ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্মিথ-ব্যানক্রফটদের কান্না দেখে ক্রমেই তাদের প্রতি সমর্থন বাড়ছে

ক্যারিয়ারের শেষ দেখা ওয়ার্নারও কাঁদলেন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১ এপ্রিল ২০১৮

ক্যারিয়ারের শেষ দেখা ওয়ার্নারও কাঁদলেন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ স্তব্ধ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে এখন চলছে কান্নার রোল। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কেপটাউন টেস্টে বহুল আলোচিত বল টেম্পারিংয়ে জড়িত থাকার অপরাধে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার। মাঠে কলঙ্ক বাস্তবায়নকারী ব্যানক্রফটের সাজা নয় মাসের। দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন স্মিথ। সদ্যই সাবেক হয়ে যাওয়া অধিনায়ক তবু দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। একদিন পর ভুল স্বীকার করে ওয়ার্নারও কাঁদলেন, তবে ৩১ বছর বয়সী ন্যাটা ওপেনার তার ক্যারিয়ারের শেষ দেখতে পাচ্ছেন। স্ত্রী-পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যম তাকেই ঘটনার ‘নাটের গুরু’ বলে আখ্যায়িত করছে। শনিবার সিডনির প্রেস মিটে প্রশ্নবানে জর্জরিত ওয়ার্নার অনেক কিছুরই জবাব দেননি। ভবিষ্যতের জন্য তুলে রেখেছেন। ওদিকে স্মিথ-ওয়ার্নারের এমন বাঁধভাঙ্গা কান্নায় বিশ্বজুড়ে তাদের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। বলা হচ্ছে তারা তো আর খুন করেননি। ‘বুকে হাত দিয়ে বলছি, আমি ক্রিকেট খেলে সবসময়ই দেশের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে আসতে চেয়েছি।’ ভেজা চোখ আর ধরা গলায় বলেন ওয়ার্নার। মাত্র ৬ মিনিটের আবেগঘন সংবাদ সম্মেলনে হার্ডহিটার এ ব্যাটসম্যান আরও যোগ করেন, ‘দলকে জেতাতেই বল বিকৃতির পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু ভাবিনি এটা উল্টো ফল দেবে। যতদিন বেঁচে থাকব, ব্যাপারটি আমাকে অনুশোচনায় পোড়াবে।’ সংবাদ সম্মেলনে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে পরে টুইটারে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ওয়ার্নার, ‘অনেক প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারিনি। সময়মতো আমি সব প্রশ্নেরই জবাব দেয়ার চেষ্টা করব।’ বল-বিকৃতির ঘটনায় যথেষ্ট কড়া পদক্ষেপই নিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। এর মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন স্টিভ স্মিথ ও ওয়ার্নার। নয় মাস নিষিদ্ধ হয়েছেন ক্যামেরন ব্যানক্রফট। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই বলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানালেও স্মিথদের কান্না সইতে না পেরে কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ড্যারেন লেহম্যান। ওদিকে কান্নাজড়ানো কণ্ঠে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়ার পর স্মিথ-ওয়ার্নারদের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। নানা মহল থেকে তাদের প্রতি সমবেদনা জানানো হচ্ছে। অনেকেই মনে করছে তিন অসি ক্রিকেটারের ওপর আরোপিত শাস্তির মাত্রাটা বেশিই হয়ে গেছে। সাবেক কিংবদন্তি লেগস্পিনার শেন ওয়ার্ন সিডনি টেলিগ্রাফে নিজের কলামে লিখেছেন, ‘আমরা সবাই কষ্ট পেয়েছি, ক্ষুব্ধও হয়েছি। তবে এটি নিশ্চিত যে আমরা জানি না কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। কারণ এর আগে আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। তবে হিস্ট্রিয়াগ্রস্থের কারণে এমন কিছু ঘটে গেছে, যেটি তাদের আসল পাপের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সম্ভবত আমরা অপরাধের সঠিক মাত্রা না দেখেই শাস্তির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম।’ সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেন, ‘স্মিথ ও ব্যানক্রফটকে যেভাবে গণমাধ্যমের সামনে দেখেছি, তাতে তাদের উদভ্রান্ত মনে হয়েছে। তারা দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ পাওয়ার দাবি রাখে। আশা করছি এ বিষয়ে এখন থেকে তারা উপযুক্ত সমর্থন পাবে।’ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক কোচ মিকি আর্থার বলেন, ‘আমি স্মিথের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি জানি তার শয়নে-স্বপনে সর্বত্রই বিরাজ করে ক্রিকেট। সে ক্রিকেটকে খুবই ভালবাসে এবং এরজন্য সবকিছুই করতে প্রস্তুত। আমার মতে সে ছিল খুবই ভাল একজন দলনেতা এবং অসাধারণ ক্রিকেটার। আমি চাই সে পুনরায় ক্রিকেটে ফিরে আসুক। এখন সে যেখানেই থাকুক অবশ্যই ক্রিকেট নিয়ে কাজ করবে এবং কঠোর অনুশীলন করবে। সে আরও শক্তিশালী হয়ে ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করবে। তবে ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত নই।’ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটরাদের প্রতিনিধিত্ব করা সংগঠন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স এ্যাসোসিয়েশন (এসিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে ‘আমরা পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যে অসামঞ্জস্যতা খুঁজে পেয়েছি। বিষয়টির গভীরতা বিবেচনা করে প্রস্তাবিত শাস্তির মাত্রা নিয়েই আমাদের প্রশ্ন।’
×