ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সময়ে ইসলাম প্রচার

প্রকাশিত: ০৩:২৯, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সময়ে ইসলাম প্রচার

(গত শুক্রবারের পর) একজন জিজ্ঞেস করলেন : আপনার কথা মতো ঐ কাজগুলো করলে আমাদের কি লাভ? প্রিয়নবী (স) বললেন : জান্নাত। অর্থাৎ তিনি বুঝালেন যে, তোমরা ঐগুলো যথাযথভাবে পালন করলে জান্নাত প্রাপ্ত হবে। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের কথা শুনে তাঁরা সবাই ইসলাম গ্রহণ করলেন। ইশা’আতে ইসলামের জন্য, ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য কি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে সে সম্পর্কে আল্লাহ জাল্লা শানুহু নির্দেশ দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : তোমার রবের পথে আহ্বান করো হিকমতের সঙ্গে এবং সুন্দর সুন্দর উপদেশ দ্বারা আর ওদের সঙ্গে আলোচনা করো সদ্ভাবে আলোচনার মাধ্যমে। (সূরা নাহল : আয়াত ১২৫) এখানে লক্ষ করা যায়, আল্লাহর পথের দিকে মানুষকে আহ্বান করার তিনটি পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর তা হচ্ছে : হিকমত, সদুপদেশ ও সদ্ভাবে আলোচনা। ইসলামের উপস্থাপন পদ্ধতির এই তিনটি মাধ্যম অনুসরণ করার রীতি আমরা প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু, ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম’ বিভিন্ন সাম্রাজ্যের সম্রাটদের কাছে, বিধর্মী শাসনকর্তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত সংবলিত যে সমস্ত পত্র দিয়েছিলেন, সেসব পত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাতে হিকমত সদুপদেশ ও সদ্ভাব প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে। হিদায়েত হচ্ছে সত্য পথ। হিদায়েত প্রাপ্তির মাধ্যমে আল্লাহু তা’আলার রিযামন্দি ও নৈকট্য হাসিল করা সম্ভব হয়, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সাধিত হয়। আমরা সূরা ফাতিহা তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর মহান দরবারে এই আরজি পেশ করিÑ আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করো, তাদের পথ, যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করছো। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি গযব নিপতিত হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, আল্লাহর নিয়ামত প্রাপ্তগণের সর্বোচ্চ মাকাম হচ্ছে আম্বিয়ায়ে কেরামের। তারপর নবীগণের। উন্মতগণের মধ্যে রয়েছেন সিদ্দিকগণ, শহীদগণ ও সালেহ্্গণ। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে : তারাই ঐ সকল পুণ্যাত্মা, যাদেরকে মহান আল্লাহ নিয়ামত ম-িত করেছেন, তাঁরা হচ্ছেন নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ ও সালেহীন (সূরা নিসা : আয়াত ৬৯)। সিদ্দিকগণের ও সালেহীনের অন্তর্গত হচ্ছেন সাহাবায়ে কেরাম, আওলিয়ায়ে কেরাম ও মুত্তাকি দীনদারগণ। আর যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতে করতে জান কুরবান করে দেন, তারাই শহীদ। ইশা’আতে ইসলামের কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী তিনটি পদ্ধতির নানা মাধ্যমে প্রয়োগ হয়ে আসছে যেমন: কলমের মাধ্যমে, ওয়াজের মাধ্যমে, বাহাসের মাধ্যমে, খিদ্্মতের মাধ্যমে, তালীমের মাধ্যমে। ইশা’আতে ইসলামের পাশাপাশি খিদ্্মতে খাল্্ক সমান গুরুত্ব দিয়ে চালু হয়েছে। কোরান মজিদে ইরশাদ হয়েছে: হে মুমিনিগণ তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করো। (সূরা তাহরীম :আয়াত ৬)। ইশা’আতে ইসলাম নিজের গৃহ থেকেই সূচিত করতে হবে, এটি এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এখানে লক্ষণীয় যে, প্রিয়নবী (স)-এর নবুওয়াত লাভের পরপরই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন হযরত খাদীজাতুল কুবরা রাদিআল্লাহু তাআল আনহা, হযরত আলী (রা) এবং হযরত যায়দ বিন হারিসা (রা)। এরা ছিলেন তাঁর পরিবার-পরিজনের অন্তর্গত। প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের যে নির্দেশ আল্লাহ তা’আলা প্রদান করেছিলেন তাতে ছিল নিকটতম আত্মীয়স্বজনের কথা। সূরা তাহরীমের ৬ নম্বর আয়াতখানি সম্পর্কে হযরত উমর রাদিআল্লাহ্্ তাআলা আনহু প্রিয়নবী (স) এর নিকট আরজ করেছিলেন: ইয়া রসূলুল্লাহ নিজেদের দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করার বিষয়টি বোধগম্য হয়, কিন্তু পরিবার-পরিজনকে কিভাবে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাব? এ কথা শুনে প্রিয়নবী (স) বলেছিলেন: আল্লাহ তা’আলা যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন এবং যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন, সেসব কাজ করতে আদেশ করবে। প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ (স) ইশা’আতে ইসলামের যে পদ্ধতি স্থাপন করেন তা আল্লাহ্্ কর্তৃক প্রত্যাদিষ্ট। তিনি শিক্ষিত সাহাবায়ে কেরামকে বিভিন্ন জনপদে প্রেরণ করেন। ইসলাম প্রচার করতে যেয়ে তাঁকে ভীষণ বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। দেশত্যাগ করতে হয়েছে, দান্দান শহীদ হয়েছে, কতো সাহাবী শহীদ হয়েছেন, অনেকগুলো যুদ্ধের মুকাবেলা করতে হয়েছে, অতঃপর মক্কা বিজয় হয়েছে, ঘোষিত হয়েছে : সত্য এসেছে মিথ্যা দূর হয়েছে, মিথ্যা দূর হবারই। ৬২৮ খ্রিস্টাব্দের হুদায়বিয়ার সন্ধি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে শান্তির হাওয়া প্রবাহিত হয় আরব ভূখ-ে। সেই সময় দলে দলে লোক তাঁর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) ও হযরত আমর ইবনুল আস (রা) এই সময়েই ইসলাম গ্রহণ করেন। এই সময় তাঁর নির্দেশে সাহাবায়ে কেরামগণের মধ্য থেকে বহু সাহাবী বিভিন্ন দেশে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যান। জানা যায়, কোন কোন সাহাবী চীন, সুমাত্রা অঞ্চলে আরব বণিকদের নৌজাহাজে যাবার পথে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে সফর বিরতি করে এখানে কিছুকাল ইসলাম প্রচার করেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণের শেষ পর্যায়ে সকলের উদ্দেশে বলেন : যারা এখানে উপস্থিত আছো তারা শোনো এবং যারা উপস্থিত নেই তাদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দিও। সেই নির্দেশের পথ ধরে ইসলাম প্রচারের গতিধারা অব্যাহত রয়েছে। আজ সমগ্র বিশ্বের জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মুসলিম। তারা সবাই উচ্চারণ করেন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূল্লাহ। সমাপ্ত লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.)
×