ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণ উদ্যোক্তা পাপড়ি ডটকম

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

তরুণ উদ্যোক্তা পাপড়ি ডটকম

আইটি ডটকম প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশের ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্মগুলোর মাঝে ঢ়ধঢ়ৎরর.পড়স এখন একটি অতি জনপ্রিয় নাম। এই অনলাইন ফুলের দোকানটির পেছনে আছে এক অনবদ্য নারী উদোক্তা কাজী ফৌজিয়া হোসেন। মানুষের জীবনের গল্প, বিশেষ করে একটি ভালবাসার গল্প, কিভাবে একটি বাণিজ্যিক সুযোগ তৈরি করে ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে তার এক অসামান্য উদাহরণ পাপড়ি ডট কম। পাপড়ি ডট কমের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ফৌজিয়া বলছিলেন- ‘ফুল সবসময়েই আমার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। পাপড়ি ডট কম- এর আইডিয়াটা আসে এখান থেকেই। আমি এমন একটা সময়ে বড় হয়েছি যখন কাউকে ফুল উপহার দেয়ার রীতি অনেকটা ঐতিহ্যের মতন ছিল, কালেভদ্রে কেউ কেউ করত। কাজেই, যখন দেখলাম আমার স্বামী এই প্রথাকে বাঁচিয়ে রেখে আমার জন্য ঘটা করে আমার পছন্দের ফুল কিনে আনতো আমি আনন্দে অভিভূত হতাম। ও কখনও আমাকে বিস্মিত করতে ব্যর্থ হয়নি।’ তিনি বলেন, আমিও একবার বিশেষ এক উপলক্ষে তাড়াহুড়ো করে অফিসের কাজ সেরে ওর জন্য প্রথমবারের মতন ফুল কিনতে গেলাম। তখনই আমার মনে হলো ফুল কিনতে এই যে দৌড়াদৌড়ি আর কোথায় উপহারের জন্য সাজানো ফুল কিনতে পারব সবমিলিয়ে বেশ বড় একটা দুর্ভাবনা! ফৌজিয়ার মতন আরো অনেকে এই সমস্যার সম্মুখীন হন যাতে করে মনের মতন ফুল কিনতে প্রচুর সময়ের অপচয় হয়। এই ডিজিটাল যুগে এত দুর্ভাবনা নিয়ে কি চলে, সেই ধারণা থেকে শুরু হয় পাপড়ি ডট কমের পথচলা, যাতে করে ল্যাপটপ বা সেল ফোনে একটি ক্লিকেই ফুলের তোড়া হাতে কাছে পৌঁছে যায়। নিজেদের তোলা ছবি দিয়ে তারা তাদের ওয়েবসাইটে ফুলের তোড়ার এ্যালবাম সাজিয়েছেন যাতে করে ফুলপ্রেমীরা ঠিক তা-ই দেখেন যা আসলে তারা হাতে পাবেন। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী থেকে শুরু করে ‘স্যরি’ বলা পর্যন্ত সব আবহের জন্যই রয়েছে তাদের ফুলের তোড়া। ফুলের তোড়ার অঙ্গসজ্জা, রঙের মিশেল, ফুলদানি, ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ এবং সর্বোপরি তরতাজা ফুলের জন্য এর মধ্যেই ফুলপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে পাপড়ি ডট কম। যে কোন তোড়া বানানোর সময় ফুলের গুণ বজায় রাখতে আলাদা করে যতœ নেয়া হয়। বাসা বা অফিসে পৌঁছে দেয়ার যে মাধ্যম তাদের রয়েছে তা-ও এক কথায় চমৎকার। ফৌজিয়া বলেন, যে কোন আবহাওয়ায় হাতে পাবার পর ফুলের গুণাগুণ যেন ঠিক থাকে সে জন্যে আমাদের আগে থেকেই নিশ্চিত হতে হয়। দিনে সিংহভাগ সময় তাকে দিতে হয় একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে তার চাকরি এবং চ্যালেঞ্জিং এই ব্যবসার পেছনে। তাজা ফুল ও বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা এই দুয়ে মিলে পাপড়ি ডট কম-কে ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্মে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত করতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ‘প্রতিটি অর্ডারের পেছনে একটি করে গল্প আছে’ – পাপড়ি ডট কমের পেছনে দিনরাত অক্লান্ত খেটে যাওয়া এই দীপ্ত নারী বলেন। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পাপড়ি ডট কমের গ্রাহকসেবা ছড়িয়ে পরেছে দেশের বাইরে, এমনকি বিদেশীদের মাঝেও। ‘কিছুদিন আগে আমরা এক তুর্কি তরুণীকে সাহায্য করেছি তার বাংলাদেশে কর্মরত বোনকে সারপ্রাইজ দিতে। এদেশে তার কাজের প্রথম দিনেই তার হাতে পৌঁছে গিয়েছিল পাপড়ি ডট কমের বিশেষ ফুলের তোড়া। এই মুহূর্তগুলোর অংশ হতে পারা, আর ভালবাসা ছড়িয়ে দিতে পারাটা আমাদের কাজের সবচেয়ে আনন্দের দিক।’ প্রবাসী বাংলাদেশীদের ছাড়াও আমেরিকান, ভারতীয় ও সিঙ্গাপুরিয়ানরা আছেন পাপড়ি ডট কমের গ্রাহকের তালিকায়। এতে করে তারা শুধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিই পাচ্ছেন না, দেশে আনতে পারছেন বৈদেশিক মুদ্রা, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারছেন। তবে স্থানীয় বাংলাদেশীরা পাপড়ি ডট কমের প্রধান গ্রাহক। ফুল কিভাবে আমাদের জীবনের গল্পের অনবদ্য অংশ হতে পারে তা নিয়ে ফৌজিয়া বলেন, ‘একজন তার স্ত্রীকে দশ বছর পর আমাদের মাধ্যমে ফুল উপহার দিয়েছেন, আর এরপর থেকে তিনি আমাদের নিয়মিত গ্রাহক হয়ে পড়েছেন।’ তারা গ্রাহক পর্যায়ে বেশ সাড়া তুলেছেন। তাদের ফেসবুক পাতায় একজন গ্রাহক তার খুশি প্রকাশ করে মন্তব্য করেন – পাপড়ি-কে অসংখ্য ধন্যবাদ। ‘দ্য ক্যাপ্টেন’ নামে একটি ফুলের তোড়া আমি অর্ডার করেছিলাম, আমার মন ভরে গিয়েছে। তোড়াতে তাজা ফুলের পাশাপাশি চমৎকার সুগন্ধ ছিল, আর সাথে ছিল আকর্ষণীয় একটি গিফট কার্ড সাধারণ গ্রাহকদের পাশাপাশি কর্পোরেট মহলেও পাপড়ির সুনাম আছেন। অফিসে ফুল সাজানো থেকে শুরু করে কর্মকর্তা বা ক্লায়েন্টদের সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য পাপড়ির তুলনা নেই। পাপড়ি ডট কমের আছে নির্ভরযোগ্য অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম যাতে ফুলপ্রেমীরা ক্রেডিট কার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ) ব্যবহার করে মূল্য পরিশোধ করতে পারেন। দেশের খ্যাতনামা ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সাথে চুক্তি করতে তাদের সুনাম সাহায্য করেছে। গ্রাহক কেন্দ্রিক সেবা নিশ্চিত করায় অনেক অল্প সময়ে তারা ফুলপ্রেমীদের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার তিন মাসের মাথায় গ্রাহক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে শুরু করেন। এখানে যখন আমি প্রথম কাজ করা শুরু করি, তখন আমি কাজটা খুব ভালভাবে বুঝতাম না, পাপড়ি ডট কমে কর্মরত সাকুরা হেনা বলেন। মাধ্যমিক পাস করা হেনা যোগ করেন, কিন্তু ফৌজিয়া আপু আমাকে এটা বুঝতে সাহায্য করেন, আমাকে অনলাইনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন, আমাকে উৎসাহ দেন আমার সবটুকু ঢেলে দিয়ে চেষ্টা করতে। এক সময় যখন ফলাফল দেখলাম আর বুঝতে পারলাম, গ্রোতের বিপরীতে চ্যালেঞ্জ ওঠানোর শক্তি পেলাম। নবীন শিক্ষিতদের পাশাপাশি পাপড়ি ডট কম অশিক্ষিত কিন্তু দক্ষ নারীদের জন্য কাজের সুযোগ করে দেয়। এই নারীদের ভিন্ন রকমের ফুলের তোড়ার নক্সা করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, আর পাশাপাশি দেয়া হয় আস্থা ও ভরসা। এভাবেই ফৌজিয়া এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার দলকে, যেটা অনেক তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকরণীয়। ডিজিটাল বাণিজ্যে তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে নির্ভরযোগ্য ব্যবসা দাঁড় করানো কর্মসংস্থান তৈরি ও আর্থিক উন্নতিসহ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
×