ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমানোর পরামর্শ অর্থমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমানোর পরামর্শ অর্থমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ খেলাপী ঋণ বেড়ে যাওয়ার জন্য সরকারও দায়ী বলে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল আবদুল মুহিত। শনিবার সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শ্রেণীকৃত ঋণ অত্যন্ত বেশি, যা বেশি হওয়ার জন্য কিছুটা আমরাও দায়ী, সরকার দায়ী। আমরা অনেক সময় আমাদের ছয় ব্যাংকের (রাষ্ট্রায়ত্ত) ওপর জারিজুরি করি। সোনালী ব্যাংক যেহেতু সবচেয়ে বড় ব্যাংক, তাই জারিজুরিটা সোনালী ব্যাংকের ওপর একটু বেশিই হয়। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। এতে সভাপতিত্ব করেন সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সোনালী ব্যাংকের সিইও এ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা বিশ্বাসই করা যায় না সোনালী ব্যাংকের এখন আমানত ও ঋণের অনুপাত প্রায় ৩৫/৩৬ শতাংশ। এটা ক্ষতিকারক। আরও একটি দোষ আছে, সেটা হচ্ছে খেলাপী ঋণ। এটা অনেক বেশি। এর জন্য সরকার দায়ী, আমরাও দায়ী। আর কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহককে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেয়াটাও দায়ী। তিনি বলেন, আমরা দায়ী কারণ আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংকের ওপর একটু বেশি জারিজুরি করি। যেহেতু সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড়, তাই এই ব্যাংককের ওপর জারিজুরিটা একটু বেশি পড়ে। তবে খেলাপী ঋণ আমাদের কমাতে হবে। সেক্ষেত্রে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের বিস্তারিত সক্ষমতা যাচাই করতে হবে। এক্ষেত্রে দুটি পরামর্শ দেন তিনি। তা হলো, প্রথমে গ্রাহকের কেওয়াইসি ফরম ভালভাবে চেক করে নেয়া অর্থাৎ ঋণ দেয়ার আগে গ্রাহকের ঋণ পরিষদের সক্ষমতাসহ বিস্তারিত তথ্য যাচাই করা। দ্বিতীয়ত, যে প্রকল্প ঋণ দেয়া হবে তা সঠিকভাবে বিশ্লষণ করা। কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তার সঠিক বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা নির্ভুলভাবে করতে হবে। তাহলে সমস্যায় পড়তে হবে না। তখন খেলাপীও কমে যাবে। সেজন্য যেসব প্রকল্পে ঋণ দেয়া হবে, সেগুলো ভালভাবে যাচাই করে নিতে হবে। তিনি বলেন, আমি প্রায়ই বলে থাকি ব্যাংকিং খাতে যথেষ্ট দুর্বলতা আছে। এটাতে আমি মোটেও সন্তুষ্ট নয়। এটা স্বীকার করি। তবে ১৯৭২, ৭৩ থেকে ৮০ দশক। এই সময়ের চেয়ে অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমিয়ে আনতে হবে। এই ব্যাংকের ১ হাজার ২১১টি শাখার মধ্যে ১৮১টি লোকসানি শাখা। এটা একটু বেশি। এ লোকসানি শাখা বন্ধ করা বেশ কষ্টকর। তবে যেসব স্থানে লোকসানি শাখা রয়েছে সেগুলো যদি স্থান পরিবর্তন করে এর আশপাশে যায় এবং ওইসব এলাকাগুলো কাভার করে তাহলে লোকসান হয়তো কমে আসতে পারে। এ বিষয়টি সোনালী ব্যাংক পরীক্ষামূলকভাবে করতে পারে। এ সময় সোনালী ব্যাংককে ভাল অবস্থানে পৌঁছাতে সরকার সহানুভূতিশীলতার সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেন অর্থমন্ত্রী। মুহিত বলেন, ২০০৯ সালে পরিকল্পনা করেছিলাম সোনালী ব্যাংককে একটি আদর্শ ব্যাংকে রূপান্তর করতে। কিন্তু তা হয়নি। ২০১৯ সালেও হবে না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এটা করা সম্ভব। কারণ আপনারা সবাই যোগ্য। অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, সরকারী চাকরি করি- এই প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে গ্রাহককে সেবা দিতে হবে। কারণ সরকারী ব্যাংকের চেয়ে গ্রাহকরা বেসরকারী ব্যাংকে ভাল সেবা পায়। তাই তাদের আস্থা ফেরাতে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, অনেকে ব্যাংকিং খাতের সমালোচনা করে। কিন্তু এ খাতে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা বিবেচনা করে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, এই মুহূর্তে সোনালী ব্যাংকের খেলাপী ঋণ সবচেয়ে বেশি ৩৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ১২১১ শাখার মধ্যে এই ব্যাংকের লোকসানি শাখার পরিমাণ ১৮৮। তিনি বলেন, খেলাপী গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করার আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। বড় প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার আগে এর মূলধনের আকার, উৎপাদন ক্ষমতা, সক্ষমতা, অর্থায়ন প্রয়োজনীয়তা, ব্যবস্থাপনা, অতীত পারফরমেন্সসহ সব দিক বিবেচনায় আনতে হবে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে গবর্নর বলেন, বড় ঋণ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী না হলেও চলবে, আমাদের দরকার মধ্যম পর্যায়ে ঋণ দেয়া, অর্থাৎ এসএমই যে ঋণগুলো (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে) আছে, সেগুলোর একাধিক লাভ রয়েছে। শুধু যে এই ঋণ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তা নয়, এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। সোনালী ব্যাংকের ঋণ ও আমানত অনুপাত বা এডি রেশিও (এডিআর) ৩৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। এটা মোটেই সন্তোষজনক নয়। মনে রাখতে হবে শুধু দায়িত্ব নয়, দিন শেষে ব্যবসাও করতে হবে। অবশ্যই ভাল মুনাফা করতে হবে। ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে গবর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও পরিচালনা পর্ষদের সকল নির্দেশনা মেনে ঋণ দিলে কোন সমস্যা হবে না।
×