোন বৈষম্য নেই; হতে পারে তাঁদের জীবনমান ভিন্ন। গাইড জানাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যয়বহুল এই ভবন একেবারেই নতুন ছিল; তাই যুদ্ধের রোষানল থেকে এই দামী স্থাপনা বাঁচাতে ভিন্ন কৌশল নিতে হয়েছিল আইরিশদের। পুরো ভবন তারা ঘাসে মুড়ে দিয়েছিল, যেন শত্রুর বিমান তা চিহ্নিত করে আক্রমণ চালাতে না পারে। তবে ঘাসে ঢেকে দেয়ায় যুদ্ধ শেষে ঘাস তুতলে যেয়ে বোঝা গেল দেয়াল ঘাসের রং শুষে নিয়ে তার নিজের উজ্জ্বল্য হারিয়েছে। তারপর আমরা ঢুকলাম আইরিশ নীতিনির্ধারকদের মূল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং নানা মতের সম্মিলন ও বিতর্কের স্থানে। এখানেও সেই হাউস অব কমন্সের ডিজাইনের প্রভাব। সরকারী দল বসে স্পিকারের ডান পাশে, বিরোধীরা বাম পাশে আর অন্যান্যরা সামনের দিকটাতে। পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকতেও নিরাপত্তার বাড়াবাড়িতে বেগ পেতে হয়নি তেমন। সবখানে সবাই খুব আন্তরিক। সমগ্র যুক্তরাজ্যে প্রথম দেখাতেই হাসিমুখে সবার একই কথা কিভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি? এবং এ কথা তাঁরা কেবল বলার জন্যই বলে না; উপরন্তু সত্যিকারে মন থেকেই তাঁরা সকলকে সহযোগিতা করতে চায় বলেই তাঁদের সবার ব্যবহারে মনে হয়েছে। না হলে, যেটা তাঁর কাজ না; সে বিষয়েও তাঁদের সাহায্য প্রার্থনা করলে নিজের কাজ ফেলে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করত না। লেখক : ভ্রমণপিপাসু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক ও আইনজীবী; বর্তমানে যুক্তরাজ্যের স্টারলিং বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক জ্বালানি আইন ও নীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত। [email protected]
×