ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর বিন নাম্বার লক

বেনাপোল বন্দর দিয়ে সব ধরনের মোটরপার্টস আমদানি বন্ধ

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১ এপ্রিল ২০১৮

বেনাপোল বন্দর দিয়ে সব ধরনের মোটরপার্টস আমদানি বন্ধ

সাজেদ রহমান, যশোর/ আবুল হোসেন, বেনাপোল ॥ যশোরের প্রায় দুই শতাধিক মোটরপার্টস ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকের বিন (বিসনেজ আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) লক করে দেয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে চলতি মাসের শুরুতে থেকে সব ধরনের মোটরপার্টস আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক আমদানিকারকের পণ্য ইতোমধ্যেই ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে চলে এসেছে। অনেকের পণ্য আবার বেনাপোল পোর্টের ওয়্যারহাউজেও আছে। কিন্তু বিন নাম্বার লক হওয়ার কারণে এসব পণ্য তারা ছাড় করাতে পারছেন না। যে কারণে নতুন করে কেউ এলসিও খুলছেন না। এর ফলে দুই শতাধিক আমদানিকারক যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি এর বিরূপ প্রভাবও পড়ছে দেশের মোটরপার্টস বাজারেও। এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে মোটরপার্টসের অন্যতম বড় মোকাম যশোর। এখানকার দুই শতাধিক আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর দিয়ে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলারের পার্টস, বাস-ট্রাকের ইঞ্জিন ও পার্টস এবং রিকন্ডিশন মোটরপার্টস আমদানি করে থাকেন। এর মধ্যে সারাদেশে মোটরসাইকেল পার্টসের মোট চাহিদার পুরোটাই যশোর থেকে যায়। আর চট্টগ্রামের পর রিকন্ডিশন মোটরপার্টসের সবচেয় বড় মোকাম যশোর। তাই যশোরের মোটরপার্টস ব্যবসায়ীদের বিন লক হওয়ার কারণে এর প্রভাব সারাদেশের মোটরপার্টসের ওপরে পড়ছে। মোটরপার্টস ও টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতি যশোর অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সবুজ বলেন, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী তাদের রিটার্ন দাখিল করার কথা। কিন্তু এতদিন দেশের কোথাও সেটা করা হয়নি। রাজধানীতে বছরখানেক হলো এটা চালু করার চেষ্টা চলছে। আমরাও এ বিষয়ে তেমন কিছু জানতাম না। মাসখানেক আগে যশোরের আমদানিকারকরা বেনাপোলে তাদের পণ্য ছাড় করাতে গিয়ে দেখেন তার বিন লক। তখন যশোর কাস্টম ভ্যাট অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় যে, পূর্ববর্তী বছরগুলোর রিটার্ন দাখিল করে বিন লক ছাড়িয়ে নিতে হবে। তাতে দেখা যাচ্ছে যে একজন ব্যবসায়ীকে ৫০, ৬০, কারও ৮৬ লাখ টাকা পর্যন্ত গুণতে হবে। আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে সমিতির পক্ষ থেকে ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অঞ্চলের কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যার যা বকেয়া পড়েছে তার চারভাগের এক ভাগ দিয়ে বিন লক খুলে নেয়া যাবে, বাকি টাকা পরে দিতে হবে। পার্টস সমিতির সভাপতি শাহিনুর হোসেন ঠান্ডু বলেন, বগুড়ায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুরনো ভ্যাট নেয়া হচ্ছে না। ঢাকায় প্রতিবিল অব এন্ট্রিতে ১০-১৫ হাজার টাকা করে নিয়ে তাদের বিন লক খুলে দেয়া হচ্ছে। অথচ যশোরে সে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। দেশের একেক স্থানের ব্যবসায়ীদের জন্য একেক রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যশোরের পার্টস আমদানিকারকদের সবাই বেনাপোল বন্দর দিয়ে তাদের পণ্য আমদানি করেন। এ খাত থেকে সরকার বছরে তিন থেকে চার শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে। যশোরের পার্টস ব্যবসার সঙ্গে প্রায় দশ হাজার মানুষের রুটি রুজি জড়িত। এখন এসব ব্যবসায়ীদের পুরনো ভ্যাটের জন্য যে টাকা দাবি করা হয়েছে তা যদি দিতে হয়, তাহলে এরা সবাই পথে বসে যাবে, এ খাতে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, আমরা পণ্য আমদানির সময় শুল্কের পাশাপাশি উৎসে ৪ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছি। প্যাকেজ ভ্যাটও দিয়েছি। এখন আরও চার শতাংশ ভ্যাট দাবি করা হচ্ছে। যশোর শহরের আরএন রোড এলাকার মোটরপার্টস ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কোয়ালিটি ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান রুবেল বলেন, ভ্যাট কমিশনারেট অফিস থেকে তার প্রতিষ্ঠানের পুরনো ভ্যাট ধরা হয়েছে ৮৬ লাখ টাকা। বিন লক ছাড়ানোর জন্য এখন সাড়ে ২১ লাখ টাকা দিতে বলছে। বাকি টাকাও পরে দিতে হবে। এ অবস্থায় ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। এসএম মোটরসের মালিক মশিয়ার রহমান বলেন, তিনি ৫৩ পিস বাস-ট্রাকের ইঞ্জিন আমদানি করেছেন, যা এখন বেনাপোল বন্দরের খোলা ওয়্যারহাউজে পড়ে আছে। বিন লক থাকায় তিনি এগুলো ছাড়াতে পারছেন না। প্রায় ২১ লাখ টাকার এসব পণ্য ছাড় করালে সরকার ১৫ লাখ টাকার রাজস্ব পেত। কিন্তু সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অঞ্চলের কমিশনার মোঃ শওকাত হোসেন বলেন, ‘ভ্যাটের টাকা তো তাদের দিতেই হবে। যার যা বাকি পড়েছে, আপাতত কিছু দিয়ে বিন লক খুলে নেয়া যাবে। কিন্তু বাকিটা পর্যায়ক্রমে দিতেই হবে। যশোরে মোট এক হাজার ছয় শ’ ব্যবসায়ীর বিন লক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৩ জন ব্যবসায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকেয়ার কিছু অংশ পরিশোধ করে তাদের বিন লক খুলে নিয়েছেন’। তিনি বলেন, ‘বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়নি কথাটি সত্য নয়, হয়ত প্রত্যেককে আলাদাভাবে বলা হয়নি, কিন্তু মোটরপার্টস ব্যবসায়ীদের সমিতিতে গিয়ে বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে’। তবে শওকাত হোসেন বলেন, ‘এবারের বাজেট প্রস্তাবনায় তিনি এ বিষয়টি উল্লেখ করবেন। সরকার এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার যদি পুরোটাই নিতে বলে পুরোটাই নিতে হবে, যদি কিছুটা বা পুরোটা মওকুফ করে, সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে’। বেনাপোল কাস্টমের অতিরিক্ত কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে মোটরপার্টস আমদানি চলতি মাসে নতুন করে কেউ আমদানি করছেনা। এর ফলে আমাদের রাজস্ব আহরনে কিছুটা বাঁধাগ্রস্ত হবে। বেনাপোল দিয়ে বছরে মোটরপার্টস ও মোটরসাইকেল পার্টস আমদানি হয়ে থাকে প্রায় হাজার কোটি টাকা।
×