ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তারুণ্যের অগ্রযাত্রায় ব্যতিক্রম আহ্বাবুর রহমান

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

তারুণ্যের অগ্রযাত্রায় ব্যতিক্রম আহ্বাবুর রহমান

মানুষের জীবনের চিত্রপট যে কতভাবে বাঁক নিতে পারে তা বোঝা যায় তার গল্প শুনলে- নাম এস এম আহ্বাবুর রহমান (মুন্না)। সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন তরুণ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপকদের প্ল্যাটফর্ম ‘এইচআর স্পিকস বাংলাদেশ’-এর মাধ্যমে, নানা গুণের অধিকারী এই মানুষটি সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘এইচআর গুরু’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। একজন মানুষ হিসেবে হয়ে উঠছেন কর্পোরেট চাকরিতে আগ্রহী তরুণদের প্রেরণার বাতিঘর- তার সঙ্গে কথা বলে সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বেনজির আবরার ডিপ্রজন্ম- আপনার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চাই? আহ্বাব মুন্নাÑ জন্ম নিয়েছি সিলেটে, বাবা ছিলেন বাংলাদেশ ক্যামিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের চীফ একাউন্টস অফিসার। মা গৃহিণী। বাবার চাকরিসূত্রে পড়েছি তিনটি স্কুলে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার তখনকার প্রথম ধাপ মাধ্যমিক শেষ করেছিলাম পলাশ সার কারখানা উচ্চ বিদ্যালয়, নরসিংদীতে। এরপর গল্পটা পরিবর্তন হয়েছে দ্রুত, এইচএসসি পাস করি তেজগাঁও কলেজ থেকে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্পটা আরও ব্যতিক্রম, ইংরেজীতে স্নাতক শেষে ঢাবির আইবিএ করি এইচআরএমসি থেকে। ডিপ্রজন্ম- আপনার একটি উক্তি ‘পরিবর্তন হোক সবকিছুতেই’ যেটা কর্পোরেট জগতে বেশ জনপ্রিয়। এসব বিষয়ে যদি বলতেন? আহ্বাব মুন্না- আসলে আমরা যে প্ল্যাটফর্মে কাজ করছি সেটা একটু ভিন্ন। দেশে নানা ধরনের প্রফেশনালসদের গ্রুপ থাকে, আমাদের গ্রুপটি একটু অন্যরকম। তরুণ চাকুরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদাধিকারী পর্যন্ত আমাদের এইচআর স্পিকসের মাধ্যমে সুবিধা নিতে পারেন। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, বিশ্বজুড়ে পরিবর্তনের একটা সুবিশাল ট্রেন্ড চলছে। এখন যারা এই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তারা যদি পরিবর্তনটাকে সহজভাবে প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দিতে পারেন তবেই সম্ভব মৌলিক পরিবর্তন। ডিপ্রজন্ম- আপনার অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের বড় স্বীকৃতি। একজন তরুণ হিসেবে বিষয়টাকে কিভাবে দেখেন- আহ্বাব মুন্না- আসলে অর্জন সবসময়ই আনন্দের। কাজের স্বীকৃতি কাজের আগ্রহ বাড়ায় আর চাপও বাড়ায়। বাংলাদেশে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপকদের মধ্যে ক্যারিয়ারের দশবছরে সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ভূষিত হয়েছি ‘এইচআর গুরু’ হিসেবে, এছাড়া এদেশীয় জনপ্রিয় কনসালটেন্সি ফার্ম ‘এইচআর স্পিকস বাংলাদেশ’-এর লিড কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, এছাড়া বড় কিছু কাজ নিয়ে এ বছরজুড়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় একটা মাইলফলক তৈরি করতে কাজ শুরু করব। ডিপ্রজন্ম- আপনার সফল কর্মজীবন সম্পর্কে যদি জানাতেন? আহ্বাব মুন্না- আমি এখনি নিজেকে সফল দাবি করতে নারাজ। অনেক পথ পাড়ি দেয়া বাকি, বাংলাদেশে এইচআর বিষয়টি সকল ক্ষেত্রে যথাযথ প্রয়োগ করতে আমার অনেক স্বপ্ন বাকি। কর্মজীবনের প্রথমে উইংস সেন্টার, এক্সিকিউটিভ অপারেশন, পলমল গ্রুপের এইচআরে, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ, সুপারস্টার গ্রুপে, মদিনা গ্রুপে হেড অব এইচআর হিসেবে কর্মরত ছিলাম এরপর এ বছরের শুরুতে স্বনামধন্য বেসরকারী বিদ্যুত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডরিন পাওয়ার লিমিটেড’-এর হেড অফ এইচআর হিসেবে যোগ দেই। ব্যস্ততম কর্মজীবনে আমি বরাবরই প্রাধান্য দিয়েছি মানবসম্পদ উন্নয়নকে। ডিপ্রজন্ম- এদেশীয় মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাই- আহ্বাব মুন্না- ‘বাংলাদেশে এইচআর ফিল্ডে একটা পরিবর্তন বা আলোড়ন এসেছে ২০০০ পরবর্তী সময়ে। আগে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে এইচ আর ছিল না, বর্তমানে বহুজাতিক এবং এদেশীয় মোটামুটি সকল বড় কোম্পানি এইচআর বিভাগকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে থাকে। কর্মী অন্তঃপ্রাণ হতে হয় মানবসম্পদ ব্যবস্থাপককে। পাওয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে সময় দিচ্ছি কারণ এটা একটা বুমিং সেক্টর, একটা সময় অনেক ওপরে উঠবে আরও। ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে, তাদের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ থাকায় এক কথায় চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে পুরো ব্যাপারটাও। ডিপ্রজন্ম- এইচআর স্পিকস নিয়ে স্বপ্ন? আহ্বাব মুন্না- আসলে অন্য ফার্মগুলোর মতো শুধু ট্রেনিং করিয়ে শেষ এই থিমটাতে আমরা বিশ্বাস করি না, ফ্রেশার্সদের ক্ষেত্রে শুধু ট্রেনিং দিয়ে নয়, তাকে জব মার্কেটে প্রবেশ করাতে সর্বোচ্চ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে তার পাশে থাকার চেষ্টা করি আমরা এইচআর স্পিকস বাংলাদেশ পরিবার। ‘শুধু তাই নয়, প্রফেশনালসের ক্ষেত্রে যেভাবে ট্রেনিং দেয়া হয় তা নিজের কর্মক্ষেত্রে কিভাবে কাজে লাগান যাবে, করতে গিয়ে কি কি বাধা আসবে, বাধাগুলো অতিক্রমের পদ্ধতি নিয়েও এইচআর স্পিকস পাশে থাকবে। আমাদের নতুন বছরের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, দেশের বিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্কিল ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে কথা বলা, আইডিয়া জানা এবং শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা পুরো কমিউনিটিতে।’ এছাড়া এইচআর স্পিকসের ট্রেনিং, হেড হান্টিং, স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেবা তো রয়েছেই। ‘এদেশীয় মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আরও অনেক গুণগত পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে, আমরা সেসব বিষয় নিয়েও কাজ করতে চাই।’ ভবিষ্যতটা স্বপ্নের সমান বড় করার দৃপ্ত শপথে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। ডিপ্রজন্ম- ব্যক্তিজীবনের বাইরে যা করছেন? আহ্বাব মুন্না- পেশাগত সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নিয়মিত কলাম লিখি মানবসম্পদ উন্নয়নে এবং তরুণদের পেশাগত পরামর্শ দিয়ে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায়, ম্যাগাজিনে। এছাড়া বিএসএইচআরএমের এ্যাসোসিয়েট মেম্বার, এনএসইউ ইএমবিএ ফোরামের এক্সিকিউটিভ মেম্বার, আইবিএ এমডিপি এলামনাই এ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার হিসেবে যুক্ত রয়েছি দীর্ঘদিন ধরে। ডিপ্রজন্ম- সিলেট থেকে ঢাকা, জয়রথ চলছে। কেমন লাগে আজকের সময়, কতটা বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ? আহ্বাব মুন্না- আলহামদুলিল্লাহ্। আসলে দেখেন একসময় যেখানে এইচআর ছিল না প্রতিষ্ঠানে, আজ সেখানে একটি বড় তরুণ প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছি আমরাই। গুণগত মানের প্রতি সর্বোচ্চ খেয়াল রেখে নতুন বাংলাদেশ তখনই গঠন হবে যখন তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে এবং প্রতিটি কর্মজীবীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে, দক্ষতার বিকাশ যদি স্কিল ডেভেলপমেন্টে হয় তবে অনেক কিছু সম্ভব। ডিপ্রজন্ম- তরুণদের উদ্দেশে পরামর্শ- আহ্বাব মুন্না- অনেকেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করে সে অনুযায়ী, সেই বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়ালেখা শুরু করতে পারছে না, যে বিষয়ে চান্স পাচ্ছে সে বিষয়েই ভর্তি হয়ে যাচ্ছে এবং পাস করে বের হওয়ার পর চাকরির অনুসন্ধান করতে গিয়ে উপলব্ধি করে যে স্নাতক পর্যায়ে বিষয় নির্বাচন সঠিক ছিল না। অনেকে ছাত্রজীবনে শুধু লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, অন্য কোন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকেন না। মনে রাখতে হবে শুধু ভাল ছাত্র বা ভাল জিপিএ থাকলেই চাকরি পাওয়া যাবে এমন কোন কথা নেই, পাশাপাশি অন্যান্য গুণাবলী থাকা চাই। গবেষণায় দেখা গেছে, ছাত্রজীবনে যারা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন রকম সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন; বিতর্ক, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখা, খেলাধুলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব/ সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকেন এবং যারা টিভি চ্যানেল বা এফ এম রেডিওর খ-কালীন সংবাদ পাঠক, সংবাদপত্রের ক্যাম্পাস রিপোর্টার, বড় বড় ক্যাফে/ রেস্টুরেন্টের খ-কালীন বিক্রয় সহকারী হিসেবে কাজ করেন তাদের মধ্যে স্মার্টনেস, আত্মবিশ্বাস, লিডারশিপ, ইন্টারপার্সোনাল কমিউনিকেশন স্কিলস, টিমওয়ার্ক ইত্যাদি গুণাবলী গড়ে উঠে যা চাকরি লাভের জন্য অত্যন্ত জরুরী এবং তারা পেশাগত জীবনে অন্যদের চেয়ে অনেক ভাল করেন। বর্তমান যুগ হচ্ছে নেটওয়ার্কিংয়ের যুগ, যার স্যোশাল নেটওয়ার্ক সমৃদ্ধ তিনি পেশাগত জীবনে ভাল করছেন। তরুণরা কিছু বিষয়ে মাথা রাখলেই অনেক কিছু সম্ভব।
×