ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা যদি ক্ষমতায় আসে!

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৬ মার্চ ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা যদি ক্ষমতায় আসে!

সামনেই জাতীয় নির্বাচন। আশা করছি অতীতের মতো নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধী মিত্র বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সব প্রটোকলকে অগ্রাহ্য করে পশ্চিমা দেশের দূতদের এক ‘লেভেল প্লেয়িং’ ফিল্ডের ওকালতি করতে ছোটাছুটি করতে দেখা করতে যাবে না। অবশ্য, এবার পরিস্থিতি পরিবর্তিত- প্রথমত ফৌজদারি অপরাধের মামলায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বর্তমানে দ-িত অপরাধী, যার সঙ্গে সে জেলের বাইরে থাকলেও রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাত করা হবে বিসদৃশ। দ্বিতীয়ত, খালেদা এখনও কারাগারে। তার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতির মামলা শুরু হতে পারে শীঘ্রই। উপরন্তু দু’মাস ধরে চলা পেট্রোলবোমা হামলার প্রধান আসামি হিসেবে প্রকাশ্য দিবালোকে তার দ্বারা নির্দেশিত, পরিচালিত বর্বর মর্মান্তিক নিরীহ দু’শ’র বেশি পুরুষ, নারী, কিশোর, শিশুকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যার অপরাধের বিচারের জন্য অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃতদের পরিবার এবং বিবেকবান জনগণ অপেক্ষায় রয়েছে, সেটিও শুরু হবে শীঘ্রই। স্মর্তব্য, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া শুধু দুর্নীতি করেনি, সে পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দিয়ে তার মিত্র, ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের মতোই মানবতার বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষ হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটন করে প্রমাণ করেছে, সে জিয়ার মতোই যুদ্ধাপরাধীদের মিত্র। তাদের কৃত গুম, হত্যাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারে দ্বিধাহীন, দয়ামায়াহীন। ’৭১-এর জামায়াতের অনুসরণে জেএমবি, হরকত-উল জিহাদ, হিজবুত তাহ্রীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ইত্যাদি নতুন শতাব্দীর আলবদর, আল্শামস গঠন করে তাদের দ্বারা ’৭১-এর মতোই বর্তমানকালের প্রগতিশীল মুক্তচিন্তা ও উদার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী, বিজ্ঞানমনস্ক ব্লগার, অসাম্প্রদায়িক, লালন অনুসারী, মুসলিম, হিন্দু, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ ধর্মগুরু, বাংলাদেশের উন্নয়নে কর্মরত বিদেশী হত্যা পরিচালনা করেছে খালেদা-তারেকের নেপথ্য সাহায্যে, আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে। এমন কি, ভারতের উল্ফা জঙ্গী নেতারাও খালেদা-তারেকের পূর্ণ সহায়তায় বাংলাদেশে স্থায়ী ঘাঁটি গেড়েছিল। এসব অপরাধমূলক কর্মকা- এই প্রমাণ করে যে, ১.খালেদা-তারেক মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী, মুক্তিযোদ্ধাবিরোধী এবং ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের ঘনিষ্ঠ মিত্র, নতুন জঙ্গী তৈরি করে উদার, মুক্তচিন্তার মানুষ হত্যায় জামায়াতের সহযোগী। ২. নব্য জঙ্গীদের দ্বারা গুলশান হলি আর্টিজানে বিদেশী, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের হত্যায় খালেদার নীরবতা বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিঘিœত করার পেছনে সমর্থন থাকাকেই প্রমাণ করে। অর্থাৎ, খালেদা এ যুগে জামায়াত কর্তৃক জন্ম দেয়া জঙ্গী দলের দেশবিরোধী কর্মের আশ্রয় প্রশ্রয়দানকারী, তাদের মা-জননী হওয়ার প্রমাণ রেখেছে। ৩. খালেদা হেফাজতকে ব্যবহার করে শাপলা চত্বরে তাদের দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান ধর্মঘট করিয়ে পুরো এলাকা, রাস্তাঘাট, অফিস, ব্যাংক, হকারদের সব রকম দোকান ধ্বংস করে, সব মালামাল, এমনকি কোরান-হাদিসের কপি অগ্নিদগ্ধ করে যে ধ্বংসাত্মক কাজের মাধ্যমে দেশ ধ্বংস, সরকার অচল করতে চেষ্টা করেছিল; সে ধ্বংসযজ্ঞ পরে ১৩, ১৪, ১৫ সালের পেট্রোলবোমা হামলা করে মানুষ হত্যা, রাজপথ, বৃক্ষ ধ্বংস, স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানকে পরাজিত করে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ যেন অকার্যকর, অনুন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পাকিস্তানের আইএসআই-এর মনের, প্রাণের এই আশা পূরণে এই নেত্রীকে ওরা বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে পেয়েছে বলেই কোন কারণ ছাড়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বার বার এ নেত্রীর ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ফল ভোগ করে যত দ্রুত গতিতে উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারত, ততখানি পারেনি এসব বাধাবিঘেœর কারণে। অর্থাৎ এ দেশের, এ বাঙালী জাতির উন্নয়নের পথে প্রধান বিঘœকারী খালেদা ও জামায়াত এবং জামায়াতের দ্বারা সৃষ্ট জঙ্গী গোষ্ঠী। সুতরাং জাতিকে, জাতির নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবী, সব পেশাজীবী, শিক্ষিত, কম শিক্ষিত, নিরক্ষর নারী, পুরুষকে ভাল করে খতিয়ে দেখতে হবে, যদি এই যুদ্ধাপরাধী মিত্র, জঙ্গী মিত্র এবং মুক্তিযুদ্ধে প্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশের ধ্বংসকারী নেত্রী, তার সহযোগী জামায়াত-শিবির-জঙ্গীদের দল আগামী এবং ভবিষ্যতে কোন নির্বাচনে যদি জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে, তাহলে এ দেশের, এ বাঙালী জাতির, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের, বাঙালী সংস্কৃতির কি পরিণতি হবে? সন্দেহ নেই, এক অভাবনীয় ধ্বংসাত্মক অপকর্ম দ্বারা এ দেশ কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। কি কি হতে পারে, তা কল্পনা করতে গিয়ে এক দিবা স্বপ্নে আমি দেখতে থাকি- ১. প্রথম রাতেই ২১ আগস্ট দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার পরিকল্পক তারেক এসে পৌঁছেছে এবং আগেই তৈরি করা তাদের হিটলিস্ট অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার খুনী-জঙ্গী বাহিনী হত্যা করছে কমপক্ষে সারাদেশে লাখখানেক নারী-পুুরুষকে। সংখ্যা কমবেশি হতে পারে, কিন্তু এ কাজটি যে করা হবে তাতে সন্দেহ নেই। ২. প্রথম রাতেই দেখছি Ñ গ্রেনেড, বোমা মেরে পদ্মা সেতু ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে! সেই সঙ্গে বিদ্যুতকেন্দ্র, রূপপুরসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ধ্বংস করছে জঙ্গী জিহাদী ক্যাডাররা, যাদের মা খালেদা। ৩. জিয়ার মতোই আবারও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীরা মুক্তি পাচ্ছে, দ-িত ফাঁসি হওয়াদের প্রচুর অর্থ সম্পদ, ব্যবসা, ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে, বিচারক, সাক্ষীদের ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করা হচ্ছে। ৪. মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনাদের ভাতা, সুযোগ-সুবিধাদি বন্ধ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, শরিক দলের নেতাদের রাষ্ট্রদ্রোহী গণ্য করা হচ্ছে এবং বিচার করা হচ্ছে। ব্লগার, বিজ্ঞানমনস্ক, লালনভক্ত, সংস্কৃতিসেবীদেরও রাষ্ট্রদ্রোহী গণ্য করা হচ্ছে। ৫. রাষ্ট্রের নাম ‘মডারেট মুসলিম বাংলাদেশ’ রাখার সিদ্ধান্ত হচ্ছে। ৬. শীঘ্র বাঙালী নারীর মস্তক হিজাবে আবদ্ধ করা হবে, জাতীয় পোশাক হবে শাড়ির বদলে সৌদি লম্বা বোরকা, হাতমোজা, পা মোজা দিয়ে বাইরের আলো-বাতাস যেন এদের হাত, পা দেখতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। যদিও এখন, এই ২০১৭/১৮তে যখন আরেকটি সৌরজগতে আরেকটি পৃথিবীসদৃশ গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে, যাতে পানি আছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে এবং বিজ্ঞানীরা মানুষের বিকল্প আবাস খুঁজছে, তখন বাঙালী আধুনিক নারী হিজাব-বোরকায় বন্দী হচ্ছে, যা তাদের প্যান্ট-শার্ট-কোট পরা সঙ্গীরা মেনে নিচ্ছে! আধুনিক মেয়েদের জিন্স প্যান্ট-টপস্ পরা নিষিদ্ধ করা হবে। একমাত্র নারী খালেদা জিয়া জর্জেট শাড়ি পরে চুল, মুখম-ল দেখাতে পারবে। ৭. হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, আদিবাসীদের ব্যক্তিগত জমি, সম্পত্তি রাখা নিষিদ্ধ হবে। যারা এ দেশে থাকবে তাদের জিজিয়া কর দিতে হবে। ৮. জিয়া যেমন রাত-দিন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অপরাধে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের ফাঁসির হুকুম লিখত, তেমনি তারেক মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী সেনা, পুলিশ, বিভিন্ন পেশাজীবীর গ্রেফতার ও দ-ের হুকুম লিখবে। ৯. বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকা খুনীরা, পলাতক যুদ্ধাপরাধীরা বিএনপি-জামায়াতকে এক দলে রূপান্তরিত করে ‘বিজাপা’ গঠন করে সেই সরকারের মন্ত্রী পদে আসীন হবে। ১০. সারাদেশে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ভাষা শহীদ দিবস, পহেলা বৈশাখ, সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক, সিনেমা, বাজনা, মেলা, উৎসব বন্ধ ঘোষণা করা হবে। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা হবে। বাংলায় কথা বললে, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি পড়লে, ব্যবহার করলে দোররা মারা হবে। ১১. বয়স্ক খালেদাকে তার প্রিয়, বেহেশত সমান পাকিস্তানে বেহেশতী সুখে বসবাস করার ব্যবস্থা করা হবে। তারেক দোর্দ- প্রতাপে মডারেট মুসলিম রাষ্ট্র শাসন করবে। এমন সময় আমাকে ঘুমের মধ্যে বোবায় ধরাতে আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। বুকের ওপর কে একজন চেপে বসে আছে, অনেক কষ্ট করে পাশ ফিরতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঃ কি আরাম! সবটাই স্বপ্ন ছিল বলে এখনও বেঁচে আছি- জঙ্গী-ক্যাডারদের হাতে এখনও নিহত হইনি, এই ভেবে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। লেখক : শিক্ষাবিদ
×